জেস এবং লেসলি, দুই কিশোর-কিশোরীর গল্প নিয়ে সিনেমা Bridge to Terabithia. গ্রামের গরীব এক পরিবারের ছেলে জেস। বিশাল পরিবারের দায় কাঁধে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত বাবা, সারাক্ষণ বিরক্ত করতে থাকা বড় চার বোন, ইঁচড়ে পাকা স্কুলের বন্ধুরা...সবার চেয়ে জেস আলাদা। সে থাকে নিজের মনে, একা একা ঘুরে বেড়ায়, ছবি আঁকে, বিশাল খোলা মাঠে দৌড় প্র্যাকটিস করে। পুরো গ্রীষ্ম জুড়ে সে স্কুলের দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার জন্য প্র্যাকটিস করে গেল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে স্কুলে নতুন আসা মেয়ে লেসলির কাছে হেরে গেল জেস। লেসলি শহরের মেয়ে, তারা ধনী...তারপরও কেমন করে যেন ওদের দুজনের খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেল। ওরা নিজেদের একটা আলাদা জগৎ তৈরি করে নিল। বাড়ি থেকে বেশ অনেকটা দূরে, মাঠ পেরিয়ে, ছোট্ট একটা জলার ওপারের জায়গাটা হল তাদের কল্পনার রাজত্ব, টেরাবিথিয়া। তারা দুজন সেখানকার রাজা-রাণী। তাদের যুদ্ধ সব দৈত্য-দানব, রাক্ষস-খোক্কসের সাথে।
খুবই সাধারণ একটা সিনেমা। খুব চেষ্টা করা হয় নি দৈত্য-দানবগুলোর এ্যানিমেশন বাস্তবসম্মত করে তুলতে। অন্য চরিত্রগুলোও যে খুব ভাল অভিনয় করেছে, তাও না। তবে এই দুই কিশোর-কিশোরী তাদের ভূমিকায় ছিল অসাধারণ। আর এই আপাত সাধারণ, সাদামাটা সিনেমাটাই আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে। কতবার যে দেখেছি মুগ্ধ হয়ে! কারণ সিনেমাটা, জেস এবং লেসলি দুজনকেই আমার অনেক আপন মনে হয়েছে। আমার ছোটবেলাটা মনে করিয়ে দিয়েছে। এইরকমই কল্পনাপ্রবণ ছিলাম আমি আমার শৈশবে। কত কি অদ্ভুত কল্পনায় বুঁদ হয়ে থাকতাম সবসময়! কল্পনাগুলো এমন ছিল যে ভাবতে ভাবতে একটা সময় মনে হতো বুঝি সত্যিই এটা ঘটছে।
রহস্য পত্রিকায় একটা খবর এসেছিল, আমেরিকার কোন অঙ্গরাজ্যে নাকি পরী দেখা গেছে। ছোট্ট ছোট্ট পরীর ঝাপসা ছবিও দিয়েছিল। লোডশেডিং হলে জানালার গ্রীলে পা তুলে দিয়ে চাঁদের আলোয় কতদিন পরী দেখার চেষ্টা করেছি! টিংকার বেলের মত ছোট্ট ঝাপসা শরীরের পরীর সাথে বোধহয় দেখাও হয়েছিল কোন কোন দিন।
'গালিভার'স ট্রাভেলস' বইটা পড়ার সময় লিলিপুটদের দেখার খুব ইচ্ছে হতো। গরমের অলস দুপুরগুলোয় সবাই যখন ঘুমায়, খুটুর মুটুর করতে করতে কল্পনা করতাম বাসার পাশের ড্রেন দিয়ে ভাসতে ভাসতে লিলিপুটদের জাহাজটা চলে আসবে আর আমিই একমাত্র তাদের দেখতে পাবো। খাটের নিচে জুতার বাক্সে ওদেরকে ঘরবাড়ি বানিয়ে দিলেই আপাতত থাকতে পারবে। আর কেমন করে মামনির চোখের আড়ালে রাখা যায়, সেটা নিয়েও ব্যাপক চিন্তা করতে হতো।
'নোঙর ছেঁড়া' বইটা পড়ে খুব শখ হতো দলবল নিয়ে জাহাজে ভেসে জনমানবহীন কোন দ্বীপে হারিয়ে যাওয়ার। রবিনসন ক্রুসোর মত একলা যাওয়ার ইচ্ছা কখনো হয়নি। একলা কোন মজা আছে নাকি!
'গার্ল ফ্রম টুমরো' বা 'স্পেলবাইন্ডার' আমার অনেক পছন্দের সিরিয়াল ছিল। খুব স্বপ্ন দেখতাম একটা টাইম মেশিনের, যাতে করে আমি ট্রাভেল করতে পারবো...না, কখনো ভবিষ্যতে যাওয়ার ইচ্ছা হয় নি আমার। আমি যেতে চাইতাম টিপু সুলতানের মত রাজা-বাদশাহদের আমলে। এমনকি ব্রিটিশ আমলে যেয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার স্বপ্নও দেখেছি কত! অতীতের মানুষদের ভবিষ্যতের আধুনিক সব যন্ত্রপাতি, জামাকাপড়, চালচলন দেখিয়ে ভড়কে দেয়ার মজাই আলাদা।
ম্যারিয়েন হয়ে রবিন হুডের সাথে কত বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি! 'আলিফ লায়লা'র মত কত জাদুকর, দৈত্য-দানব নিয়েও কল্পনা করতাম।
কল্পনা করতাম মানুষের মনের কথা বুঝতে পারছি। তারা কোন কাজ করবার আগেই তাদের মনের কথা বলে দিয়ে খুব বোকা বানিয়ে দিচ্ছি।
যখন 'টুকুনজিল' পড়লাম আমার খুব শখ হয়েছিল ওইরকম ভিনগ্রহবাসী একটা বন্ধুর। আর তাকে দিয়ে মনে মনে কত কাজই না করিয়ে নিতাম! একবার পরীক্ষায় খারাপ করে টুকুনজিলকে দিয়ে পরীক্ষার খাতাটা ঠিক করানোর খুব শখ হয়েছিল। আফসোস সেটা সম্ভব হয় নাই!
এইরকমই ছোটখাটো, বড় সড় আরো কত রকমের কল্পনার জালই না বুনেছি একটা সময়ে। টেরাবিথিয়ার মত একটা নিজস্ব স্বপ্নরাজ্য আমারও ছিল, যেখানে আমি চাইলেই হারিয়ে যেতে পারতাম আর রঙ-বেরঙের স্বপ্ন দেখতে পারতাম।
এই লেখাটা আমার মেয়ের জন্য। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সে নিশ্চয়ই আমাদের তুলনায় অনেক আধুনিক হবে, খুব ছোট বয়সেই টেকনোলজির জ্ঞান তার হয়ে যাবে, যেকোন কিছুর কার্যকারণ সে জানতে পারবে। তারপরও, এসব কিছুর আগে তার শৈশবটা যেন নানা রঙের কল্পনায় রঙিন হয়ে থাকে। সে যেন স্বপ্ন দেখতে শিখে।
আলোচিত ব্লগ
=স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে আছে মন=

ঘাস লতা পাতা আমার গাঁয়ের মেঠো পথ, ধানের ক্ষেত
জংলী গাছ জড়ানো লতাবতী - আহা নিউরণে পাই স্মৃতির সংকেত,
রান্নাবাটির খেলাঘরে ফুলের পাপড়িতে তরকারী রান্না
এখন স্মৃতিগুলো পড়লে মনে, বুক ফুঁড়ে বেরোয় কান্না।
ফিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন
'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।