somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশু শিক্ষার হালচাল

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


''সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,
সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি''
অথবা,
''পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইলো,
কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিলো''
আমার শিক্ষা জীবনের শুরুটা ''আদর্শ লিপি'' নামক লাল মলাট ওয়ালা কয়েকটি পাতার
বইয়ের এসব ছড়া মুখস্ত করেই হয়েছিলো।শুধু আমার একার না অনেকেই আদর্শ লিপি বইয়ের
এসব ছড়া পড়েছেন কমবেশি।সকাল সকাল উঠে বারান্দায় অথবা উঠানে পাটি বিছিয়ে আমার
মা এসব পড়াতেন।পড়া না পারলে সাথে পিটুনি ছিলো উপুরি পাওনা।
পড়া শেষ হলেই কেবল সকালের খাবার জুটতো কপালে।পড়া শেষে গোসল দিয়ে স্কুলের
উদ্দেশ্যে পাড়ি জমানো।সে সময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া এতো এতো কেজি বা
বেসরকারি স্কুল ছিলো না বললেই চলে।আমার স্কুলের বই বলতে তখন ছিলো শুধু ঐ আদর্শ
লিপি।দুপুর পর্যন্ত স্কুল থেকে বাড়ি, বিকালে খেলা আর সন্ধ্যার পর হাতমুখ ধুয়ে
পড়তে বসা।অবশ্য যখন একটু বড় ক্লাসে উঠেছিলাম তখন প্রাইভেট শিক্ষকের জন্য আলাদা
একটু সময় বরাদ্দ রাখতে হয়েছিলো।আবার বড় ক্লাসে ওঠার সাথে সাথে খেলাধুলা আর
স্কুলে যাওয়া আসার সময়ের সাথে কিছুটা তারতম্য হয়েছিলো যদিও, তারপরেও খুব সকালে
ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসা আর সন্ধ্যার পর হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বসা ,এই নিয়মটা দশম
শ্রেণী অবধি চালিয়ে যেতে হয়েছে।নিয়মের ব্যতয় ঘটলেই উপুরি পাওনা মানে মায়ের
হাতে বেতের বাড়ি।
সে যাই হোক ,এতো গেলো আমার ছোটবেলার পড়ার চিত্রপট।এখন আসি বর্তমান শিশু
শিক্ষার ক্ষেত্রতে।যদিও আমার শৈশব সময় থেকে বর্তমান ছেলে মেয়েদের শৈশব সময়ের
ব্যবধান খুব যে বেশি তা কিন্তু নয়।আমিও বর্তমান প্রজন্মেরই একজন, তবুও এই
খানিক সময়ের মধ্যে একটা সুষ্পষ্ট, সু-দীর্ঘ পার্থক্য বিদ্যামান।অনেকে হয়তো
বলবেন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হচ্ছে।আগের দিনের ওসব আদর্শ লিপি পড়ে এখন
চলা যাবে না, যুগ অনেক এগিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য বলতে চাই আপনাকে আমি আদর্শলিপি
পড়ানোর কথা বলছি না।আপনি আপনার সন্তান কে আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়েই এগিয়ে
নিন সমস্যার কিছু নেই।তবে আমি যেটা বলতে চাচ্ছি তা হলো আমরা কি যুগ কে এগিয়ে
নিচ্ছি নাকি যুগই আমাদের এগিয়ে নিচ্ছে? এতো আমার দৃষ্টিতে লেজ কুকুরকে নাড়ানোর
মতো ব্যপার।আমি যুগের বা সময়ের সাথে অবশ্যই এগিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতি।কিন্তু
এগিয়ে যাওয়ার নামে নিজেদের নীতি,নৈতিকতা,শৃষ্টাচার ,সৌজন্যবোধ হারানোর পক্ষে
নই।
আজকাল ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের আর সেই সকালে উঠে হাত মুখ ধুয়ে পড়তে দেখি
না।মায়েদের সকাল সকাল ঘুম থেকে ছেলে মেয়েকে জাগিয়ে পড়তে বসানোর পরিবর্তে ভোর
৬টার সময় স্কুলে পাঠানোর দৃশ্যটি চোখে পড়ে।আরো অবাক করার মতো ব্যপার হচ্ছে ঐ ৪
বছরের শিশুটির পিঠে ৫ কেজি ওজনের একটি স্কুল ব্যাগ থাকে এবং ব্যাগের সাইজ ঐ
শিশুটির সাইজের থেকে কয়েক গুন বড়।শিশুটি পিঠে ব্যাগটি বহন করতে পারে না বিধায়
অগত্যা সাথে তার মাকেও স্কুলে যেতে হয়।বলি কি দরকার এসবের?কিছু দিন আগে
স্কুলের ব্যাগের ওজনের ব্যাপারে হাইকোর্টে একটি রায় হয়েছে।রায়ে অতিরিক্ত ওজন
বহনের ফলে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কি ধরনের অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছে সেটা
পর্যবেক্ষন করা হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।তারপর স্কুলে গিয়ে তো
এক অসম প্রতিযোগীতা ।এ প্রতিযোগীতায় অবশ্য শিশুদের অংশ নিতে হয়না।বরং যার যার
মায়ের দায়িত্বটাই থাকে প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার।যে শিশুটি
ঠিকমতো অ,আ,ক,খ উচ্চারনটি ও ঠিকমতো করতে পাচ্ছে না, বা তার কষ্ট হচ্ছে (কেননা
৪বছর বয়সে ওটা আমরাও পারিনি,কিন্তু আমার শিশুটিকে সেটা মুখস্ত করতেই হবে)
সেখানে তাকে মুখস্ত করতে বাধ্য করছি ''Twinkel twinkel lettle star''।আবার
শিশুটি ক্লাসে ১ নম্বর অন্য শিশুটির থেকে কম পেয়েছে দেখে লজ্জায় তো মাথা
হেট।বাসায় এসে আচ্ছামতো বকুনি।ঐ ১ নম্বর অর্জনের জন্য শিশুটিকে আরো একটি
প্রাইভেট টিওটর ।শিশুটিকে যে প্রত্যেক টি বিষয়ে ১০০করে নম্বর পেতেই হবে।
আরে ৪ বছরের একটা শিশুর যখন ৪টা প্রাইভেট টিউটর লাগে তখন আর বলার কিছু থাকে
না।আবার স্কুল শেষে ঐ ৪ বছরের শিশুটির দম ফেলবার ফুসরত নেই।তাকে প্রতিদিন
স্কুল ও চার ৪টা প্রাইভেট টিউটরের মোকাবেলা করতে হয়।
খেলাধুলা! না না ওসবের দরকার নেই।ছেলে কি আমার সাকিব আল হাসান হবে নাকি? ওসবের
কোন দরকার নেই।এমনই মনোভাব অধিকাংশ অভিবাবকদের।ক্রিকেটারের পরিবর্তে ছেলে বা
মেয়েকে যে, নামকরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে!তা না হলে সমাজে,
আত্নীয়-স্বজনদের কাছে মুখ দেখাবো কি করে।আর তার জন্য আগে থেকেই যেন মেডিকেল বা
ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স পায় তার প্রাকটিস করাচ্ছি ৪বছর বয়স থেকেই।
৪ বছরের একটি কোমলমতি শিশুর সেরা শিক্ষক হতে পারেন একমাত্র তার মা।কোন
বেতনভুক্ত শিক্ষক তার আপন হওয়ার ধারে কাছেও যেতে পারবে না।
একটি প্রতিযোগীতামূলক পরিক্ষার প্রশ্নত্রের ক্ষেত্রে ৪র্থ শ্রেণী পড়ুয়া একজন
অভিবাবকের কাছে অভিযোগ শুনেছিলাম ।অভিযোগটি ছিলো এরকম “ আপনারা তো পরিক্ষার
প্রশ্নে কুমড়ো ফুলের রঙ জানতে চেয়েছেন।কিন্তু ওটাতো ওদের সিলেবাসে নেই ।আমার
ছেলে তো কুমড়ো ফুলের রং কি লিখতে পারবে না।ও তো জানেই না কুমড়ো ফুলের রঙ কি?”
উত্তর কিভাবে দিবো বুঝতে পারছিলাম না।তাকে যখন পালটা প্রশ্নে বললাম এটা জানার
জন্য কি স্কুলের সিলেবাস নির্ভর হতে হয়।এটা তো সবারই জানার কথা।
কি আজব চিন্তা ভাবনা!
আবার শিশুকে শিখিয়ে বা শাসনের সুরে বলছি এবার তোকে ফাস্ট হতেই হবে।ওমুক তমুক
কেন তোর থেকে বেশি নম্বর পেলো।
আমার কথা হচ্ছে শিশুকে ভালো কিছু করার জন্য উৎসাহ দেয়া ভালো,তবে উৎসাহ দেয়ার
নামে শিশুর কোমল হৃদয়ে অতি সূক্ষভাবে হিংসার বীজ রোপন মোটেও কাম্য নয়।
এই যে ফাস্ট হওয়ার প্রতিযোগীতার নামে ছোটবেলা থেকেই হিংসার মনোভাব শেখাচ্ছি
তাতে করে তার কোমল হৃদয়ে কিন্তু অনেক ছোট থেকেই হিংসাত্বক মনোবৃত্তি গড়ে
উঠছে।যার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে ঐ শিশুটি যখন বড় হয়ে সমাজ ব্যবস্থাপনায় নিজের
একক কর্তৃত্ব বজায় রাখতে বিভিন্নভাবে অনৈতিক বা সামাজিকতার বিরুদ্ধ কাজে
নিজেকে নিয়োজিত করে।তার ভীতরের নীতি,নৈতিকতা বা সহনশীলতার পরিবর্তে স্থান পায়
হিংসা।যা সত্যিই আমাদের জন্য অনাকাঙ্খিত ।




(পুরনো লেখা)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৫৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×