somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেরাবিথিয়ার পথে

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জেস এবং লেসলি, দুই কিশোর-কিশোরীর গল্প নিয়ে সিনেমা Bridge to Terabithia. গ্রামের গরীব এক পরিবারের ছেলে জেস। বিশাল পরিবারের দায় কাঁধে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত বাবা, সারাক্ষণ বিরক্ত করতে থাকা বড় চার বোন, ইঁচড়ে পাকা স্কুলের বন্ধুরা...সবার চেয়ে জেস আলাদা। সে থাকে নিজের মনে, একা একা ঘুরে বেড়ায়, ছবি আঁকে, বিশাল খোলা মাঠে দৌড় প্র্যাকটিস করে। পুরো গ্রীষ্ম জুড়ে সে স্কুলের দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার জন্য প্র্যাকটিস করে গেল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে স্কুলে নতুন আসা মেয়ে লেসলির কাছে হেরে গেল জেস। লেসলি শহরের মেয়ে, তারা ধনী...তারপরও কেমন করে যেন ওদের দুজনের খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেল। ওরা নিজেদের একটা আলাদা জগৎ তৈরি করে নিল। বাড়ি থেকে বেশ অনেকটা দূরে, মাঠ পেরিয়ে, ছোট্ট একটা জলার ওপারের জায়গাটা হল তাদের কল্পনার রাজত্ব, টেরাবিথিয়া। তারা দুজন সেখানকার রাজা-রাণী। তাদের যুদ্ধ সব দৈত্য-দানব, রাক্ষস-খোক্কসের সাথে।

খুবই সাধারণ একটা সিনেমা। খুব চেষ্টা করা হয় নি দৈত্য-দানবগুলোর এ্যানিমেশন বাস্তবসম্মত করে তুলতে। অন্য চরিত্রগুলোও যে খুব ভাল অভিনয় করেছে, তাও না। তবে এই দুই কিশোর-কিশোরী তাদের ভূমিকায় ছিল অসাধারণ। আর এই আপাত সাধারণ, সাদামাটা সিনেমাটাই আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে। কতবার যে দেখেছি মুগ্ধ হয়ে! কারণ সিনেমাটা, জেস এবং লেসলি দুজনকেই আমার অনেক আপন মনে হয়েছে। আমার ছোটবেলাটা মনে করিয়ে দিয়েছে। এইরকমই কল্পনাপ্রবণ ছিলাম আমি আমার শৈশবে। কত কি অদ্ভুত কল্পনায় বুঁদ হয়ে থাকতাম সবসময়! কল্পনাগুলো এমন ছিল যে ভাবতে ভাবতে একটা সময় মনে হতো বুঝি সত্যিই এটা ঘটছে।

রহস্য পত্রিকায় একটা খবর এসেছিল, আমেরিকার কোন অঙ্গরাজ্যে নাকি পরী দেখা গেছে। ছোট্ট ছোট্ট পরীর ঝাপসা ছবিও দিয়েছিল। লোডশেডিং হলে জানালার গ্রীলে পা তুলে দিয়ে চাঁদের আলোয় কতদিন পরী দেখার চেষ্টা করেছি! টিংকার বেলের মত ছোট্ট ঝাপসা শরীরের পরীর সাথে বোধহয় দেখাও হয়েছিল কোন কোন দিন।

'গালিভার'স ট্রাভেলস' বইটা পড়ার সময় লিলিপুটদের দেখার খুব ইচ্ছে হতো। গরমের অলস দুপুরগুলোয় সবাই যখন ঘুমায়, খুটুর মুটুর করতে করতে কল্পনা করতাম বাসার পাশের ড্রেন দিয়ে ভাসতে ভাসতে লিলিপুটদের জাহাজটা চলে আসবে আর আমিই একমাত্র তাদের দেখতে পাবো। খাটের নিচে জুতার বাক্সে ওদেরকে ঘরবাড়ি বানিয়ে দিলেই আপাতত থাকতে পারবে। আর কেমন করে মামনির চোখের আড়ালে রাখা যায়, সেটা নিয়েও ব্যাপক চিন্তা করতে হতো।

'নোঙর ছেঁড়া' বইটা পড়ে খুব শখ হতো দলবল নিয়ে জাহাজে ভেসে জনমানবহীন কোন দ্বীপে হারিয়ে যাওয়ার। রবিনসন ক্রুসোর মত একলা যাওয়ার ইচ্ছা কখনো হয়নি। একলা কোন মজা আছে নাকি!

'গার্ল ফ্রম টুমরো' বা 'স্পেলবাইন্ডার' আমার অনেক পছন্দের সিরিয়াল ছিল। খুব স্বপ্ন দেখতাম একটা টাইম মেশিনের, যাতে করে আমি ট্রাভেল করতে পারবো...না, কখনো ভবিষ্যতে যাওয়ার ইচ্ছা হয় নি আমার। আমি যেতে চাইতাম টিপু সুলতানের মত রাজা-বাদশাহদের আমলে। এমনকি ব্রিটিশ আমলে যেয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার স্বপ্নও দেখেছি কত! অতীতের মানুষদের ভবিষ্যতের আধুনিক সব যন্ত্রপাতি, জামাকাপড়, চালচলন দেখিয়ে ভড়কে দেয়ার মজাই আলাদা।

ম্যারিয়েন হয়ে রবিন হুডের সাথে কত বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি! 'আলিফ লায়লা'র মত কত জাদুকর, দৈত্য-দানব নিয়েও কল্পনা করতাম।

কল্পনা করতাম মানুষের মনের কথা বুঝতে পারছি। তারা কোন কাজ করবার আগেই তাদের মনের কথা বলে দিয়ে খুব বোকা বানিয়ে দিচ্ছি।

যখন 'টুকুনজিল' পড়লাম আমার খুব শখ হয়েছিল ওইরকম ভিনগ্রহবাসী একটা বন্ধুর। আর তাকে দিয়ে মনে মনে কত কাজই না করিয়ে নিতাম! একবার পরীক্ষায় খারাপ করে টুকুনজিলকে দিয়ে পরীক্ষার খাতাটা ঠিক করানোর খুব শখ হয়েছিল। আফসোস সেটা সম্ভব হয় নাই!

এইরকমই ছোটখাটো, বড় সড় আরো কত রকমের কল্পনার জালই না বুনেছি একটা সময়ে। টেরাবিথিয়ার মত একটা নিজস্ব স্বপ্নরাজ্য আমারও ছিল, যেখানে আমি চাইলেই হারিয়ে যেতে পারতাম আর রঙ-বেরঙের স্বপ্ন দেখতে পারতাম।

এই লেখাটা আমার মেয়ের জন্য। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সে নিশ্চয়ই আমাদের তুলনায় অনেক আধুনিক হবে, খুব ছোট বয়সেই টেকনোলজির জ্ঞান তার হয়ে যাবে, যেকোন কিছুর কার্যকারণ সে জানতে পারবে। তারপরও, এসব কিছুর আগে তার শৈশবটা যেন নানা রঙের কল্পনায় রঙিন হয়ে থাকে। সে যেন স্বপ্ন দেখতে শিখে।
২৩টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×