নিলয় ও নিরা অনেকদিন পর বাসা থেকে বের হলো সাথে তাদের ছোট্ট মেয়ে নাজিয়া। সময়টা সন্ধ্যার কিছুটা পরে। স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি হেটে যাচ্ছে আর কথা বলছে মুক্ত বিহঙ্গের মত। সুযোগ পেয়ে দুস্টু নাজিয়া হাটি হাটি পা পা করে সামনে অনেকটা দূর চলে গেল হঠাৎ কোথা থেকে তার পাশে দেখা গেল হাসান আংকেলকে। হাসান সাহেবের হাতের আংগুল ধরে নাজিয়া চলেছে আপন মনে তার রাজ্যের প্রশ্ন তুলে। আসলেই অনেকদিন পর যেন বসন্তের হাওয়া বইছে দুই কপোত-কপতীর মনে।
কিন্তু হঠাৎ বহুদূরের টঙ্গী ব্রিজে চোখ যেতেই আতকে উঠল নিলয় এবং সে থমকে দাড়ালো। নিরা ওকে এভাবে থেমে যেতে দেখে সেও তাকালো সেদিকে। তাদেরকে বিষ্ময়ে হতবাক করে দিয়ে একটি প্রাইভেটকার যেন পৃথিবীর নিয়ম ভঙ্গ করে আকাশের দিকে উড়ে যাচ্ছে। আসলে বিষয়টা কি বাস্তব না অবাস্তব তা বুঝে উঠার আগেই তারা শুনতে পেল আশে -পাশের মানুষের ভয়ার্ত আর্তচিৎকার। কারণ গাড়িটা যে ধেয়ে আসছে তাদের দিকে এবং যে কোন সময় আছড়ে পড়তে পারে।
নিরা ও নিলয় দ্রুত একটা দোকানে আশ্রয় নিল। নিরা চিৎকার করে বলে উঠলো আমায়ের মেয়ে! অগত্যা দু’জন ছুটে গেল হাসান সাহেবের বাসায় । নাজিয়া পুতুল নিয়ে খেলায় মগ্ন। ইশারায় নিলয় দম্পত্তি বুঝিয়ে দিল আমরা যাচ্ছি আবার ফিরে আসবো।
ঘটনা যেখানে ঘটেছে সেখানে গিয়ে দেখলো নিলয়ের বোন ও বোনের যা অনেক উৎসুক মানুষের ভিরের মধ্যে কি ঘটে গেল তা জানার চেষ্টা করছে। নিলয়কে তার বোন বলল-এখানে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবেনা। চল চলে যাই। কিন্তু কেন ঘটল, কিভাবে ঘটলো এটা জানার প্রচন্ড ইচ্ছে হচ্ছে। ব্রিজ পার হওয়ার আগেই একজন নিলয়ের কথাটা শুনে বলে উঠলো- আমি বিষয়টা ভিতিও করতে পেরেছি। ব্যস আর যায় কোথায় দশ জোড়া চোখ মোবাইলে অপলক চেয়ে রইল সেই রহস্যময় ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং এর দিকে।
একটা প্রাইভেটকার দ্রুত গতিতে টঙ্গী ব্রিজ পার হচ্ছে। ব্রিজ এর শেষ মাথায় গিয়ে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে গড়াতে গড়াতে নদীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। উল্পা-পাল্টা ডিগবাজি খাওয়া গাড়ি থেকে আচমকা একটা মোটরসাইকেল বের হলো। কিছুক্ষণ পর ঠিক একইরকম আরেকটা মোটরসাইকেল গাড়ির পেট থেকে বের হয়ে আগেরটার উপর পরে রইল। দেখে মনে হলো মৃত্যুভয়ে দুভােই জড়াজড়ি করে পড়ে আছে। তারপর গাড়িটি নদীর পানিতে গড়িয়ে না পড়ে আস্তে আস্তে উল্টো উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং বার বার বাধা পেয়ে প্রচন্ড রেগে গিয়ে শুণ্যে ভেসে উপরের দিকে উঠতে থাকে ও বারবার এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে আছড়ে পড়ার অভিনয় করে এবং মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে অনেকক্ষণ ধরে বৃত্তের মত চক্রাকারে ঘুরতে থাকে নির্দিষ্ট একটা যায়গায় তার পর শুধু অন্ধকার আর কিছুই দেখা যায় না।
বাসায় ফিরতে ফিরতে নিলয় বলে- মোটরসাইকেল দ’টো আসলে মটরসাইকেল নয় অন্য কিছু। এরাই গাড়িটাকে শুণ্যে ঘুরাচ্ছে। তার মুখে এ কথা শুনে বাকি তিন জন যেন চমকে উঠলো। বোন বলল- এ কথা আর কাউকে বলবি না। সবাই যার যার বাসায় ফিরে গেল।
ভোরের আলো মাত্র ফুটে উঠেছে। নিলয় চোখ খুলে দেখে সকাল হচ্ছে। এটা কি তাহলে স্বপ্ন ! বাংলাদেশের কোথাও এমন ঘটনা ঘটেছে কি ? জানার জন্য সে সকাল সকাল ব্লগে পোস্ট দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো।
ছবি-নিজের তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০২০ সকাল ৭:৫৭