somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেল কার্নেগীর 'বন্ধু ও প্রতিপত্তি লাভ' বইটি থেকে যা শিখলাম

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রতিদিনই আমরা কত জনের সাথে মিশি বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, পরিবারের মানুষ, কলিগ কিংবা সম্পূর্ণ অপরিচিত কেউ। সবার সাথে সদ্ব্যবহার করতে ও সম্পর্ক ধরে রাখতে এই বইয়ের জ্ঞান আহরণ করার কোনো বিকল্প নেই। বইটিতে গাদা গাদা বিদেশি বিভিন্ন কাহিনী দিয়ে মূল বিষয়বস্তু আলোচনা করা হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে বাঙালি জীবনের সাথে ঠিক মিলে না। তাই শুধুমাত্র মূল শিক্ষাগুলো কে সরল ভাষায় লিখতে চেষ্টা করেছি, যাতে অল্প সময়ে বইটির মূল ভাব ও শিক্ষা বুঝতে পারেন। বইটিতে অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, সময়ের বিবর্তনে তার অনেক কিছুই আজ বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে অবান্তর হয়ে উঠেছে। আবার এমন কিছু পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে যা কোন ব্যক্তিত্ববান মানুষের দ্বারা করা সম্ভব নয়। তাই অনেকটা বেছে বেছে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি যা সরাসরি আপনার সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করবে।

১. সমালোচনা, অভিযোগ ও তিরস্কার করবেন না:
ধরে নিন আপনি কাউকে প্রভাবিত করতে চাচ্ছেন অথবা তার কোন একটি আচারণ আপনার খারাপ লাগে আপনি চান সে যেন সে টি পরিবর্তন করে। সে ক্ষেত্রে সমালোচনা করে মোটেও সুফল পাবেন না বরং উল্টো ফল হবে। সমালোচনা করলে সে মনে করবে আপনি তাকে আক্রমণ করছেন এবং সে কোন যুক্তিকেই পাত্তা দিবে না। তখন সে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবে। তাছাড়া যখন কেউ কোন ভুল কাজ করে অধিকাংশ সময় তার কাছে সেটা ভুল কাজ বলে মনে হয় না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাকে কিছুটা সময় দিতে হবে যাতে সে নিজের ভুল উপলব্ধি করতে পারে।

২. অন্যকে মন থেকে উৎসাহ দেওয়া ও প্রশংসা করা:
উৎসাহ দেয়া বা কারো প্রশংসা করা এক জিনিস আর তেল মারা বা তোষামোদি করা সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। লোকে সহজেই বুঝতে পারবে আপনি তাকে তেল মারছেন নাকি সত্যি সত্যি প্রশংসা করছেন। মানুষ অন্যের মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে। তাই প্রশংসা করলে মানুষ গলে যায়। কারো মিথ্যা প্রশংসা করলেও সে খুশীতে গদ গদ করে। তাই তোষামোদি করা অনৈতিক ও ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচয় হলেও তা খুবই কার্যকরী একটি উপায় নিজের স্বার্থ উদ্ধারে অন্যকে ব্যবহার করার। তবে এই অনৈতিক ও ব্যক্তিত্বহীন পথ বেছে না নিয়ে সততার সাথে অন্যকে প্রশংসা করুন এবং তাদের কাজে উৎসাহ দিন দেখবেন সে আপনাকে আপনজন ভাবতে শুরু করবে।

৩. অন্যের চাহিদা সম্পর্কে সচেতন থাকুন:
সবাই স্বার্থপর এবং টিকে থাকতে হলে স্বার্থপর হওয়াটা ভীষন জরুরী। তাই অন্যের স্বার্থ সম্পর্কে সচেতন থাকুন, অন্যকে তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সাহায্য করুন। দেখবেন সে দ্রুতই আপনার বন্ধু হয়ে উঠবে। আর অধিকাংশ মানুষ উপকারের প্রতিদান দেয়।

৪. একটুখানি মুচকি হাসি:
হাসলে ক্ষতি নেই, কারণে অকারণে মুখে হাসি ধরে রাখুন। হাসি সে তো শুধু হাসি নয়, হাস্যজ্জল মুখ অন্যদিকে বার্তা দেয় যে আপনি তাদের পছন্দ করেন এবং তারা ভাবতে থাকে তাদের উপস্থিতি আপনাকে আনন্দিত করেছে। তারা নিমিষেই মনে করবে আপনি তাদেরই অংশ। অজান্তেই তারা আপনাকে পছন্দ করতে শুরু করে।

৫. অন্যের নাম মনে রাখুন:
নাম কৃত্তিম। মানুষ একে অন্যকে চেনার জন্য নামকে সংকেত হিসেবে ব্যবহার করে কিন্তু সেই নামই দিনশেষে হয়ে উঠে আমাদের চূড়ান্ত পরিচয়। মানুষের কাছে সবচেয়ে পছন্দের এবং আপন শব্দ হলো তার নিজের নাম। অন্যের নাম মনে রাখা, সঠিক উচ্চারণে নাম ধরে ডাকো এবং তার নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করবেন না বা বিকৃত ভাবে কারো নাম ধরে ডাকবেন না। এতে সে সম্মানিত হবে।

৬. মনোযোগ দিয়ে অন্যের কথা শুনুন:
কম বলুন বেশি শুনুন। সবাই চায় তাকে অন্যের সামনে প্রকাশ করতে। মন দিয়ে অন্যের কথা শুনলে সে বুঝবে আপনার কাছে তার একটা মূল্য আছে। মানুষের আর কি চাই? মানুষ চায় লোকেরা তাকে যেন একটু গুরুত্ব দেয়। এই যত সব টাকা-পয়সা, প্রভাব-প্রতিপত্তি সবকিছুই একটু গুরুত্ত পাওয়ার জন্য। সবাই যেন তার কথা শুনে এবং গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করে।

৭. অন্যের আগ্রহের বিষয়ে কথা বলুন:
সবারই কর্মজীবনের বাহিরে অনেক কিছুর প্রতি আগ্রহ থাকে। যেমন- বই পড়া, খেলাধুলা, চলচ্চিত্র বা রাজনীতি। অন্যের এইসব আগ্রহের ব্যাপারে তার সঙ্গে আলাপ জমালে সে মনে করবে সে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় পার করছে। আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ কিন্তু আমাদের আগ্রহের বিষয় বা শখ নিয়ে শোনার মত ধৈর্য অল্প মানুষের আছে আর তারা হয়ে ওঠে আমাদের বন্ধু। অন্যের আগ্রহের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করুন তাহলে সে আপনাকে পছন্দ করবে।

৮. বিতর্ক এড়িয়ে চলুন:
বিতর্কে কখনো জেতা যায় না। যুক্তিতর্কে হেরে গেলে তো আপনি হেরেই গেলেন। আর যুক্তি তর্কে জিতে গেলেও আপনি যার বিরুদ্ধে জিতলেন তাকে সারা জীবনের জন্য হারালেন। তর্কে জেতার একমাত্র উপায় হল তর্ক এড়িয়ে যাওয়া। আমরা তর্ক করি সাধারনত নিজের ইগোকে আরেকজনের সামনে তুলে ধরতে ও তাকে শানিত করতে। সেই অন্য আরেকজন চাইবে তার নিজের ইগো কে বড় করে দেখাতে। দুই ইগোর যুদ্ধে আপনাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হবে।

৯. অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান:
সবাই মনে করে তার যুক্তি ঠিক। সেজন্য আপনি যখন তার মতামতের বিরুদ্ধে কথা বলবেন তখন সে আপনার প্রতি রুষ্ট হবে। তাই বলে এই নয় যে, যে যা বলবে বিনা বাক্যে মেনে নিলাম। তার মতামত দ্বারা যদি আপনার বা অন্য কারোর ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তাহলে অবশ্যই প্রতিবাদ করতে হবে। তবে আমরা সাধারণত যেসব বিষয়ে মতামত দেই বা অন্যদের মতামত শুনি সেসব বিষয়গুলো মূল্যহীন বা ভবিষ্যতে সেইসব মতামত আমাদের জীবনে কোন প্রভাব ফেলে না। সেহেতু যে যা মতামত দিচ্ছে দিক, অন্যের মতের বিরুদ্ধে বলে শুধু শুধু শত্রু বাড়াবার দরকার নেই।

১০. অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিচার করুন:
সবার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। সমাজ, পরিবার, ধর্ম ও সংস্কৃতি সংঘ বা পড়াশোনা এমন অনেক বিষয় একসাথে মিলে একজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারলে এবং সেই দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিচার করলে সেটি তার মনের মত হবে। দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার মধ্য দিয়ে সেই মানুষটিকে সহজে বুঝতে পারবেন। বন্ধুকে জয় করতে হলে যেকোনো বিষয় বিবেচনা করতে হবে তার দৃষ্টিভঙ্গিতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৫১
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×