মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের যেখানে কষ্ট হয় তাদের স্বজনদের মৃত্যুতে, হস্পিটালের আয়া-কর্মী, সিকিউরিটি গার্ড ও এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারদের, কাফনের সাদা কাপড় বিক্রেতা বরং মনে মনে যেনো আনন্দই পায় অবিরত। কেননা, কেউ মারা গেলে তবেই তাদের কিছু আয়-রোজগার হয়। এটা আসলে জীবনের একটা অদ্ভুত বাস্তবতা কিংবা নির্মমতা! এভাবেই স্রোতহীন নদীর মতো জীবন বয়ে চলে তার নিজস্ব পথে।
অভ্র, তার প্রিয়তমা অণুর বেডের পাশে বসে ভাবছে এসব কিছু। জীবন কতোই না বিচিত্র। অণু, যে কিনা ২ দিন আগেও অভ্রর সাথে বাজার নিয়ে ঝগড়া করেছে, সে কিনা আজ পিজি হস্পিটালের ২২৬ নম্বর বেডে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে!
ঘটনাটে ঘটেছে অভ্রর সাথে ঝগড়া হওয়ার পরের দিন। অণু, কাতলা মাছ পছন্দ করে না, তাও অভ্র কি ভেবে যেনো কাতলা মাছ নিয়ে এসেছিলো তাই নিয়েই তাদের সে কি ঝগড়া! সেদিন বোধহয় রবিবার ছিলো, অভ্র প্রতিদিনের মতো তাড়াহুড়ো করেই অফিসের দিকে রওনা দিলো। আর অণু তাদের অতি আদরের মেয়ে রিদবার টিফিন বক্স গুছানো শেষে, তাকে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা করলো।
রিদবা, ক্লাস টু তে পড়ে, সে বিজিবির আওতাধীন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মাদ পাবলিক স্কুলে পড়ে। তারা ধানমন্ডি ১৫ নম্বরের ছোট একটি বাসাতে থাকে। প্রতিদিনের মতো সেদিনও তারা রিকশা করেই স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা করলো; কিন্তু প্রতিদিনের মতো ঠিকভাবে আর স্কুলে পৌছানো হয় নি। রিকশা ধানমন্ডি বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি আসার আগেই পিছন থেকে সজোরে আঘাত করে ফাল্গুনী নামের ঘাতক বাসটি। সাথে সাথেই রোদে তপ্ত রাস্তা যেনো তার তৃষ্ণা মিটাতে শুষে নিতে শুরু করে লাল রক্তের বুদবুদ।
প্রতিদিনের মতো সেদিনও ঠিক ১১ টার দিকে অণুর নম্বর থেকে অভ্রর ফোনে ফোন এসেছিলো ঠিকই। কিন্তু ওপাশ থেকে শুধু ভয়েসটা অপরিচিত ছিলো না; ছিলো শঙ্কিত। শুধু শুনতে পেলো অ্যাক্সিডেন্টের কথা; কে যেনো বার বার বলছে আপনি কি তাদের কিছু হন? যেনো মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু হারিয়ে গেলো।
তাদের অতি আদরের রিদবা ঠিকই আছে। মাথায় অল্প আঘাত আর ডান হাতটা ভেঙেছে। তাকে সর্ম্পূণ রেস্টে থাকতে বলা হয়েছে। তাই তাকে এখন তার নানুর কাছে বাসায় রাখা হয়েছে।
কিন্তু অণু! সে কাউকেই চিনতে পারছে না, মস্তিষ্কে প্রচন্ড আঘাতের কারণে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হয়ে যাচ্ছে। অপারেশন শেষ হওয়ার পরও সে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যায় নি। তাইতো আস্তে আস্তে নির্মম বাস্তবতার দিকেই যেনো এগিয়ে যাচ্ছে সে। আর তার পাশে বসে অতি অপ্রিয় সে বাস্তবতার কথাই ভেবে চলেছে অভ্র।
অভ্র ভুলে যায় নি অণুকে খুজে পাওয়ার মুহূর্তটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয় কলা অনুষদের গেটে বৃষ্টিসিক্ত নীল রঙয়ের ছাতা মাথায় দাড়িয়ে ছিলো সহজ-সরল চেহারার একটি মেয়ে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছিলো; কি জানো খুজে চলেছে । এতোটা মায়া জড়িয়ে ছিলো সে চেহারার যে, প্রথম দেখেই অভ্রর ভেতরে কেমন একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে সেটা বলে বোঝানো যাবে না ।
বি. দ্র. : ১ম প্যারাটি সংগৃহীত।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৮ রাত ১:৫৩