somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অজ্ঞাতনামা: একটি জাতির দাসত্বের স্বপ্ন।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাষ্ট্রের কর্তারা যখন বছর শেষে রেমিটেন্সের ফিরিস্তি দেন তখন তাদের মূখে ঝলক দিয়ে উঠে একরাশ দাসত্বের স্বপ্ন। যেন বাঙালীর জন্ম হয়েছে শুধু দাসত্ব করার জন্য। এ বছর কেন অন্য বছরের তুলনায় কম রেমিটেন্স এসেছে তা নিয়ে উদ্বেগে ফেটে পড়েন কেউ কেউ, "তবে কি আমরা দাস রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছি অন্য দাস ব্যবসায়ী দেশের তুলনায়?" কেউ বলে উঠে এই দাসেরা হলো আমাদের দেশের "অর্থনৈতিক মুক্তিযোদ্ধা", নিমিষেই অবজ্ঞায় তার চেহারা হয়ে উঠে কুৎসিত। সেই দাসেরা মাঝে মাঝে লাশ হয়ে ফেরে, থোতলানো একতাল মাংশ হয়ে। তাতে রাষ্ট্রের কিছু আসে যায় না। সে সব দুঃখী লাশের গল্প 'অজ্ঞাতনামা'। এই চলচ্চিত্রে কোন জীবিত মানুষ মূখ্য হয়ে উঠতে পারে না বার বার জেগে উঠে লাশ, পর্দায় না দেখানো থোবড়ানো মাংশ। সেই দুঃখী মাংশের কোন নাম নেই, দেশ নেই অথবা আছে অনেক দেশ অনেক নাম, তবু মাংশগুচ্ছ চিরদনিই অজ্ঞাতনামা।

দারিদ্রতা বাঙালীকে দাস করে পাঠায় জাতভাই আমিরদের দেশে, পাড়ি দেয় বুকে সীমাহীন স্বপ্ন নিয়ে। দেশে একদিন রাজা হয়ে ফিরবে সেই স্বপ্ন মিলিয়ে যাওয়ার আগেই তারা শুনতে পায় আমির ভাইদের দেশে তারা মিসকিন, নিচু জাতের বাংলাদেশী মুসলমান। গরিবের আপনভাই ই হয়ে উঠে অচেনা মানুষ আর কোথায় তথাকথিত জাত ভাই? তারা বড় জোর পশু হয়, মিসকিনেরা হয় শিকার, নারীরা হয়ে উঠে বুভুক্ষ জাতভাইদের খাদ্য। দাসত্বের যে সামান্য পারিশ্রমিক, তা পাঠায় দেশের আপনজনের কাছে, বাড়ীতে উনুন জ্বলে, রাষ্ট্রের কর্তারা খুশিতে চিৎকার করে, তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূর্ণ হচ্ছে, দেশ সাবলম্বি হচ্ছে, কর্তারা হয়ে উঠছে টাকার কুমির। কিন্তু কিভাবে চলে সেই দাসদের জীবন অচেনা কোন দেশে? তবুও এদেশের কর্তা থেকে মেথর সবাই স্বপ্ন দেখে, একটি জাতির দাসত্বের স্বপ্ন, রেমিটেন্সের স্বপ্ন।

দাসত্বের জীবন শেষে অনেকে ফিরে আসে অনেকে ফেরে না, ফেরে তাদের লাশ। লাশ আসে নানা জটিলতায়। লাশ আবর্জনা হয়ে উঠে রপ্তানিকারক এবং অামিরদের কাছে। তবুও তারা ছুড়ে ফেলে না নর্দমায়, ফেরত পাঠায়। এমন লাশের খবর আসে জলাবদ্ধ এক চরে। জানা যায় লাশের যে নাম জানানো হয়েছে সে বেঁচে আছে। তাহলে মারা গেল কে? দালাল জানায় গলাকাটা পাসপোর্টে পাঠানো হয় অন্য জনকে। শেখ আব্দুল হাকিম নামে যে লাশ এসেছে তা মুলত এজারউদ্দিন প্রমানিকরে। প্রথমে মৃত্যুর খবর শুনে যে পরিবারটি কেঁদেছিল তারা থেমে যায় কাঁদে আসল লাশের পরিবার। লাশ আনতে যেতে হবে এয়ারপোর্টে, সদ্য সন্তানহারা পিতাকে এখন হতে হবে মিথ্যাবাদী নাটকবাজ অন্যথায় সে পাবে না তার ছেলের লাশ। রমজান দালাল ফেঁসে যায় কিন্তু দয়ালু ওসি তাকে খুব বেশি ফাঁসায় না। লাশের সব দায়িক্ত পড়ে তার ঘাড়ে। বাবা বাড়ীটুকু বন্ধক রাখে ছেলের লাশ আনার খরচ জোগাতে। রমজান দালাল নাটকের রিহার্সাল শুরু করে কিভাবে লাশ নেওয়ার সময় মিথ্যা বলবে, তা পেরে উঠে না সন্তানহারা পিতা, রমজান তাকে আক্রমন করে। রমজান দিশাহীণ হয়ে যায়, কোন বিচ্যুতি হলে সব কিছু ঘাড়ে এসে পড়বে এই আদম ব্যাপারির। ঠিক হয় লাশ নেওয়ার সময় কোন কথা বলবে না লাশের বাবা কিন্তু লাশের পশে চিৎকার করে বলে 'তার ছেলের নাম ও তার ছেলের নাম হারানোর দুঃখের কথা।' ঘুষ দিয়ে বিমানবন্দরের কর্মকর্তাকে শান্ত করে রমজান, ফিরে আসে গ্রামে। তারপর জানা যায় লাশের খৎনা হয়নি, গায়ের রং কুচকুচে কালো। এই লাশ অন্য কারো, অন্য কোন দেশের, অন্য কোন ধর্মের। লাশটি আবারো হয়ে উঠে নামহীন। কাঁধের উপর অজ্ঞাত লাশ আর সন্তানের লাশ না পাওয়ার দুঃখে এগিয়ে চলে কাহিনী। বেড়ে চলে দুঃখ, অজ্ঞাত লাশের দুঃখ।

কে বইবে এই অজ্ঞাতের লাশ? প্রবাসী কল্যান, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র কিংবা স্বাস্থ মন্ত্রানলয় সবাই ফিরিয়ে দেয় লাশ, পাঠায় একে অন্যের কাছে। এমনকি মর্গও এই লাশ নেয় না, নাম না জানা দাসের লাশ। এই দাসেরাই কি রেমিটেন্স পাঠায়? লাশ নিয়ে ফিরে যায় পিতা, একটি আশায়; আমার ছেলেও হয়তো সৎকারের মর্যাদা পাবে অন্য কোন পিতার হাতে। লাশ কারো নয়, সন্তানের লাশ শুধুই পিতার।



কাহিনী সাবলিল, সহজবোধ্য ও হৃদয়স্পর্শী। চোখে পড়ার মত কোন অসামঞ্জস্য নেই। নির্মাতার কোন বক্তব্য সেখানে নেই। স্বাভাবিকতার উপর নির্মাতা কিছুই চাপিয়ে দেন নি। অসাধারণ চিত্রনাট্য আর থমথমে নানা টুয়িস্ট আড়স্ট করে রাখার মত। অভিনয় অতুলনীয়। ফজলুর রহমান বাবু, শাহিদুজ্জামান সেলিম, মোশররফ করিম কিংবা শতাব্দী ওয়াদুদরা কখনো অভিনয় করেন না, এরা হয়ে উঠেন বাস্তব মানুষ; যারা আমাদের সাথে থাকে, যারা সাধারণ আবার অসাধারন।

চলচ্চিত্রের নামঃ অজ্ঞাতনামা
নির্মাতাঃ তৌকির আহমেদ
হতভাগা চলচ্চিত্রটির দেশঃ বাংলাদেশ
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৪
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×