সঠিকভাবে সিয়াম বা রোজ পালন করলে অসংখ্য পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হবে। শুরু হয়েছে রমজান মাস, তাই প্রতিটি মুসলিমের জন্য রোজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন সঠিকভাবে সিয়াম পারন করি এবং অসংখ্য পুরস্কারে পুরস্কৃত হই।
স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক পুরস্কার :
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই—রোজা ছাড়া। তা আমার জন্য, আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। আর রোজাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯২৭)
জাহান্নাম থেকে মুক্তি :
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও সিয়াম পালন করে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৪০)
ফিতনা থেকে আত্মরক্ষা :
হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাপারে যে ফিতনায় পতিত হয়, নামাজ, রোজা, দান, (ন্যায়ের) আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ তা দূরীভূত করে দেয়। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২৫)
রোজা অতুলনীয় আমল :
আবু উমামা (রা.) বলেন, ‘আমি একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললাম, আমাকে এমন একটি ইবাদতের নির্দেশ দিন, যা আমি আপনার নির্দেশক্রমে পালন করব। তিনি বললেন, তুমি রোজাকে আঁকড়ে ধরো, যেহেতু এর কোনো বিকল্প নেই। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২২০)
রোজা ঢালস্বরূপ :
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুইবার বলে, আমি সওম পালন করছি। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯৪)
অন্য হাদিসে এসেছে, রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল। হাদিসবিশারদরা বলেন, রোজা ইহকালে পাপ কাজ থেকে এবং পরকালে জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী।
রোজা সুপারিশকারী :
রোজা পরকালে আল্লাহর কাছে রোজাদারের পক্ষে সুপারিশ করবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ বলেন, ‘রোজা ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমি তাকে দিনের বেলা পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলা ঘুম থেকে দূরে রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। অতঃপর তাদের সুপারিশকারী হিসেবে গ্রহণ করা হবে। ’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ১৯৬৩)
জান্নাত লাভ :
সাহল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘জান্নাতের রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এই দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজা পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে, যাতে এই দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯৬)
আল্লাহর ক্ষমা লাভ :
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও রোজা পালনকারী নারী, লজ্জাস্থান সংরক্ষণকারী পুরুষ ও লজ্জাস্থান সংরক্ষণকারী নারী, আল্লাহকে বেশি স্মরণকারী পুরুষ ও বেশি স্মরণকারী নারী—এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৫)
দোয়া কবুল আল্লাহ রোজাদারের দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয় : রোজাদারের দোয়া, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া ও মুসাফিরের দোয়া। ’ (সুনানে বায়হাকি)
অন্তরের পরিশুদ্ধি :
রোজা অন্তরের ওয়াসওয়াসা তথা সংশয় দূর করে। আমর ইবনে শুরাহবিল (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের অন্তরের ওয়াসওয়াসা (সংশয়) দূর করার আমল সম্পর্কে অবহিত করব না? সাহাবিরা বললেন, কেন নয়? তিনি বললেন, তা হলো প্রত্যেক মাসের তিন দিন রোজা পালন করা। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৩৮৬)
এছাড়াও আরও পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে। তাই শরীয় কারণ ছাড়া রোজা না রাখা থেকে বিরত থাকি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১০:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




