somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেয়ারবাজার নিয়ে ভয়ের কারণ নেই

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের শেয়ারবাজারে গতকাল মঙ্গলবার ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। সূচক কমেছে দুই স্টক এঙ্চেঞ্জেই। দুই বাজারেই লেনদেন হওয়া কম্পানিগুলোর মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশের দাম কমেছে। তবে কিছুদিন ধরে চাঙ্গা থাকার পর হঠাৎ এই দরপতন ঘটল। তাই বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলেছেন, এ হচ্ছে মূল্য সংশোধন এবং তা 'প্রত্যাশিত' ও 'স্বাভাবিক প্রবণতা'। এতে বিনিয়োগের ঝুঁকি কমেছে। বাজার স্থিতিশীলতা ফিরে পেয়েছে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল এক দিনেই সাধারণ সূচক কমেছে প্রায় ১৮৬ পয়েন্ট। এটি চলতি বছরের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ পতন। এর আগে ২৫ জুলাই ডিএসইর সাধারণ সূচক এক দিনে ২০৫ এবং ১০ অক্টোবর ১৮৮ পয়েন্ট কমেছিল। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জে (সিএসই) গতকাল এক দিনে সার্বিক মূল্যসূচক কমেছে ৫০৩ পয়েন্ট। সিএসইতে ১৯৯৬ সালের পর এটিই বড় ধরনের দরপতন।
গত রবিবার রেকর্ড লেনদেনের পর সোম ও মঙ্গলবার ডিএসইতে টানা দুই দিন শেয়ারের দরপতন ঘটল। দুই দিনে ঢাকার বাজারে সাধারণ মূল্যসূচক কমেছে ৩৩২ পয়েন্ট। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কম্পানিগুলোর মধ্যে ৮৫ শতাংশই দাম হারিয়েছে।
এই দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা ভীতি ছড়ালেও বিশ্লেষক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিনিয়োগকারীদের হতাশ বা ভীত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দরবৃদ্ধি ও পতন বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। এতে আতঙ্কিত বা ভীত হওয়ার কিছু নেই। আমরা চাই একটি টেকসই ও স্থিতিশীল শেয়ারবাজার, যাতে স্বাভাবিক নিয়মেই শেয়ারের দামের উত্থান-পতন ঘটবে, বাজারের সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকবে। এ জন্য এসইসি নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশসহ নানাভাবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। আমরা চাই বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউই যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।'
ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, অনেক দিন ধরেই বাজার অতিমূল্যায়িত হয়ে উঠেছিল। গত দুই দিনে দরপতনকে স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন বলা চলে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, 'শেয়ারবাজারকে আমরা একটা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।'
চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। পতনের সময় শেয়ার বিক্রি করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
গতকাল সকাল ১১টায় লেনদেন শুরুর ১৫ মিনিটের ব্যবধানেই ডিএসইতে দরপতন শুরু হয়। একই সময়ে সিএসইতেও দরপতন
ঘটতে থাকে। এ সময় হঠাৎ করে বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। গত কিছুদিনের টানা দরবৃদ্ধির ফলে আগে থেকেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পতনের এক ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনও বাজারের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে নানা পদক্ষেপ নিতে থাকে। টানা দরবৃদ্ধিতে বিচলিত এসইসির কর্মকর্তারা করণীয় নির্ধারণে বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করেন।
সোমবারও করণীয় ঠিক করতে দেশের দুই স্টক এঙ্চেঞ্জের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে এসইসি। তাতে সিদ্ধান্ত হয়, বিও হিসাবের বিপরীতে চেক জমা দিয়েই সঙ্গে সঙ্গে কোনো বিনিয়োগকারী শেয়ার কেনার সুযোগ পাবেন না। চেকের টাকা নগদ হলেই কেবল বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার সুযোগ দেওয়া হবে। আগে থেকেই শেয়ারবাজারে এমন বিধান বা নিয়ম কার্যকর থাকলেও সেটির যথাযথ বাস্তবায়নে কঠোর ছিল না এসইসি। সোমবারের বৈঠকে এসইসি এ ব্যাপারে তাদের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে দেয়। ওই দিনই এ-সংক্রান্ত নির্দেশনাও জারি করে এসইসি।
এর ফলে গতকাল লেনদেন শুরুর পর অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনতে চেয়েও পারেননি। আগের দিন যাঁরা অ্যাকাউন্ট পে চেকের বিপরীতে শেয়ার কিনেছিলেন, গতকাল তাঁদের অনেকের চেক গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় ব্রোকারেজ হাউসগুলো। এতে ওই সব বিনিয়োগকারীর হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে আগের দিনের কেনা শেয়ারের দাম সমন্বয় করতে হয়। ফলে বাজারে শেয়ারের বিক্রির চাপ বেড়ে যায়।
অন্যদিকে টানা কয়েক দিনের দরবৃদ্ধির ফলে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয় শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর মধ্যে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এসব কারণে দিনের একপর্যায়ে বাজারে শেয়ারের ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেড়ে যায়।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, বাজারের এই পতনটা প্রত্যাশিতই ছিল। এতে বিনিয়োগের ঝুঁকি কমেছে। বাজার কিছুটা হলেও স্থিতিশীলতা ফিরে পেয়েছে। দুই দিনের পতনের ফলে বাজারে ফের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। শেয়ারবাজারের এ পতনের জন্য সালাউদ্দিন আহমেদ দুটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) হার বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে তারল্য প্রবাহ কিছুটা কমেছে। সেই সঙ্গে চেকের টাকা নগদ না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনার ক্ষমতা খর্ব হওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
গতকালের দরপতনের কারণ জানতে চাইলে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকতার হোসেন সান্নামাত কালের কণ্ঠকে বলেন, টানা দরবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো সময় এসইসি কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। কিছুদিন ধরেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ ধরনের শঙ্কা বিরাজ করছিল। পাশাপাশি মুনাফা তুলে নেওয়ার তাগিদও ছিল অনেকের। এ অবস্থায় সোমবার এসইসি চেকের টাকা নগদ না হলে শেয়ার কেনার সুযোগ বন্ধ করে দেয়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরো বেশি ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।
আকতার হোসেন আরো বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বছর শেষে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলানোর প্রয়োজনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও শেয়ার বিক্রির তাগাদা ছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তদারকিও যোগ হয়েছে। সব মিলিয়ে গতকাল বাজারে দরপতন ঘটেছে। এই দরপতন কিছুটা হলেও কাঙ্ক্ষিত ছিল। এতে ভয়ের কিছু নেই।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ব্রোকারেজ হাউসের তুলনায় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর শেয়ার বিক্রির চাপ বেশি ছিল। সেই সঙ্গে বিক্রির চাপ ছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালনা প্রতিষ্ঠানগুলোরও।
শেয়ারের দামের পাশাপাশি দুই বাজারেই লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। ঢাকার বাজারে গতকাল ২৪২ কম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ২০৯টিরই দাম কমেছে। বেড়েছে মাত্র ২৫টির। আর অপরিবর্তিত ছিল আটটির দাম। অন্যদিকে সিএসইতে দিন শেষে ১৯৮ কম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১৬৯টির দামই কমেছে। বেড়েছে মাত্র ২৩টির।
দিন শেষে ডিএসইতে প্রায় দুই হাজার ৫১ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৬৬০ কোটি টাকা কম। সিএসইতে দিন শেষে ২৩০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ৭৯ কোটি টাকা কম।
Click This Link
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×