somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন গণিতের হিসেব

১৮ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জ্যামেতির জ্যা আর গণিতের গ এর প্রতি আমার সেই ছোট বয়স থেকেই প্রবল ভীতি। যোগ,বিয়োগ,গুণ,ভাগ কিছুটা সহজ ভাবে পারলেও পাটিগণিত আর জ্যামেতিতে এক্কেবারেই কাঁচা।পড়াশুনা শিকেয় তুলেছি অনেকদিন,কিন্তু পাটিগণিত আর জ্যামেতি টা তেমন করে পাঁকে নি যতোটা পাকা দরকার ছিলো। একেবারে কাঁচাই রয়ে গেছে। পাটিগণিতে এমন অবস্থা দেখে ক্লাসের ম্যাম বারবার বলতেন তুই তো আদুভাই হয়ে থাকবি দেখছি। ম্যামের কথা শুনে কিসের কি!
ক্লাসে আদু ভাই হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়া ভালো। আদু ভাই হবার ভয় একেবারে জোঁকের মতো চেপে বসেছিলো ক্লাস সেভেনের একবছর। কারন আমি জানি আদু ভাই ক্লাস সেভেন পাশ করতে করতেই তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে গেছে। তাই এই ক্লাস সেভেনের ক্লাস ডিঙ্গিয়ে ওপারে যাওয়া মানে ক্লাস এইটে ওঠা আমার জন্য স্বর্গ পাবার মতো ঘটনা। যে করেই হোক আদু ভাই হয়ে তো আর জুনিয়রদের সাথে ক্লাস সেভেনেই পড়া যায় না? আদা-জল-নুন খেয়ে লেগেছিলাম পাটিগণিত আর জ্যামেতি শিখতে। দিনে দুবার কোচিং এ যাই অংক শিখতে আর বাসায় বসে বিছানার উপর দু ঠেং মেলিয়ে বইয়ের এক অধ্যায় থেকে আরেক অধ্যায় অংক কষি। দোয়া দরুদ কতো পড়েছি তার ইয়াত্তা নাই ক্লাস সেভেনের এই একবছর।বার্ষিকে অংক পরিক্ষা দিয়েই স্কুলের মসজিদে গিয়ে নফল নামাজ পড়েছি যেন অন্তত এইবার গণিতে পাশ নম্বর ওঠে। নইলে তো নিশ্চিত আদু ভাই! তবুও গোবর ভরা মাথায় সব কিছু ঢুকলেও এই পাটিগণিতের আর জ্যামেতির হিসেব-নিকেশ কিছুতেই ঢুকাতে পারিনি। তবে এক ধাক্কায় কেমন করে জানি আদু ভাইয়ের বদনাম থেকে রেহাই পেয়ে গেলেম। অংকে পাশ নম্বর উঠলো। আমারে আর পায় কে? মন মেজাজ সেই ফুরফুরে! কারন এখন থেকে কেউ আর আদু ভাইয়ের তোকমা গায়ে লেপ্টে দিতে সাহস করবে না।
আসলে এসব হিসেব-নিকেশ বড়োই কঠিন বিষয়।যে বোঝে সে তরতর করে উপরে উঠে যায়,আর আমার মতো গোবরে মাথাগুলো পড়ে থাকে ভাগাড়ে। অবশেষে ক্লাস নাইনে উঠে অন্তত পাটিগণিতের বোঝা মাথার উপর থেকে ঝেটিয়ে বিদেয় হলো।কিন্তু জ্যামেতির যা অবস্থা তাই রয়ে গেলো! বীজগণিতের সূত্র একেবারেই ঠোটস্থ ছিলো আমার।কিন্তু খাতার পাতায় বীজগণিতের সকল সূত্র কাজে দিলেও জীবনের খাতায় ওসব ধোপে টেকে না।সেখানে পাটিগণিতের সেকি দাপুটে অবস্থান! আর জ্যামেতির আঁকিবুকি এদিক-ওদিকের হিসেব তো একেবারে লেপ্টে থাকে। ক্লাস নাইন-টেনে বীজগণিত একেবারে বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাঁড়ি-কমা মুখস্ত।এসএসসি পরিক্ষার দিন সেই দাপটে হলে ঢুকেই মাথায় হাত; বীজগণিত,ত্রিকোণমিতি সবই তো পারি কিন্তু পাটিগণিতের আদলে পরিমিতি আর জ্যামেতির কি হবে? রেজাল্টে যা হবার তাই হলো! পরিমিতি আর জ্যামেতিই যতো নষ্টের গোড়া।সবটা থেকে বঞ্চিত করলো আমার চিন্তা-চেতনাকে। ফুল নম্বর তুলতে দিলোনা কিছুতেই। আজও এই পরিমিতি,জ্যামেতির বিদঘুটে দাগের এদিক ওদিকের হিসেব বুঝি না।আমার মগজে যা যায় তা হলো সহজ সরল হিসেব।প্যাঁচ-পুচের জিনিস ধরতে পারি না।আর তাই তো জীবনের হিসেব খাতায় বারবার ফেল করি,মুষড়ে পড়ি,আহত হই। ক্লাস সেভেন ডিঙ্গিয়ে আদু ভাইয়ের পদবী দূর করতে পারলেও জীবনের ক্লাসে সেই আদু ভাই হয়েই রয়ে যাচ্ছি।কারন এখানে সবটাই পাটিগণিত আর জ্যামেতির মতো প্যাঁচ-পুচে ভরা।জিলেপির আর বাংলার ৫ এর মতো বড্ড অ-স্বস্থিকর।এখানে বীজগণিতের সূত্রের মতো ধাচে ফেললেই অংকের হিসেব মেলে না। হিসেব মেলাতে জ্যামেতির এদিক-ওদিক রেখা,জ্যা,পরিধি,বিন্দু সবই বুঝতে হয়।জানতে হয় কোন দিকটায় যেতে হবে।আকাশ-বাতাস,বাতাসের গতি সবই জানতে হবে।কোন রেখায় গেলে বিন্দুতে মিলবে,কোণ উৎপন্ন হবে,হলে কোণের কতো ডিগ্রি হবে সবই জানতে হয় বুঝতে হয়।না বুঝলেই আদু ভাই নিশ্চিত !
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৪
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×