somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কার যে কখন সুর কেটে যায়

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভাদ্রর এলো হাওয়ার এক শেষ দুপুরে, বাইরের ঝা ঝা রোদটা যখন সোনালী ফিতের মত গাছের পাতায় ঝুলে পড়ছিল, দুপুরের ঘুম শেষে আড়মোড়া ভাঙতে শুরু করেছে রাস্তার নেড়ি কুকুরটা, আলস্য কাটিয়ে জেগে উঠছে পুরো পাড়া, ঠিক এমনি এক দুপুরে পাগল হয়ে গেল লুৎফা। পুরো বাড়ি আর পাড়ার সবাইকেই হতচকিত করে দিয়ে পাগলের মত হাসিতে লুটোপুটি খেতে লাগল সে।

লুৎফাকে এইভাবে হাসতে বহুদিন দেখে নি কেউ। এইভাবে কেন, তার মুখের মিষ্টি মুচকি হাসিটাও বহুদিন কারো চোখে পড়ে নি। বারান্দা সংলগ্ন ছোট পিড়েটায় পা এলিয়ে এলোচুলে বিষন্ন মুখে বসে থাকে সে, সারাদিন, সন্ধ্যা...সন্ধ্যা পেরুলে মা এসে চেচামেচি করলে তার টনক নড়ে। ধীরে ধীরে উঠে পা বাড়ায় ঘরের দিকে। এই তার নিত্যকার কাজ। কবে থেকে সে এমন নিরব হতে শুরু করেছিল তার হিসেব নেই। হবে হয়তো তিন মাস, চার মাস, পাঁচ কিংবা ছয় মাসও হতে পারে। স্কুল ছাড়ার পর বান্ধবীরা আসতো মাঝে সাঝে, কিন্তু লুৎফা যেন তাদের এড়াতে পারলেই বাঁচে। হতাশ হয়ে একসময় তারা বন্ধ করে দিল আসা। ছোট ভাইটা খেলতে ডাকে রোজকার অভ্যাস মত, কিন্তু লুৎফা ছোট্ট একটা বিষন্ন হাসি দিয়ে ওকে ফেরায়। কতদিন হল সেও আর ঘেঁষে না তার আশে পাশে। শুধু মা, একমাত্র মা-ই অক্লান্তভাবে চেঁচিয়ে যান, বকেন, শাসন করেন; শান্ত, বিষন্ন লুৎফাকে আবার অবাধ্য, জেদী, বাঁধনছেঁড়া করে তুলতে চেষ্টা করে যান।

তাই লুৎফা যখন পাগল হয়ে গেল, পৃথিবী কাঁপিয়ে হেসে উঠল, সবার আগে তার মা-ই ছুটে এলেন। কিছুক্ষণ বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে থেকে তিনি চাপা গলায় গর্জে উঠলেন, 'চুপ চুপ। একদম চুপ।' লুৎফা আচমকাই চুপ হয়ে যায় চাপা গলার সে গর্জন শুনে। চোখ বড় বড় করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর আবার দুলে দুলে হেঁচকি তুলে তুলে হাসতে শুরু করে। একে একে লোক জমে যায় তাদের বাড়ির সীমানায়। ভাত ঘুম ভেঙ্গে উঠে আসা মহিলারা একে অপরের গা টিপে মুখ টিপে ঠারে ঠোরে কথা বলতে শুরু করেন। এইসব কানাঘুষো অনেক দিন ধরেই চলছিল অবশ্য। এত উচ্ছল, প্রাণচঞ্চল, হাসি-খুশি মেয়েটা হঠাৎ করে এমন নিরব হয়ে গেল কেন! মফস্বলের ছোট্ট পাড়ায়, যেখানে সকলের হাড়ির খবর সবাই জানে, সেখানে এই নিয়ে কান কথা উঠবে এটাই স্বাভাবিক। তারপরেও লুৎফার বাবা একজন সম্মানিত পুণ্যবান মানুষ ছিলেন, সেই অজুহাতে তারা এতদিন রেহাই পেয়ে এসেছে। মুখের উপরে কেউ কিছু বলবার সাহস পায় নি। কিন্তু আজ যখন লুৎফা তাদের মান-সম্মানের কথা চিন্তা না করে, পাছে কি বলবে তাই নিয়ে না ভেবে ফেটে পড়ল, তখন অন্যেরাই বা কেন আর রাখ ঢাক করবে! তাই তারা বহুল চর্চিত চর্বিত সেই নোংরা কথাগুলো আবার বলতে শুরু করেন।

'হ্যাঁরে ভাই, এমনি এমনি কি আর একটা মেয়ে এমন হয়ে যায়! বিনা কারণে! কাহিনীতো কিছু আছেই।'
'আরে থাকবে না, অমন ছটফটে পাড়া বেড়ানো মেয়ে!'
'হ্যাঁ ওই যে তার ঢাকা শহরে থাকা দুঃসম্পর্কের খালাতো ভাইটা!'
'চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলা প্রাইভেট টিউটর!'
'কলেজের বখাটে ছেলেটা!'
'নতুন আসা প্রফেসর!'
'...............'
'............'
'.........'
'......'

লুৎফা পাগল হয়ে গেল। কেউ জানল না কি কারণ, কিন্তু জল্পনা-কল্পনা করতে কেউ ছাড়লও না। হ্যাঁ লুৎফা একজন মেয়েই কিনা, বেশ সুন্দরী, চঞ্চল, ছটফটে, মিশুক, হাসিখুশি, সাবলীল, কথায় কাজে জড়তা নেই...এসব কে কোন কালে গুণ বলে মেনে নিয়েছে? প্রত্যেকটাই তার দোষ, একদম গায়ে ছাপ মারা দোষ। তাই পাগল হয়েও লুৎফার রেহাই নেই। অন্য কথায় বলতে গেলে পাগল হয়েছে বলেই লুৎফা রেহাই পেল না।

লুৎফা অত্যন্ত সংবেদনশীল, সূক্ষ্ম অনুভূতির মেয়ে। তার পছন্দ-অপছন্দ, ভাল লাগা, মন্দ লাগা অত্যন্ত চড়া সুরে বাধা। তার ভাল লাগার ব্যাপারগুলোয় তার বাধ ভাঙা উচ্ছাস ছিল। মন্দ লাগার ব্যাপারগুলোয় কড়া আপত্তি, প্রতিবাদ। মেয়েরা এমন হয় না, হতে নেই। কিন্তু লুৎফা হয়েছিল। বাপের কাছে একটু বেশিই আহ্লাদ পেয়েছিল মেয়েটা। তাই অতি আদরে বাঁদর হয়েছে। তার মা রাগ করে বলেন। যদিও বড় মেয়ের প্রতি তাঁর নিজেরও একটা অন্যায় পক্ষপাত ছিল বরাবর। সব মায়েরই থাকে। যা নিজে তিনি পান নি, করতে পারেন নি, তা মেয়ের মাধ্যমে পূরণ করতে চান। নতুন করে স্বপ্ন দেখেন। লুৎফার মাও দেখতেন। কড়া শাসনের আড়ালে তাই সূতোটা ঢিল দিয়েছিলেন অনেকখানিই। লুৎফাও জানতো সেটা ভালভাবেই। তাই বাবাকেতো বটেই, মাকেও তার খুব একটু ভয় ডর ছিল না।

লুৎফার দুঃসম্পর্কের খালাতো ভাই মারুফ ঢাকা থেকে এসে যখন অভিমানে নিশ্চুপ দেখেছিল, সবার আগে সেই চিন্তিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বিদ্বান ছেলে, অন্যদের চেয়ে সে বেশি বুঝবে এটাইতো স্বাভাবিক। তার খালাকে বলেওছিল, লুৎফাকে একবার ডাক্তার দেখানো দরকার। কিসের ডাক্তার? না, শরীরের সমস্যা না, মনের। লুৎফার মা উপরে উপরে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন আর মনে মনে হয়েছিলেন বিরক্ত। বেশি জোরাজুরিতে শুধু বলেছিলেন, 'আমাদের কি ওইসব বিলাসিতা করলে চলে বাপ! মনের আবার অসুখ কি? লুৎফার শরীর-স্বাস্থ্য মাশাল্লাহ ভাল আছে। সেইটা থাকলেই হইল।' না, মনের অসুখ হয় না বটে। মন নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলে। শরীরটাই সব। শরীর-সর্বস্ব চিন্তা-ভাবনায় আক্রান্ত মফস্বলের মধ্যবিত্ত মন। কিন্তু মন ভাল না থাকলে কি আর শরীর ভাল থাকে!

মারুফ এসে ঘুরে যাবার পর থেকেই লুৎফা যেন একটু বেশি উদাস হয়ে গেল। অকারণেই হাসে, মাঝে মাঝে চুপ করে বসে থাকে, কখনো আবার লুকিয়ে কাঁদেও। খাওয়া-দাওয়াতেও খুব অনিয়ম, শরীর শুকিয়ে গেছে, চোখের কোলে কালি। লুৎফার মা মেয়ের হাব-ভাব দেখেন আর ভিতর ভিতরে খুব গজ গজ করেন। তবে এটাও ঠিক এসব তিনি নিজে যতটা না দেখেছেন শুভাকাংখী পাড়া-প্রতিবেশীরা তারচেয়ে বেশি দেখেছিল। সতর্ক করেছিল তাঁকে। তিনিও মনে মনে ভাবেন ছেলেটাকে নিজের লোক ধরে নিয়েই বিশ্বাস করেছিলেন, সেই কিনা মেয়েটার মাথা খেল! লুৎফার মা ধরেই নেন কিশোরী লুৎফার মন উচাটন হয়েছে, রঙ লেগেছে। ঢাকার ছেলের চটক দেখে চোখে ধাঁধা লেগেছে। ওসব কিছু নয়, কয়দিন চোখের আড়াল হলে আপনিই সেরে যাবে। গেলও বটে। দিন পনর না ঘুরতে লুৎফা আবার যা ছিল তাই। লুৎফার মাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। নিজেদের মধ্যে এইসব কেলেংকারি ভাল জিনিস না। পরিবারের সুনাম বলে একটা ব্যাপার আছে। আর মেয়েটাতো মাত্রই স্কুলে পড়ে। এখনও বহু দূর যাওয়ার বাকি। মেয়েকে নিয়ে তিনি নিজের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো দেখেন।

সামনের বছর এসএসসি দিবে মেয়েটা। নিজেতো বেশি দূর পড়তে পারেন নি। মেয়ে যেন অন্তত গ্রাজুয়েসন করতে পারে। নিজে নিজে কতটুকু আর পড়বে! তাই তার জন্য একজন টিউটর রেখে দিলেন বাধ্য হয়েই। স্বামী বেঁচে থাকলে কি আর তাঁকে এসব নিয়ে ভাবতে হতো! বাবার কাছেই লুৎফা পড়তে পারতো। সে ভাগ্যতো আর হল না মেয়ের। লুৎফার টিউটর ছেলেটা এমএসসি পাস করেছে সবে, এখনও চাকরি-বাকরি পায় নি কিছু। অবশ্য লুৎফাকে একা ছেড়ে দেন নি তিনি ওই চ্যাংড়া ছেলের হাতে। পাহারাদার হিসেবে ছোটভাইটাও আছে। শফিক বাড়িতে আসা-যাওয়া শুরু করতেই লুৎফার মধ্যে পরিবর্তন আসতে লাগল। নিজের প্রতি একটু বেশি মনোযোগী, সৌন্দর্য সচেতনতা বৃদ্ধি, কাজে-কর্মে চপলতা, একটু বেশি সচকিত, আর উদাস। মনের ভুলেই সে গুণগুণিয়ে গান গায়, হাসে, সলাজ চোখে স্বপ্ন আঁকে। লুৎফার মা এসব বোঝেন। এই বয়সতো তিনিও পার করে এসেছেন। তবে পাশের বাড়ির ভাবি তাঁকে এই বলে সতর্ক করেন সূতোটা টেনে ধরতে যেন ভুল না হয় তাঁর। তাই মেয়েকে কথার ছলে কড়া করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সে যেন কোন ভুল না করে। কম বয়সে চোখে কত রঙিন স্বপ্নই ভাসে। ওইসবে ভেসে গিয়ে ভুল করলে চলবে না লুৎফার। তার বাস্তবটা অতো রঙিন নয়।

মেয়ের ভালর জন্যই টিউটর রেখেছিলেন। কিন্তু মেয়ের ভাবগতিক সুবিধার না দেখেই আবার ছাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। শুধু মেয়েই কি, ছেলেটাও বড় বেয়াড়া চলছিল। তাঁর মেয়ের মত দেখতে সুন্দর, হাসি-খুশি, পাগলাটে একটা মেয়েকে এই বয়সের একটা ছেলে ভালবেসে ফেলবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তিনি অবাক হন নি, হতাশ হয়েছেন, মন খারাপ করেছেন। কিভাবে সামলাবেন এই মেয়েকে, কিভাবে তাকে নিয়ে এতটা পথ পাড়ি দিবেন! স্বামীও নেই যে তাঁকে ভরসা করে এই উত্তাল ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেয়া সম্ভব।

এত কিছু করেও শেষ রক্ষা হল না। লুৎফা পাগল হয়েই গেল। ভাদ্রর উদাস দুপুরে লুৎফার মাথা বিগড়ে গেল পুরোপুরি। কবে থেকে তার মাথার ভিতরের যন্ত্র-পাতি উল্টো-পাল্টা আচরণ করছিল এত চেষ্টাতেও তার হদিস করতে পারলেন না, লুৎফার পাগল হওয়া ঠেকাতে পারলেন না।

অবশ্য লুৎফার স্কুল সংলগ্ন কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া একটা বখাটে ছেলের কথাও ওর বান্ধবীরা সময়-অসময়ে বলেছে। সেই ছেলে নাকি পথে-ঘাটে মেয়েকে বিরক্ত করতো, আজে বাজে কথা বলতো, কুপ্রস্তাব দিতো। তার মেয়ে নাকি সেই কুকুরের ভয়ে কুঁকড়ে থাকতো স্কুলে যাওয়া-আসার পথে। কত দিন সে পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, কাল্পনিক জ্বরের অজুহাতে স্কুলে যেতে চায় নি। তিনি কোনদিন এসবে কান দেন নি, মেয়েতো তাঁকে এসব কোনদিন এসে বলে নি। তিনি শুনেছেন লোকের মুখে, তার বান্ধবী, স্কুলের শিক্ষক, পাড়া-প্রতিবেশী। তাই স্কুল যাতে কামাই না হয় সে ব্যাপারে ছিলেন কড়া। তাহলে কি সেই ছেলেই! তার ভয়েই লুৎফা যখন তখন লুকিয়ে কাঁদতো? নাকি স্কুলের নতুন অংকের শিক্ষক? যে কিনা কারণে অকারণে লুৎফার গায়ে হাত দিতো? নোংরা চোখে তাকাতো! লুৎফার মা ভেবে পান না। এত ছলবলে মেয়েটা এত বেশি চাপা ছিল চিন্তাই করা যায় না! ঠিক বাপের মত, বাপ কা বেটি! অক্ষম রাগে তিনি ফোসেন শুধু। মেয়েকে একটা নিশ্চিত নিরাপদ ভবিষ্যৎ দেবার আগেই কেন তিনি চলে গেলেন? তিনি কি জানতেন না মেয়েটা কতটা নির্ভর করতো তাঁর উপরে? বাপ ছাড়া মেয়ে আর কিছু বুঝতো না। অত বড় ধাড়ি মেয়ে, তবু বাপের গলা জড়িয়ে তার ঘুমানো চাই, বাপের হাতে ছাড়া সে ভাত খাবে না, স্কুলে যাবে না একা একা, পড়তে বসবে না। বাপকে ছেড়ে কোনদিন সে শ্বশুর বাড়িও যাবে না বলে পণ করেছিল। লুৎফার বাবাও বলেছিলেন দরকার হলে ঘর জামাই রাখবেন, তবু মেয়েকে পরের ঘরে পাঠাবেন না। এত ভালবাসেন যে মেয়েকে তাকে রেখেই কিনা তিনি বিনা নোটিসে হুট করে চলে গেলেন!

আর মেয়েও যেমন। এত ভালবাসে যে বাপকে তার মরা মুখের দিকে চেয়ে এক ফোঁটা চোখের পানি সে ফেলল না! বাপের স্মৃতিগুলো একবারও নড়াচড়া করে দেখল না, বহু যত্নে যে পড়ার টেবিল, বই-পত্র সে রোজ ঝেড়ে মুছে রাখতো তাতে ধুলো জমলেও মেয়ে আর ফিরে তাকাল না। সযত্নে বাবার ব্যবহার করা কাপড়-জামা সে চোখের আড়াল করে ফেলল। যেন মুছে ফেলল চিরতরে সেই মানুষটাকে নিজের জীবন থেকে। লুৎফা খুব অনুভূতিশীল মেয়ে, খুব অভিমানী। এমন অভিমান সে করল বাবার উপরে যে তাকে ভুলতে প্রাণ-পণ করে বসল যেন!

কিন্তু তারপরেও অন্য সব কিছু নিয়ে সেতো ব্যস্তই ছিল। বাবা নেই, সেই প্রভাবটা খুব যে পড়েছিল লুৎফার উপরে কখনো মনে হয় নি। বরং সে নিত্য নতুন এর প্রেমে পড়া, তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা এসবেই যেন ব্যস্ত ছিল। অবশ্য ব্যস্ত থাকলেই যে তাদের ব্যাপারে খুব একটা সিরিয়াস ছিল তাওতো নয়। কত সহজেই সে একজনকে ভুলে আরেকজনকে মনে স্থান দিতে শিখেছিল! পাড়া-পড়শীর কানাঘুষা, কটুক্তিতে কান দেবার মেয়েই সে নয়। মায়ের কড়া শাসনের তোয়াক্কাও করতো না। তাহলে কি এমন হল যে লুৎফা ধীরে ধীরে নিরব হয়ে গেল? সে আর হাসে না আগের মত, তার মুখে কথার ফুলঝুড়ি ফোটে না, হই চই এ পাড়া মাতিয়ে তোলে না। স্কুলে যাওয়াও তার বন্ধ হয়ে গেল, পড়ালেখাও। লুৎফার বন্ধুরা দল বেধে এসএসসি পরীক্ষা দিতে গেল। বারান্দায় বসে সে উদাস চোখে দেখল, কোন বিকার নেই সেই চোখে। মায়ের সাথে সে আর আগের মত ঝগড়া করে না মুখরা মেয়ের মত, নিরবে মেনে নেয় তাঁর দেয়া সমস্ত অপবাদ। তাঁর কোন চেষ্টা, বকুনি, মার, কড়া কথা কিছুই আর আগের লুৎফাকে ফিরিয়ে দেয় না।

আর সবাই হতাশ হলেও লুৎফার মা হন নি। তিনি আশা করেছিলেন তাঁর মেয়ে ভাল হয়ে যাবে, আবার আগের লুৎফা ফিরে আসবে। ভাদ্রর এলো হাওয়ার অলস দুপুরটার আগ পর্যন্ত তিনি সেই আশায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই চেষ্টা সফল হল না শেষ পর্যন্ত। লুৎফা পাগল হয়ে গেল! কেউ জানল না কোন দুঃখে তার মন ভেঙে চুড়মাড় হয়েছিল। কেউ জানল না কি তার মনের অসুখ!

শুধু লুৎফার ঠা ঠা হাসিতে উড়ে গেল ঘরের চালার কাক, ছেড়ে দেয়া স্প্রিং এর মত লাফিয়ে পালিয়ে গেল নেড়ি কুকুরটা রাস্তা ছেড়ে, বাড়ির সীমানায় জড়ো হল উৎসুক মানুষ, যারা লুৎফার পাগলামির তত্ত্ব তালাশ করছিল, যাদের কথা শুনলে কে পাগল তাই ঠাহর করা কঠিন! লুৎফার গল্পটা কারোই জানা হয়ে ওঠে না। অতি কৌতূহলী উন্মাদ জনতা লুৎফার পাগল হবার কারণ জানার আগ্রহে পৌঁছে যায় তারই সমপর্যায়ে। কখনো হয়তো কোন উৎসুক সাংবাদিকের কলামে লুৎফার পাগল হবার খবর ছাপা হয়, কিংবা কোন লেখকের অসমাপ্ত গল্পে থাকে তার নাম!
৫৩টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×