সবাইকে বৃষ্টিভেজা দুপুর, মিষ্টি বাতাস আর কড়া রোদের শুভেচ্ছা।
কেমন আছেন আপনারা?
১.
ছোট্ট একটা রুমের ভিতর দুটো খাটের মাঝে একটা পড়ার টেবিল। টেবিলের উপর এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে কিছু বই-খাতা আর একটা ছোট্র এলার্ম ঘড়ি। দড়িতে ঝুলছে একগাদা আধ ময়লা কাপড়-চোপড়। কম্পিউটারের টেবিল আর তাতে রাখা কম্পিউটারের উপর একরাশ ধুলো জমে আছে। এক খাটে মামুন আরেক খাটে রুদ্র অঘোরে ঘুমুচ্ছে। হঠাৎ এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল রুদ্রর। মুখে বিরক্তির ভাব নিয়ে এলার্ম বন্ধ করল। তাকিয়ে দেখল মামুন এখনো অঘোরে ঘুমুচ্ছে। কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
“শালা, কুম্ভকর্ণ কোথাকার!!”- মনে মনে বলল রুদ্র। তারপর উঠে সোজা ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই কে যেন দরজায় কড়া নাড়ল। দরজা খুলে দেখল বাসার দারোয়ান চাচা।
''কি ব্যাপার চাচা? এত সকালে? ''– রুদ্র জানতে চাইল। ‘'বাবা এটা তোমার জন্য একজন দিয়ে গেছে'', বলেই বিশাল একটা উপহারের বাক্স আর একটা চিঠি রুদ্রর হাতে তুলে দিয়ে চলে গেলেন। দরজা বন্ধ করে উপহারটা রেখে চিঠিটা খুলতেই সেই চেনা সুগন্ধ ওর নাকে আসলো। চিঠিটা পড়তে যেয়েই ও খুব অবাক হল। পুরো চিঠির পৃষ্ঠা জুড়ে লেখা, “শুভ জন্মদিন”।
গত কয়েক মাস ধরেই রুদ্রর নামে কে যেন উপহার আর চিঠি পাঠায়। প্রথম উপহার আর চিঠি পেয়ে ও এতটা অবাক হয়নি যতটা হয়েছে আজ !!
রুদ্র দেয়ালে টানানো ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাল। আজকের তারিখটা দেখল, আজ যে ওর জন্মদিন সেটা ও নিজেই ভুলে গিয়েছিল। ব্যস্ততার কারনে হয়তো বাবা-মা ভুলে গেছে।হয়তো মনে পড়লে ঠিকই কল দিবে।আগে খুব কষ্ট হত এ কারনে কিন্তু এখন আর হয়না। তবে সব থেকে বড় কথা ওর জন্মদিনের কথা ওর বাবা মা ছাড়া আর কেউ জানেনা এমনকি ওর কাছের বন্ধুরাও না। তাহলে এই উপহার দাতা জানলো কিভাবে? কে এই উপহারদাতা? এসব ভাবতে ভাবতে ছোট্র এলার্ম ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে তড়াক করে লাফিয়ে উঠল, “দশটা বেজে গেছে !!” তার উপর আজ ফাইনাল ইয়ারে ভর্তির শেষ তারিখ। কোনো মতে তৈরী হয়ে ব্যাগটা গুছিয়ে কি মনে করে যেন চিঠিটা পকেটে ভরে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
২.
ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়ে দেখে বিশাল লাইন। শেষ তারিখ বলে লাইনে দাড়াতে হল। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন বলল, '‘এই রুদ্র, আমার ভর্তির ফি টা কাইন্ডলি জমা দিয়ে দিবে?'’ পিছন ফিরে দেখে ওর ক্লাসমেট রুপা। রুপা ওদের ক্লাসের সবছেয়ে মিষ্টি আর শান্ত মেয়ে। তাই সবাই ওকে খুব পছন্দ করে। '‘হুম, দিচ্ছি'’ বলে ব্যাংকের রশিদ আর টাকাটা নিল রুপার কাছ থেকে। আস্তে আস্তে লাইন ছোট হতে লাগল। হঠাৎ রুপার ব্যাংকের রশিদের দিকে রুদ্রর চোখ আটকে গেল। লেখাটা খুব পরিচিত লাগছে! কি মনে করে রুদ্র পকেট থেকে চিঠিটা বের করে দুটো হাতের লেখা মিলাতে লাগল। বিস্ময়ে ওর চোখ বড় হয়ে গেল। ও একবার রুপার দিকে আর একবার লেখার দিকে তাকাতে লাগল। তারপর কোনোমতে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে রুপার হাত ধরে টানতে টানতে ওকে নিয়ে গেল একটা ক্লাসরুমে। রুপা রুদ্রর এই অদ্ভুত আচরনে অবাক হয়ে জানতে চাইল, ''কি হয়েছে?''
''বুঝতে পারছ না?এসব কি?'', বলেই চিঠিটা ছুড়ে দিল রুদ্র। ''কেন এসব করছ? লুকিয়ে লুকিয়ে এসব চিঠি, উপহার পাঠানোর মানে কি? আর আজ আমার জন্মদিন এটা তুমি জানলে কিভাবে?''
''ন্যাকামি রাখো, বুঝোনা একটা মেয়ে কেন এমন করে?নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছো?'', রেগে গিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল রুপা। মুহূর্তের মধ্যে রুপার শান্ত চেহারাটা পালটে গেল। রুদ্র খেয়াল করল রাগে,অভিমানে রুপার নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে। অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ রুপাকে ওর কাছে অন্যরকম লাগতে শুরু করল। হঠাৎ রুপা বলতে শুরু করল, '‘কবে থেকে তোমাকে আমার ভালো লাগতে শুরু করে জানি না।যদিও আমি অগোছালো মানুষ পছন্দ করিনা, তারপরও কেন জানি তোমার অগোছালো ভাব আমাকে কাছে টানতো। তোমার প্রতি এই ভালোলাগাটা যে কবে ভালোবাসায় রুপ নিল তাও জানিনা। কিভাবে বলব এটা বুঝতে না পেরে এসব করেছি। আর ডিপার্টমেন্টের অফিস থেকে তোমার জন্মদিনটা অনেক কষ্টে জেনেছি। আমি আর কিছু বলতে পারব না’'- বলেই রুদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখল বিস্ময়ে ও চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
‘'এই এভাবে তাকাবে না, আমার কেমন যেন লাগে আর তোমার কিছু বলার থাকলে বলো তা না হলে আমি চললাম'', বলেই রুপা পা বাড়াল। রুদ্র তাড়াতাড়ি রুপার হাত ধরে ওকে থামিয়ে অসহায়ের মত বলল, '‘যেওনা রুপা। প্লিইজ, তোমার কথাগুলো শুনতে খুব ভালো লাগছিল, আরেকবার বলবে প্লিজ?'’ এ কথা শুনে রুপা হেসে দিল। পুরো ক্লাসরুম জুড়ে রুপার হাসি প্রতিধ্বনিত হতে লাগল।
রুদ্র অবাক হয়ে রুপার দিকে তাকিয়ে ভাবল, '‘এত সুন্দর করে কেউ হাসতে পারে !!’'
৩.
রুপার পাঠানো উপহারগুলো রুদ্র এখনো খুলে দেখেনি। ঠিক করেছিল যেদিন এই উপহারদাতাকে খুঁজে পাবে সেদিন খুলে দেখবে। আজ ও খুঁজে পেয়েছে, শুধু উপহারদাতাকে নয় খুঁজে পেয়েছে নতুন এক সঙ্গী। রুপার সামনে বসেই ও এক এক করে সব উপহার খুলে দেখতে লাগল। তারপর রুদ্র রুপার হাত ধরে বলল, “রুপা একটা কথা বলতে চাই, আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম জন্মদিনের কথা কিন্তু তুমি আমাকে নতুন করে তা আবার মনে করিয়ে দিয়েছ তাই আমার জন্মদিনে সব থেকে বড় উপহার তুমি। ভালবাসতে শুরু করেছি তোমাকে রুপা।শেষ পর্যন্ত ভালবেসে যেতে চাই।এখন থেকে আগামি প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে চাই।"
রুদ্রর কথা শুনে রুপা আবার হেসে বলল,"পাগল একটা।ওমা,রুদ্র তুমি কাঁদছো কেন?"