somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বক্ষবন্ধনীর জলিল, জলিলের বক্ষবন্ধনী (মোস্ট ওয়েলকাম ২ – রিভিউ লেখার অপচেষ্টা)

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-আমি দেশে থেইকা ফিরতেসি ৪ তারিখ। এর মইদ্ধে যেমনে পারস টিকেট ম্যানেজ কইরা রাখবি।
-এতো পাগল হইসিস ক্যান? মাত্র তো আসলো হলে; আস্তে ধীরেও তো দেখা যাইব।
-আরে বেটা কইস না; আমি জলিল ভার্জিন।
-(খানিক নিস্তব্ধতা) মানে?
-মানে এহনও হলে গিয়া জলিলের কোন মুভি দেখি নাই। পুরা ৪০ বছর বয়সে ভার্জিন থাকার মতন অবস্থা।

অতঃপর যা হবার তাই। এরে ওরে ফোন করে টরে রশীদ সাহেব আরও দুইজন জোগাড় করিয়া হাজির হইয়া গেলেন বলাকায়। গুনিয়া গুনিয়া চারখানা একশত টাকার নোট খরচা করিয়া সিটে গিয়া বসিয়াও পড়িলাম সকলে।

মুভি শুরু হইল। জনৈক বাঙালি বিজ্ঞানী হাসান মইন খান কোন এক মেডিকেলে বসিয়া গবেষণা করিয়া ক্যান্সারের ভ্যাকসিন (মতান্তরে গিলিয়া খাইবার টিকা, তথ্যসুত্র – বিজ্ঞানীর সংবাদ সম্মেলন) আবিষ্কার করিয়া ফেলিয়াছেন। উনাকে পাহারা দিবার জন্য একদল পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু গুন্ডারা যখন আক্রমণ করিল; কেউ গুন্ডাদের একখানা পশমও স্পর্শ করিতে পারিলেন না। আবির্ভাব ঘটিল হিরোদের হিরো, চাক নরিসের পিতাজী, রজনীকান্তের গুরু, অসম্ভবকে সম্ভব করা হিরো অনন্ত জলিলের। উনি আসিয়াই ল্যান্ড করিলেন একখানা গাড়ির ছাদে। পাশ হইতে আরও দুইখানা গাড়ি নিউটন সাহেবের মাধ্যাকর্ষণ সুত্রকে পুটু মারিয়া উড়িয়া একটা আরেক্টার সাথে ধাক্কা খাইল। একখানা সানগ্লাস আর দুইখানা বোতাম খোলা জলিল(আরিয়ান) সবাইকে মাটিতে শোয়াইয়া দিলেন বিনা আঁচড়ে।

নিজের আবিষ্কার জনসেবায় কাজে লাগাইবার সঙ্কল্প লইয়া পুরো ফর্মুলা একখানা হার্ডড্রাইভে (জি হ্যা; পেনড্রাইভের দিন কি আর আছে!! দিন বদলাইসে না?) ভরিয়া বিজ্ঞানী সাহেব নিজ গৃহে বিশাল নিরাপত্তার মদ্ধে পিসির কমান্ড প্রম্পটে পাসওয়ার্ড দিয়া লুকাইয়া রাখিলেন। এরই মাঝে দৃশ্যপটে আগমন ঘটিল নায়িকার। বান্ধবীদের সাথে নিজেকে আরিয়ানের মেয়েবন্ধু হিসেবে জাহির করিয়া ভাব নেওয়ার সময় আরিয়ান সাহেব শুনিয়া ফেলিলেন। ছদ্মবেশ লইয়া আবার নায়িকার সাথে এই নিয়া কিঞ্চিৎ রগড়ও করিয়া আসিলেন এর মধ্যে।

পর পর দুইবার বিজ্ঞানীকে নিরাপত্তা প্রদানের পুরস্কার স্বরূপ বিজ্ঞানীর নিরাপত্তার সমস্ত দায়িত্ব তুলিয়া দেওয়া হইল আরিয়ানের হাতে। কিন্তু বিধি বাম। বিজ্ঞানীর নাতনী, নায়িকা বর্ষাকে কিডন্যাপে ব্যর্থ হইয়া তার প্রতিবন্ধী ভাইকে তুলিয়া নিয়া গেল সন্ত্রাসীরা। অতঃপর অতি মূল্যবান বুলেট খরচা না করিয়া গাড়িতে ভরিয়া খাদ হইতে ঠেলিয়া ফালাইয়া দেওয়ার মতন কষ্টসাধ্য সিস্টেমের ভিতর দিয়া যাওয়া লাগলো কিডন্যাপারদের; শুধু মাত্র অল্প কিছু পয়সার অভাবে ! যাই হোক, যা বলতেসিলাম। নায়ক দৌড়াইয়া ঘটনাস্থলে পৌছাইলেন, জলন্ত গাড়ি হইতে হবু শ্যালককে উদ্ধার করিলেন, এবং পিছন ফিরিয়া গাড়িকে ইশারা করিলেন। গাড়ি বিস্ফোরিত হইল।

এর আগে পরে কোন এক সময় নায়িকার মনের মাঝে দুই তিনখানা গানও হইয়া গেল। এত কনফিউশনের মাঝে সবগুলোর হিসাব রাখা সম্ভব হইয়া উঠে নাই। তবে গানের ফটোশপ এর কারদানি দেখিয়া ঠিক করিলাম, বাসায় পৌছাইয়াই আমার প্রথম কাজ হইবে নিজ কম্পিউটার হইতে ফটোশপ সফটওয়ারখানি আনইন্সটল করা। পাশ থেকে বন্ধু অভয় বাণী দিল; ইহা ফটোশপের কাজ না রে পাগলা, মাইক্রসফট পেইন্টের কাজ। আমিও সংকল্প ত্যাগ করিয়া সায় জানাইয়া ২০ কোটি টাকা খরচ হইল কোন দিক দিয়া – ভাবিতে ভাবিতে আবার মুভিতে মনোনিবেশ করিলাম।

এর মাঝে হাজার দশেক সাঙ্গপাঙ্গ লইয়া গুন্ডারা আবার আক্রমণ করিল। এইবার আর শেষ রক্ষা হইল না। বিজ্ঞানীকে পিছু হইতে ধাওয়া দিতেই উনি সুড়সুড় করিয়া হেলিকপ্টারে উঠিয়া বসিলেন। গুন্ডারা তাদের কর্ম হাসিল করিয়া থাই ক্লাবে বিয়ার খাইতে এবং গ্যাঙ্গাম নাচ নাচিতে চলিয়া গেল। এইদিকে চাকুরী হইতে ইস্তফা সহ রিমান্ড – নানা প্রক্রিয়া শেষে নায়ক পরিণত হইলেন ফ্রিল্যান্সারে। পুলিশ রিমান্ডে নিয়া চালাইল অমানুষিক নির্যাতন। তবে আশা এবং আশঙ্কার কথা; সেই নির্যাতন হইতে পালাইয়া আরিয়ান আরও উজ্জ্বল, আরও উন্নতবক্ষা হইয়া চকচকে আয়নার ন্যায় চেহারা লইয়া বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন। পথিমদ্ধে নায়িকার সাথে দেখা। উহাকে লইয়া দিনভর এবং রাতভর কোপাকুপি শেষে একের পর এক মুদি দোকানে আলু পটল কেনার মতন এক একটা ভিলেনকে উপরে পাঠায় দিতে থাকিলেন, উদ্ধার করিয়া আনিলেন বিজ্ঞানীকে, দেশও হাফ ছাড়িয়া বাচিল।



বুলেট পয়েন্ট ১ – দরকারবোধে গানের দৃশ্য না থাকলে নাই। বান্দরবান, কক্সবাজার সহ আমাদের দেশে সুন্দর জায়গার অভাব নাই। এইরকম চুলচামড়া মার্কা এডিটিং দিয়া গানের ব্যাকগ্রাউন্ড বানানোর আইডিয়া ক্যান যে মাথায় আসছে আল্লাহ জানে !
বুলেট পয়েন্ট ২ – দুনিয়ার তাবত একশন সীন স্লো মোশনে দেখাইলেই হলিউড হইয়া যায় না। যেই ফাইট সিন দেখলে ঘুমে ধইরা যায়; তা না রাখাই ভাল।
বুলেট পয়েন্ট ৩ – সাধারণত সাকিব খানের মুভিতেও নায়ক প্রায় সময়েই মাইর খায়; কথায় কথায় মাইর খায়। শেষমেশ উইঠা সব হোতায়া ফালায়। এই মুভিতে একমাত্র রিমান্ড সিন ছাড়া আর কোন সিনে কেউ নায়কের গায়ে একটা আঁচড়ও দিতে পারে নাই; একদম শেষ পর্যন্ত। ব্যাপারটা খুব ইরিটেটিং হয়ে গেসিল এক সময়।
বুলেট পয়েন্ট ৪ – ক্যান্সার যে ছোয়াচে রোগ; এই জিনিস আমি আজকে জানলাম। তাও আবার কুকুরের মাদ্ধমে ক্যান্সার মানুষ এর শরীরে ছড়ায়। এবং ক্যান্সারের জীবাণুর কালার নীল, উহাকে টেস্টটিউবে ভরিয়া রাখা যায় ! পুরো বায়োলজিরই পুটু মেরে দিলেন কাহিনীকার !
বুলেট পয়েন্ট ৫ – সবরি কলার সাইজের লাখ তিনেক গুলি প্রত্যেকটাই জলিল ভাইরে সালাম দিয়া পাশ কাটায় গেল, আর উনার আকাশে চ্যাগায়া উড়তে থাকা অবস্থায় (আমার জিন্দেগিতে কাউরে পরথম আকাশে চ্যাগাইতে দেখলাম ) করা গুলিও মিস হয় না, what kind of sorcery is this !
বুলেট পয়েন্ট ৬ – মোবাইল দিয়া থ্রি জি চালাইয়া কেম্নে সিসিটিভি ইশারা কইরা কন্ট্রোল করে কিছুই বুঝা গেল না !

ডিস্ক্লেইমারঃ ইহা শুধুমাত্রই সিনেমাটা দেখিয়া আমার নিম্নবুদ্ধির খানিকটা রসিকতা ধরণের রিভিউ লেখার চেষ্টা মাত্র। সিনেমাটাকে খাটো করিয়া দেখানোর বা এই ধরণের কোন কিছুরই অভিপ্রায় আমার ছিল না; নাইও। ধন্যবাদ।

৩৪টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×