somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডেল কার্নেগীর 'দুশ্চিন্তাহীন নতুন জীবন' বইটি থেকে যা শিখলাম

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডেল কার্নেগীর দুশ্চিন্তাহীন নতুন জীবন বইটি অনেক আগে লেখা। সময়ের ছাকনিতে বইটির অনেক লেখাই কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তারপরেও বইয়ের অনেক বিষয়ই এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে আমাদের দুশ্চিন্তাহীন নতুন জীবনের পথে। এমন কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম:

১. দুশ্চিন্তার সারকথা:
প্রথমে আমাদেরকে চিন্তা ও দুশ্চিন্তা শব্দ দুটোকে আলাদা ভাবে বুঝতে হবে। চিন্তা যতটা দরকার ও প্রয়োজনীয়, দুশ্চিন্তা তার চেয়েও অনেক গুণ বর্জনীয়। কোন সমস্যার সমাধান বা কোন বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণের জন্য যখন ভাবি সেটা চিন্তা। আর সমস্যার সমাধানের চিন্তা না করে, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এ কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি তা নিয়ে ভাবায় দুশ্চিন্তা। আমাদের দুশ্চিন্তা মূলত অতীত ও ভবিষ্যৎ নির্ভর। অতীতে আমরা কি কি ভুল করেছি বা কোন কোন খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি তা নিয়ে মন খারাপ করা আমাদের জন্য মোটেও উপকারী নয়। কারণ যা হয়ে যায় তা আর পরিবর্তন করা যায় না। তবে অতীত থেকে শিক্ষা লাভ করা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার, সেজন্য দরকার জ্ঞান অর্জন করা ও সেই জ্ঞানের আলোকে অতীতকে বিশ্লেষণ করা। অতীত থেকে জ্ঞান অর্জন করা ও পিছনের কোন ঘটনার জন্য দুশ্চিন্তায় ডুবে থাকা বা মন খারাপ করা সম্পূর্ণ আলাদা কথা। অতীতে কি হয়েছিল তা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে বরং কাজের রূপরেখা ঠিক করে কাজে নেমে যাওয়াই শ্রেয়। দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচতে কয়েকটি প্রাথমিক কৌশলের কথা বলেছেন ডেল কার্নেগী। তা হলো প্রথমে বিবেচনা করুন যে সমস্যাটি আপনার সামনে এসেছে তা আপনি সমাধান করতে পারবেন কি না? যদি সমাধান করতে পারেন তাহলে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে মাঠে নেমে পড়ুন, এখানে আর দুশ্চিন্তা করে কি হবে? আর যদি সমস্যাটি সমাধান যোগ্য না হয় তাহলে চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব ক্ষতি কমানো যায়। যেটা আপনার হাতের নাগালের বাইরে তা নিয়ে শত দুশ্চিন্তা করেও আপনি কোন ফল পাবেন না। কল্পনা করুন সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি কি হতে পারে, এরপর সেই খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিন। এই ধরনের মানসিক প্রস্তুতি ও কোন আসন্ন ঘটনা সম্পর্কে আগ্রিম ধারণা আপনাকে সাহায্য করবে প্রতিকূল পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে আনার জন্য।

২. নিজের দুশ্চিন্তাকে বিশ্লেষণ করা:
যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে হলে আগে দরকার সমস্যাটি বিশ্লেষণ করা, তারপর সমাধানের চেষ্টা করা। যেহেতু এখানে আপনার সমস্যা দুশ্চিন্তা, তাই কি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন তা বিশ্লেষণ করতে পারলে দুশ্চিন্তা অর্ধেক হয়ে যাবে। আর বাকি অর্ধেক দূর হবে সমস্যাটি সমাধান করার পর। ধরুন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আপনি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। এক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করুন, তারপর একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছান এবং কাজ শুরু করুন। ডেল কার্নেগী কয়েকটি প্রশ্ন রেখে গেছেন আমাদের জন্য, এই প্রশ্নগুলো আপনার নিজেকে করুন এবং উত্তর খুজে বের করুন। দেখবেন দুশ্চিন্তা অর্ধেক হয়ে যাবে।

ক) সমস্যাটি কি?
খ) এই সমস্যার কারণ কি?
গ) এই সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান কি কি?
ঘ) কোন সমাধানটি সবচেয়ে উপযুক্ত?

৩. দুশ্চিন্তার উপর নিজের আধিপত্য অর্জন:
বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে দুশ্চিন্তা কে পরাজিত করা যায় তবে ব্যস্ত থাকা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে দুশ্চিন্তার মূলে কি আছে। ছোট ছোট সমস্যা যা জীবনে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না বা আদৌ কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না, সে ধরনের সমস্যাকে গুরুত্ব দিলে চলবে না। এই ধরনের সমস্যা গুলো সাধারণত নিজে নিজে সমাধান হয়ে যায়। যা আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না তা নিয়ে ভাববেন না। প্রতিটি মানুষের জ্ঞান ও সম্পদ ভীষণ সীমাবদ্ধ, তাই চাইলেই আপনি বড় কোন বিষয় পরিবর্তন আনতে পারবেন না। তাই যা আপনার আয়ত্বের বাইরে তা নিয়ে চিন্তা করবেন না। জীবনে নানা ঝামেলা বা বিপর্যয় আসবে, নিজেকে প্রস্তুত করুন যেন এমন কোন বিপর্যয় আপনাকে সম্পূর্ণ স্তব্ধ করে না দিতে পারে। আপনি যেন যে কোন পরিস্থিতি সামলে সামনের পথে চলতে পারেন। অতীত নিয়ে চিন্তা করা বাদ দিন, কারণ কেউ অতীতকে পরিবর্তন করতে পারবে না।

৪. সুখ ও শান্তির মানসিক মানচিত্র:
ইতিবাচক নেতিবাচক এই দুই ধরনের ঘটনা নিয়েই আমাদের পথ চলা, তবে চিন্তার ক্ষেত্রে ইতিবাচক থাকলে ভালো ফল পাবেন, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারবেন। তাই যথাসম্ভব নেতিবাচক চিন্তা এড়িয়ে চলুন। আমাদের চারপাশে অনেক বিরক্তিকর মানুষ থাকে তাদের এড়িয়ে চলুন। আপনাকে বুঝতে পারে, অন্তত আপনাকে ছোট করার চেষ্টা করে না এমন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করুন।

৫. সমালোচনাকে ভয় পাবেন না:
যখন কেউ অন্যায্য সমালোচনা করে তখন বুঝবেন সে হিংসায় জ্বলছে এবং আপনি আপনার কাজে সফল হয়েছেন অথবা আপনি সঠিক পথে আছেন। গঠনমূলক সমালোচনা আপনার জন্য মঙ্গলজনক কিন্তু আমাদের সমাজে সমালোচনাগুলো ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। কেউ কারোর উন্নতি হজম করতে পারে না। যে যার মত সমালোচনা করছে করুক, আপনি আপনার মত কাজ চালিয়ে যান। বস্তুত তার সমালোচনা আপনার কাজের ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা আনবে না।

৬. মন ও শরীরের উদ্যম:
বিশ্রাম নিন, যতটুকু দরকার। পর্যাপ্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত ঘুমের অভ্যাস না থাকলে মন ও শরীরে কোন শক্তি পাবেন না। চারপাশের পৃথিবী পানসে হয়ে উঠবে, কাজের উদ্যম হারিয়ে ফেলবেন। আমাদের মন আমাদের চারপাশ দ্বারা ভীষণ ভাবে প্রভাবিত হয়। তাই চারপাশকে সুশৃংখলভাবে গুছিয়ে রাখুন তাহলে মনটাও অনেকটা সুস্থির থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৭
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×