somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিনার্ভা

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আম্মা বারবার করে বলছে কেন যাবি না, সমস্যা কি, এখানে তো খারাপ কিছু নাই। কিন্তু ফয়সালের কেন যেন যেতেই ইচ্ছে হচ্ছে না। আম্মা ওর বিয়ে দেয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেছে। এখানে ওখানে মেয়ে দেখে বেড়াচ্ছে, নিজেই পছন্দ করছে, নিজেই বাতিল করছে। তার একমাত্র ছেলের জন্য আম্মার একেবারে রাজকন্যা চাই।আম্মার পাল্লায় পড়ে এরমধ্যে তিনবার তিনজনকে দেখতে যেতে হয়েছে। কিন্তু তাদের কাউকেই ফয়সালের পছন্দ হয় নি। আসলে ওর কল্পনার সাথে মেলেনি। ও মনে মনে একটা চেহারা তৈরি করে নিয়েছে, যাকে বিয়ে করবে, যাকে ভালবাসবে এক নজর দেখলেই সে চিনতে পারবে। কিন্তু ওই তিনজন সেরকম ছিল না।
এখন আবার আম্মা আরেকজনকে দেখতে যাওয়ার জন্য কাল রাত থেকে। যদিও আম্মা নিজে দেখে নাই, তবে রিমা খালার কাছে শুনে শুনে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেছে। ফয়সালের যেতে ইচ্ছা করছে না। এভাবে ঘুরে ঘুরে মেয়ে দেখে বেড়ানো, তারপর এরমধ্য দেখে সবচেয়ে ভালকে খুঁজে বের করে গলায় মালা পড়ানো-এই ব্যাপারগুলো ও সাপোর্ট করতে পারে না। কিন্তু আম্মা এমন অস্থির করছে, মনে হচ্ছে কাল যাওয়াই লাগবে। মেয়ের বায়োডাটা হাতে নিয়ে বসে আছে ফয়সাল। আর আম্মা বকবক করেই যাচ্ছে। ‘ভাল, লক্ষী মেয়ে। দেখতে শুনতেও ভাল। ভাল জায়গা থেকে পাস করছে, চাকরি করতেছে, ভদ্র, নামাজ-কালাম, রান্না-বান্না সবদিকেই আছে। এত ভাল একটা মেয়ে, কেন তোর মত নাই আমি বুঝতেছি না। হওয়া না হওয়া তো পরের কথা, একবার দেখতে দোষ কি?’
‘ঠিক আছে যাও, যাবো কালকে। কিন্তু আমাকে কোন জোরাজুরি করতে পারবা না।’ হাল ছেড়ে দিয়ে বলে ফয়সাল। আম্মা খুশি হয়ে উঠে যায়। ফয়সাল আরেকবার বায়োডাটার দিকে তাকায়, নিরুৎসুক দৃষ্টি। নামের দিকে চোখ পড়তেই নড়ে চড়ে বসে। ‘মিনার্ভা’। অদ্ভুত নাম তো! মিনার্ভা তো একটা দেবীর নাম, গ্রীক না রোমান যেন। বাহ আম্মা এখন রাজকন্যা ছেড়ে সরাসরি দেবীর সাথেই বিয়ে দিচ্ছে নাকি ওর? মিনার্ভা, মিনার্ভা...নিজের অজান্তেই কয়েকবার করে বিড়বিড় করে ফয়সাল। দেবীর নামে নাম, মেয়েও কি দেবীর মত সুন্দর নাকি? এরজন্যই আম্মার এত আগ্রহ? ভাল, দেখা যাক।
............. ............. ..............
অফিস থেকে একটু আগে আগে বের হয় ফয়সাল। মেয়ে চাকরি করে, বলেছে অফিসের পরে দেখা করবে। যেহেতু ফয়সালকে মতিঝিল থেকে মোহাম্মদপুর যেতে হবে দেখা করার জন্য, তাই ওকে আগে বেরুতেই হয়। এর আগে যে তিনবার মেয়ে দেখতে গিয়েছিল প্রতিবারই আম্মা-ভাবী, কেউ না কেউ গেছে সাথে এবং মেয়েকেও একা আসতে দেয়া হয়নি। কোন না কোন গার্জিয়ান গার্ড দিয়ে নিয়ে এসেছে। কাল আম্মা বলল, মেয়ে নাকি বলেছে সে একাই আসবে আর ফয়সালও যেন একাই যায়। যেহেতু ওদের দুজনের মতামতই আসল, তাই প্রথমেই সবাই মিলে গিয়ে একটা হাঙ্গামা না করাই ভাল। স্মার্ট মেয়ে! হাসে ফয়সাল। তবে ভালও লাগে ব্যাপারটা। সবার সাথে গেলে খুব অস্বস্তি হতে থাকে। নিজেকে নিজের মত প্রকাশ করা যায় না।
সাড়ে পাঁচটায় দেখা হওয়ার কথা। ফয়সালের পৌঁছাতে দশ মিনিট দেরি হয়ে গেল। একটা ফাস্ট ফুডে অপেক্ষা করবে বলেছে মেয়ে। ফয়সাল ভিতরে ঢুকে ইতস্তত তাকায় চারদিকে। কিন্তু কোন টেবিলেই একা কোন মেয়েকে দেখা যায় না। একটা টেবিলে দুজন বসে আছে, ফয়সালকে বোকার মত চারদিকে তাকাতে দেখে তারা খুব মজা পেয়েছে বোঝা গেল। আড়চোখে তাকাচ্ছে, ফিসফিস করে কিসব বলছে নিজেরাই আর মিটিমিটি হাসছে। ফয়সাল একটু দ্বিধান্বিত হয়ে যায়। মেয়েটা ওকে বোকা বানাতে বান্ধবী নিয়ে আসেনি তো? অস্বস্তি নিয়ে একটা খালি টেবিলে এসে বসে ফয়সাল, দরজার দিকে মুখ করে। আরো প্রায় পাঁচ মিনিট পরে দরজা ঠেলে একটা মেয়ে এসে ঢোকে। চারদিকে একটুখানি তাকায়, তারপর ধীরে ধীরে ওর টেবিলের দিকে এগিয়ে আসে। সামনে এসে একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করে, ‘ফয়সাল?’ ফয়সাল মাথা নাড়ে। মেয়েটা একটু হেসে বলে, ‘আমি মিনার্ভা।’ ফয়সাল উঠে দাঁড়ায়, বসতে বলে। মিনার্ভা বসে, ফয়সালও। মিনার্ভা কি কোন দেবীর মত দেখতে? ফর্সা, লালচে গাল, ডিমের মত মুখ, বড় বড় চোখ, খেয়াল করলে বোঝা যায় হালকা খয়েরী চোখের রঙ, ছোট কিন্তু টিকোলো নাক, পাতলা ঠোঁট, মসৃণ চুল, বেঁধে রাখা বলে বোঝা যাচ্ছে না কত বড়। একটা আকাশ নীল সালোয়াড়-কামিজ পরেছে মেয়েটা। সবচেয়ে ভাল লাগে যে জিনিসটা তা হল মেয়েটা অসম্ভব রকম শান্ত। বড় বড় চোখ মেলে দেখছে ফয়সালকে। চোখে চোখ পড়তেই মিষ্টি করে একটু হাসল, গালে ছোট একটা টোল পড়ল আর একটু উঁচু গজ দাঁতটা বের হয়ে পড়ল। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল ফয়সাল। বাতাসের মত নরম গলায় মিনার্ভা বলল, ‘সরি, আমি বোধহয় দেরি করে ফেলেছি।’
ফয়সাল তাড়াতাড়ি বলে, ‘না না, ঠিক আছে। আমি খুব বেশিক্ষণ হয়নি এসেছি।’
‘কেমন আছেন?’
‘ভাল। আপনি?’
আবার সেই হাসি, ‘ভাল।’
টুকটাক কথা বলে মিনার্ভা, বিভিন্ন খোঁজখবর নেয়। ফয়সালও কথা বলে, মিনার্ভার প্রশ্নের উত্তর দেয়। আর অবাক হয়ে শুধু দেখে। চোখে হালকা করে কাজল টেনেছে। কেমন মায়া মায়া দেখাচ্ছে। কপালে ছোট্ট একটা সাদা পাথর, মনে হচ্ছে একটা তারা জ্বলছে। মিনার্ভাকে ওর ভাল লাগছে। মেয়েটোর কথা, হাসি, চোখ, মুখ সবকিছুই ভাল লাগছে। ফয়সালের কেমন নার্ভাস লাগতে থাকে। বুকে হালকা কাঁপন টের পায়। কথা গুলিয়ে ফেলে। সবসময়কার চটপটে, স্মার্ট ফয়সাল কেমন বোকা বোকা হয়ে যায়। অথচ মিনার্ভা কত শান্ত, স্থির। যেন কিছুই হয়নি। একটু ভয় পায় ফয়সাল। কিছুই হয়নি? তাহলে তো মুশকিল। দুজন দুটো কফি নিয়েছিল, শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। আড়চোখে ঘড়ি দেখে ফয়সাল। প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেছে ওরা এখানে বসে আছে। চোখ তুলে তাকাতেই মিনার্ভা হাসে। বলে, ‘যাওয়া দরকার এখন।’
ফয়সালের উঠতে ইচ্ছে করে না। তবু বলে, ‘হ্যাঁ, চলুন।’
বের হয়ে আসে দুজনে। মিনার্ভার বাসা কাছেই। ফয়সাল জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি কিভাবে যাবেন?’
‘এইতো একটু হেঁটে রাস্তা পার হবো। তারপর রিক্সা নেবো।’
‘চলুন আপনাকে এগিয়ে দিই।’ ফয়সাল কিছুতেই চাইছে না এই সময়টুকু শেষ হয়ে যাক।
মিনার্ভা মাথা নেড়ে হাঁটতে থাকে পাশাপাশি। হালকা একটা ঝুনঝুন শব্দ হয় কোথায় যেন। সুন্দর একটা ছন্দ, ভাল লাগে শুনতে। আড়চোখে পাশে হাঁটতে থাকা মিনার্ভাকে দেখে ফয়সাল। সূর্য ডুবে গেছে, হালকা একটু আলো ছড়িয়ে আছে। সেই আলোয় মেয়েটাকে কেমন মায়াবী মনে হয়। মিনার্ভার লালচে গালের একপাশ, মুখের ওপর উড়ে এসে পড়া চুল, কানের নীল পাথর বসানো টবটা দেখতে দেখতে ফয়সাল হঠাৎ করেই বুঝতে পারে মিনার্ভা সেই, যাকে সে সবসময় ভেবেছে, কল্পনা করেছে, এতদিন যার জন্য অপেক্ষা করেছে। ফয়সাল বুঝতে পারে ওকে তার পেতেই হবে। মিনার্ভা ফিরে তাকায় ওর দিকে, বলে, ‘আমি এখন রাস্তা পার হবো। আপনি তো এখান থেকেই বাসে উঠবেন, তাই না?’
ফয়সাল মাথা নাড়ে। ‘ঠিক আছে। আসি তাহলে?’
মিনার্ভা চলে যাচ্ছে। ফয়সালের কি মনে হয়, হঠাৎ জিজ্ঞেস করে, ‘আমি কি আপনাকে ফোন করতে পারি?’
মিনার্ভা চোখ নামিয়ে একটু ভাবে। তারপর সরাসরি তাকায় ওর চোখের দিকে, স্পষ্ট স্বরে বলে, ‘যদি আপনি পজিটিভ হোন তাহলে করবেন।’ একটু হেসে হেঁটে যায় সামনের দিকে। ঝুনঝুন শব্দটাও যেতে থাকে ওর সাথে। মিনার্ভার পায়ে নূপুর। পিছন থেকে আকাশ নীল জামা পরা মিনার্ভাকে দেখে ফয়সালের সত্যি সত্যি দেবী মনে হতে থাকে। ওর বুকের ভিতর ঝুন ঝুন করে কি যেন বাজে। ফয়সাল জেনে যায়, ও মিনার্ভাকে ফোন করবে।


................................

সেই অদেখা তাকে
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:৫৯
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×