রোকশানা মেয়েটি দেখতে ভালই। গায়ের রং যত ফর্সা, চেহারা ততটা সু্ন্দর নয়।সে হিসাবে তাকে সুন্দরী বলাটা বোধ হয় একটু বেশিই বলা হবে। তার বয়স ১৫/১৬ এর মত।
একদিন স্কুল থেকে ফেরে দুপুরে আচার খেতে খেতে গোসল করতে গেল পুকুরে। পুকুরঘাট নির্জণ। জোহরের আযানের ওয়াক্ত হয়ে এসেছে।
হঠাৎ গরম বাতাশ এসে গায়ে লাগলো রোকশানার। কি যে হয়ে গেল তার সে নিজেই বুঝতে পারছেনা।অনেকক্ষণ ধরে বড় আম গাছের দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে আছে। কখনো হাসছে, কখনো কি সব আবোল তাবোল বলছে। পাশের ঘরের ছমিরন ভাবী কলসিতে পানি নিতে এসে পুকুরপাড়ে রোকসানাকে দেখে বলছে- কি লো ছেমড়ি, কার লগে কথা কস। কেউরেতো দেহিনা ।
ছমিরনের কথা শেষ হতে পারেনি অমনি রোকশানা তার দিকে ভংঙ্কর দৃষ্টিতে তাকালো। মনে হচ্ছে চোখ থেকে আগুন বের হচ্ছে। সে আগুনে ছমিরন পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। ভয়ে ছমিরন 'ও মাগো' বলে চিৎকার করে দৌড়ে বাড়ি চলে গলে। বাড়ির লোকজন কি হয়েছে? কি হয়েছে? বলে বাড়ি মাথায় তুলল।
ছমিরনের কথা মত পুকুরপাড়ে গিয়ে সত্যি রোকশানাকে অস্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া গেল। পুরো গ্রামে বাতাসের গতিতে ছাড়িয়ে পড়ল-
রোকশানাকে জ্বীনে ধরেছে।দলে দেলে লোক আসতে লাগলো তাকে দেখার জন্য। লোকজন সামলাতে বাড়ির মানুষ হিমসিম খাচ্ছে। সন্ধ্যার পর মাদ্রাসার বড় হুজুরকে আনা হল জ্বীন তাড়াবার জন্য।
কিভাবে জ্বীন বিতারন করে তা দেখার জন্য রোকশানাদের বাড়ি লোকে লোকারন্য।হুজুর রোকশানার কনিষ্ঠ আঙ্গুল জোড়ে চেপে ধরে দোয়া-দুরুস পড়লেন। ওর নাকে গরম সরিষার তেল সোঙ্গালেন, মরিচ পুড়িয়ে ওর সামনে ধরলেন। আরও কত কিছু করার পর হুজুর ও জ্বীন এর মধ্যে কথোপকথন শুরু হল:
কেন ধরেছিস মেয়েটাকে
খোলা চুলে দুপুরে আমার দিকে চেয়ে আচার খাইছিল, হের লাইগা ধরছি।
নাম কি
গৌরাঙ্গ
তুই হিন্দু , মুসলিম মাইয়ারে ধরলি ক্যান?
ওরে আমার ভাল লাগছে।
তুই চইলা যা
না যামুনা।
যা কইতাছি
না, যামুনা।
কি হইলে যাবি ? মিষ্টি, খাসী, জুতা, হাড্ডি.................
মাটিতে লাঠি দিয়ে বাড়ি দেওয়ার সাথে সাথে ওমাগো , ওমাগো বলে জ্বীন চিৎকার করে উঠল।
বল হাড্ডি নিয়া যাবি কিনা?
যামু, যামু।
এক্ষন যা। এই এলাকা ছাড়া হবি। আর আবিনা। আইলে তোরে বোতলে ভইরা মাটিতে গাইড়া রাখুম।
যাইতাছি, যাইতাছি।
রোকশানা শুকনা গরুর হাড়ের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এই হাড় অমূল্য রতন। চোখ বড় বড় করে মোখে হাড়
নিয়ে এক দৌড় দিল রোকশানা। ভয়ে লোকজন সরে গেল। বাড়ির ঘাটায় বড়ই গাছের নীচে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল সে। তাকে গোসল
করিয়ে নতুন জামা পড়িয়ে ঘরে আনা হল। তার শরীর দুর্বল তাই সে তেমন খেতে পাড়লনা। এর পর আস্তে আস্তে সে স্বাভাবিক হয়ে উঠে।
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪০