নিজের মেসে ঝিমোচ্ছিল হিমু আর চিন্তা করছিলো কেনো সে হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে ঘুরে বেড়ায়? অন্য রঙের পাঞ্জাবি পড়লে ক্ষতি কি? নীল,সাদা,কালো বা অন্য রঙের পাঞ্জাবি পড়ে ঘুরে দেখতে হবে ; মাঝেমধ্যে এক্সপেরিমেন্ট করা দরকার।
কিন্তু হঠাৎ তার চিন্তা আরো গাঢ় হয়ে উঠলো যখন মনে পড়লো; তার কেবল একটা পাঞ্জাবি আর সেটার রঙ হলুদ। না আজই মাজেদা খালার কাছ থেকে ১০০০ টাকার একটা নোট ধার করে একটা সাদা রঙের পাঞ্জাবি কিনে আনতে হবে।
নিউমার্কেটের আজিজ পাঞ্জাবি থেকে কেনা যেতে পারে। দোকানের ভদ্রলোক আজিজ সাহেব খুবই ভালো মানুষ; দেখা হলেই এক প্রশস্ত হাসি দিয়েই বলে বসুন ; আর সাথে সাথে দোকানের আজাদ নামের পিচ্চি ছেলেটা এক পেয়ালা চা নিয়ে হাজির হয়ে যায়। আহা! সে চা নগণ্য হলেও ; হিমুর কাছে তা অতুলনীয়।
হিমুর চিন্তার মাঝে বাধা হয়ে বসলো দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ। এমনি দরজা-জানালা সব খোলাই থাকে। কিন্তু আজ ঘুম দিবস তাই দরজা-জানালা সব বন্ধ করে ঘুমের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু ঘুম বাবাজি আজ ধরা-ছোয়ার বাহিরে।
হিমু চিন্তায় পড়ে গেলো এ সময় কে আসেব? এসময় তো কারো আসার কথা না! এসব চিন্তা করেই কাথা মুরি দিয়ে পড়ে থাকে। দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হয়ে যাচ্ছে সেদিকে কর্ণপাত নেই হিমুর।আওয়াজটা খারাপ লাগছে না।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর ঘরে নড়া-চড়ার আওয়াজ শুনে ভরকে উঠে হিমু। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে মটকা মেরে বুঝার চেষ্টা করে কে হতে পারে। আর ঘরেই বা ঢুকলো কি করে! পুরো ঘর জুড়ে একটা মিষ্টি সুগন্ধ আবৃত হয়ে গেছে। এতো মিষ্টি গন্ধ তো কেবল মেয়েদের পারফিউমেই থাকার কথা।
অপরিচিতা কোন মেয়ে তার মেসে কি করছে! একটু ভাবার চেষ্টা করে। মেয়েটি কতক্ষণ হলো এসেছে? কি চায় তার কাছে? মেয়েটি কি পড়ে আছে? শাড়ি না সেলোয়ার কামিজ? নাকি প্যান্ট-শার্ট? তার বিছানার পাশের চেয়ারে যে মেয়েটি বসে আছে, তাকে মেয়ে ভাবছে কেন হিমু! মহিলাও তো হতে পারে।
'হিমু সাহেব, আপনি কতক্ষণ এভাবে চোখ বন্ধ করে বিছানায় পড়ে থাকবেন?' মেয়েটি হঠাৎ কথা বলে উঠলো।
চমকে উঠে হিমু। সে ঘুমিয়ে থাকার ভান করছে তা বুঝলো কি করে মেয়েটি! চমকে উঠলেও মনে মনে একটু নিশ্চিন্ত হয় যে একটা মেয়েই তার সাথে কথা বলছে, কোন মহিলা নয়। এমন চীকন আর মোলায়েম সুর কোন মহিলার হওয়ার কথা না। আর এ কন্ঠ তার অতি পরিচিত; কাছের কারো!
ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায় হিমু। এবারে শুধু চমকে যাওয়া নয়, বলা যায় বিষম খেলো। চেয়ারে বসে আছে আর কেউ না রূপা।
- একি তুমি এখানে তোমার হাতে ওটা কি? আর তুমি ভিতরে এলেই বা কিভাবে।
- আমি তো যেখানে ইচ্ছা যেতে পারি। হি হি হি। তোমার জন্মদিনের গিফট নিয়ে এসেছি। হ্যাপী বার্থডে টু ইউ।
- হিমুদের জন্মদিন নেই তুমি জানো না। তবুও ভদ্রতার খাতিরে ধন্যবাদ দিলাম।
- তোমার ধন্যবাদ গ্রহণ করলাম। এই নেও দেখো গিফট পছন্দ হয় কিনা।
- হিমু প্যাকেটটা হাতে নিয়ে খুলতে শুরু করলো। পাঞ্জাবি টাইপ কিছু একটা মনে হচ্ছে! একি এইতো সেই সাদা পাঞ্জাবি। যা কিনতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলো হিমু। না হিমুর পরিকল্পনার ১২ টা বাজিয়ে দিলো রূপা। মাজেদা খালার কাছে আর টাকা চাইতে যেতে হবে না।
রমনার পার্কের বটতলায় বসে আছে তারা দু'জন নীল শাড়ি পরিহিতা রূপা আর সাদা পাঞ্জাবি পড়ে হিমু। হিমু কিছুটা উদাস ভঙ্গিতে দূরে বসে আছে; ভাবছে সাদা পাঞ্জাবি না পড়ে হলুদ পাঞ্জাবি পড়াই ভালো ছিলো। নিজের কাছেই নিজেকে এখন অচেনা লাগছে।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
বি. দ্র : একজন হিমু ভক্ত হিসেবে লেখাটি কল্পনা ব্যতীত কিছুই না। স্যারের চরিত্র নিয়ে লেখার যোগ্যতা আমার নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:২৫