somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চোখের ভেতর তেপান্তরের চোখ

০৭ ই মে, ২০১১ দুপুর ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বহুদিন পরে লম্বা একটা ছুটি পাওয়া গেল। দু'দিন-তিন দিনের ছুটিতে বাড়ি এলে বেশিরভাগ সময়ে ঘুমিয়েই কেটে যায়। এমন টানা সাতদিনের ছুটি, মনে করতে পারছি না শেষ কবে পেয়েছিলাম। সারারাতের নিশ্চিন্ত, আরামের একটা ঘুমের পর জেগে উঠলাম বেশ ভোরেই। কেউ ডাকেনি, মনে হচ্ছিল কোথায় যেন একটা এ্যালার্ম সেট করা ছিল...ঠিক ঠিক জাগিয়ে দিল। কিন্তু ঘর ছেড়ে বেরুতেই টের পেলাম তারপরও সবার শেষেই পড়ে গেছি। রান্নাঘরে যেয়ে আম্মার গা ঘেঁষে বসলাম, যেমন বসতাম কোন এক সময়। আম্মা একটু হেসে নাস্তা এগিয়ে দিলেন, চিতই পিঠা, সাথে গুড়-নারকেল। খেয়ে উঠতেই দেখি আব্বা হন্ত দন্ত হয়ে বেরুচ্ছেন ঘর থেকে। ছোট বোনটা পিছন পিছন এসে বাজারের ব্যাগটা ধরিয়ে দিল হাতে। রান্নাঘরের দরজায় এসে কি কি লাগবে জেনে নিলেন আম্মার কাছে। ঘুরতে যাবেন, হঠাৎ আমার দিকে চোখ পড়তেই বললেন, 'যাবি নাকি বাজারে?'

বাজারে! আচ্ছা যাই। উঠে এলাম যেন কতদিনের আড়মোড়া ভেঙে। আব্বার পিছন পিছন হাঁটছি। এরমধ্যে দেখা হল একরাম চাচার সাথে। তাঁরা দুইজন কত কি নিয়ে কথা বলতে লাগলেন। চাচা আমাকে দেখে বললেন, 'কি ভাইস্তা আছো কেমন? আসলা কবে? আরো দেখি শুকাই গ্যাছো! খাওয়া-দাওয়া করো না কিসু?' হাসলাম মনে মনে খুব। আসার পর থেকে গত দুইদিনে এত বেশি বার শুনেছি কথাটা!

দূর থেকে বাচ্চাদের কোরাস করে কোরআন পড়ার শব্দ ভেসে আসছে মক্তব থেকে। পাশ দিয়ে যেতে যেতে দেখি হুজুর বসে আছেন গম্ভীর মুখে, পাশে চিকন একটা জালি বেত রাখা। বয়স হয়েছে উনার, বেতটারও...কিন্তু এখনও একইরকম ক্ষমতাবান। বাচ্চাগুলো খুব মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে পড়ে যাচ্ছে। চোখে বেশ একটা ধাঁধা লেগে গেল, যেন একটা কোণায় নিজেকেও দেখতে পেলাম। হুজুরের চোখ এড়িয়ে সামনের ছেলেটার পিঠে মোক্ষম একটা খোঁচা মারছি। সে বেচারা ব্যথায় আঁতকে উঠতে গিয়েও হুজুরের ভয়ে সামলে নিল, কেবল চোখ ঘুরিয়ে একটা অগ্নিদৃষ্টি হানা ছাড়া।

কখন যেন পৌঁছে গেলাম বাজারে। বদলে গেছে সব, অনেক বেশি। ছোট ছোট ছাপড়া দোকানগুলোর জায়গায় চকচকে টিনের ঘর, কোথাও কোথাও পাকা দালান, বাহারি সব জিনিসের সাপ্লাই এখন অনেক বেশি। ঘুরছি আর দেখছি, কি নেই! মাঝামাঝি একটা জায়গায় পৌঁছে হঠাৎ হোঁচট খেলাম খুব। কাঁচা তরি-তরকারি, সবজির দোকানগুলোর পাশে একটা ছাপড়ামতন, এক লোক ঝাকায় করে এত্ত পান সাজিয়ে রেখেছে, পাশের ডালায় সুপারি, জর্দা, সাদা পাতা, চুন...

সেই কবেকার কথা! বিশ বছর...না আরো বেশি, হয়তো পঁচিশ। একটা ছেলে... ঢিলে ঢালা হাফ প্যান্ট পরা, পরনে রঙ চটে যাওয়া একটা গেঞ্জি, পায়ে স্পঞ্জ, চোখে উজ্জল রোদের উচ্ছাস... হাফাতে হাফাতে দৌড়ে এল পানের ডালাটার সামনে। পান কিনবে, সাথে সুপারি, চুন। গ্রাম থেকে আজ দাদা-দাদী এসেছেন, তাঁরা পান না খেয়ে থাকতেই পারেন না। আম্মা তাই সবচেয়ে উৎসাহী মানুষটাকেই পাঠিয়েছেন। দাদীর গা ঘেঁষে শুয়ে রাতের বেলায় গল্প শোনা, মাথার চুলে তাঁর কাঁপা হাতের বিলি, আর পান-জর্দার একটা নেশা নেশা গন্ধ! দাদাজানের রাগী, গম্ভীর মুখের আড়ালে অদ্ভূত এক প্রশ্রয়। যে ছেলেটার ঘুড়ি ওড়ানো কড়াভাবে নিষেধ, তার জন্য বরাদ্দ হল বাড়তি দুটো টাকা। পকেটে এক হাত, শক্ত হাতে চেপে ধরা টাকাটা সে হাতে...অস্থির ছেলেটা পানের দোকানের সামনে অধৈর্য দাঁড়িয়ে, ছটফট করছে অবিরত। কখন পানের গাঁট বাঁধা শেষ হবে, আর ছেলেটা দৌঁড়ে যাবে ঘুড়ির দোকানের সামনে। আকাশ তার জানলা খুলে আলো ছড়িয়ে ডাকছে ছেলেটাকে।

আমার চোখের ভেতর থেকে শৈশবের আমিটা বেরিয়ে দৌড়ে গেল ঢিলে ঢালা হাফপ্যান্ট আর রঙচটা গেঞ্জিটা পড়ে। একহাতে পানের গাঁটরি, সুপারি, চুন, জর্দা; আরেক হাতে সাতরঙা এক ঘুড়ি...উড়ছে আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে। তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে...আকাশ ছুঁয়ে...রঙধনুর দেশে...



................................................................................

গল্পটার এত অদ্ভুত সুন্দর একটা নাম দিয়ে দেয়ার জন্য রানা ভাইয়ার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা। এত সুন্দর একটা নামের একটা গল্প লেখার সাহস আমার ছিল না। শুধু মার খাওয়ার ভয়ে লিখতে হল।:)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:৩৯
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×