সময়টা ১৯৯৫ সাল। খোলাহাটি ক্যান্টনমেন্ট এর কোয়ার্টারে থাকি আমাদের বাসায দ্বিতীয় তলায় আর তৃতীয় তলায় থাকে আমার সমবয়সী আমার ক্লাসমেট সুমন।
একদিন বিকেলে ওর সাথে বাজারে গিয়েছি ও বাজার করার পর বললো- কি খাবি বল?
আমি বললাম কিছু খাব না।
ও বলল-না খেতেই হবে। হয় ঝাল নয় মিষ্টি।
আমি বললাম দুজনে একই রকম খাই।
ও বলল না তুই ঝাল খেলে আমি মিষ্টি খাব আর তুই মিষ্টি খেলে আমি ঝাল খাব ।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে ও আবার বলল -তুই চোখ বন্ধ করে বল ,তোর মন যেটা বলে সেটাই বল।
আমি চোখ বন্ধ করলাম ।মন বললো- মিষ্টি। কিন্তু আমি সুমনকে বললাম ঝাল।
ওর মুখটা একটু শুকনো হয়ে গেল। আমি পেঁয়াজু খেলাম আর ও জিলাপি খেলো ।
বাসায় যেতে যেতে সুমন বলল তুই কিন্তু মিথ্যা বলেছিস। আমি অবাক হয়ে গেলাম ও বুঝবো কি করে?
ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল এর সামনে বিশাল মাঠ ।মাঠের পরে তারকাটার বেড়া, সেই বেড়ার ওপারে ধানের ক্ষেত ।ধানক্ষেত পেরুলেই রেললাইন।
একদিন সুমনের সাথে সেই রেল লাইন ধরে হাঁটছি। হাঁটতে হাঁটতে একটা জায়গায় গিয়ে ও বসে পড়ল সাথে আমিও। চারদিকে কেউ নেই সুনসান নীরবতা।
হঠাৎ সেই নীরবতা ভেঙে সুমন বললো চল রেললাইনের মাঝখানে শুয়ে থাকি। আমি বললাম যদি ট্রেন চলে আসে।
ও বলল ট্রেন চলে আসলে অনেক দূর থেকেই শব্দ শোনা যাবে তখন আমরা সরে যাব। এই বলে সে রেললাইনের মাঝখানে শুয়ে পড়লো এবং চোখ বন্ধ করে রাখল। আমাকে বসে থাকতে দেখে বললো, শুয়ে পর মাথার উপর আকাশটা ্ কে দেখ কি অদ্ভুত অনুভূতি হয়।
আমিও শুয়ে পড়লাম তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে সেই অদ্ভুত অনুভুতির নেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু আমার মনের মধ্যে ভয় কখন ট্রেন চলে আসে ।
এর কিছুক্ষণ পর সুমন বলে উঠলো , চল ঘুমিয়ে যাই। আমি আতঙ্কিত হয়ে বললাম- ঘুমিয়ে গেলে নির্ঘাত ট্রেনের নিচে কাটা পরব।
ও ভাবলেশহীনভাবে বলল ট্রেন আসার শব্দ যদি তুই আগে শুনতে পাস আমাকে জাগাবি আর আমি যদি শুনতে পাই তোকে জাগাবো।
সুমন চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে আছে। আমি কিছুতেই চোখ বন্ধ করছি না কারণ আমি জানি আমি ঘুমিয়ে গেলে ও আমাকে একা রেখে চলে যাবে।
এভাবে অনেক্ষণ কাটার পরে আমি ট্রেনের শব্দ শুনতে পেলাম। ক্রমশ শব্দটা ভারী হচ্ছে , কাছে আসছে। পার্বতীপুর থেকে খোলাহাটির দিকে একটি ট্রেন আসছে। ট্রেন অনেকটাই কাছে চলে আসছে , আমি দুই হাত দিয়ে ওকে জাগানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ও ঘুমের ভান ধরে পরে আছে। এবার ট্রেনটাকে খুব সহজেই কাছ থেকে দেখা যাচ্ছে ।আমি রেললাইন থেকে চলে আসলাম রাস্তায় কিন্তু সুমন তখনো শুয়ে আছে।
ট্রেন যত কাছে আসছে আমার হৃদপিণ্ড তত ধুকপুক করছে আর আমি সমানে সুমনকে চলে আসার জন্য ডাকছি। অবশেষে ট্রেন যখন একেবারে কাছে চলে আসলো তখন সুমন কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গি করে রেললাইন থেকে নেমে রাস্তায় আসলো।
সেদিন ওর উদ্দেশ্য কি ছিলো জানিনা। এরপর ওরা বদলি হয়ে চলে যায় আর কোনদিন দেখা হয়নি ওর সাথে। যোগাযোগও হয়নি। এই ঘটনার কথা আমার বাবা-মা আজও জানে না।
তাই আপনার সন্তান কার সাথে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে ,কার সাথে বন্ধুত্ব করছে খোঁজ রাখুন। কারণ সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




