
ভবিষ্যতকে নিখুঁতভাবে বোঝার বা ভবিষ্যৎবাণী করার মত যোগ্যতা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞাবানেরও নেই। ভবিষ্যৎ বাদ দিন বর্তমান বাস্তবতাকেই আমরা কতটা বুঝতে পারি? হয়তো আমরা কিছুটা বুঝতে পারি কিন্তু অধিকাংশটুকুই আমাদের কাছে অধরা। মানুষের ইচ্ছামৃত্যুর চিন্তা মূলত একটি ভবিষ্যৎমুখী চিন্তা। কেউ যদি ভবিষ্যৎ জীবনকে যাপন করার উপযোগী মনে না করে তখন সে স্বেচ্ছামৃত্যুর কথা ভাবে। এটাই আত্মহত্যাকারী বা আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর প্রধান যুক্তি। ভবিষ্যৎ যাপন যোগ্য হবে কিনা এটাই এখানে প্রশ্ন। কিন্তু মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি ও প্রজ্ঞা যেহেতু ভবিষ্যৎবাণী করার জন্য যথেষ্ট নয় তাই একজন মানুষের তার জীবন নিয়ে যা ইচ্ছা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থাকতে পারে কিন্তু জীবন বা মৃত্যু বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্যতা মানুষের নেই।
ভবিষ্যতকে ছাড়িয়ে, অনন্ত মহাকালের চিন্তাও মানুষের মধ্যে জাগাতে পারে স্বেচ্ছামৃত্যুর মাধ্যমে মুক্তির আশা। জীবন অর্থহীন, হোক সেটা ধনীর কিংবা কাঙালের, রূপসীর কিংবা কদাকারের। আমরা প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছি অনিবার্য অমহত্বপূর্ণ চিরপ্রস্থানের দিকে। সম্পদ, উত্তরাধিকার বা ভোগবিলাস সবই সময়ের নিদারুণ গ্রাসে হারিয়ে যাবে। এই অর্থহীন জীবন রাখার আর না রাখার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারণ মৃত্যু কিংবা জীবন সবই নিয়ে যাবে অর্থহীন শূন্যতার দিকে। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে "স্বেচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করে লাভটা কি?" তারচেয়ে কিছুদিন ভোগবিলাস করে, আনন্দ ফুর্তি করে কাটাই। কিন্তু এটাও একটা অধরা স্বপ্ন।
আপনি যতই ধনী হন কিংবা গরিব, বলশালী কিংবা ক্ষীণকায় পৃথিবীতে যত সময় আপনি স্বাচ্ছন্দে কাটাবেন তার চেয়ে বেশি সময় কাটাবেন দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও মনঃপীড়ায়। অর্থ, ভালোবাসা, সঙ্গ কিংবা ভ্রমণ; কোন কিছুই আপনার সুখের পাল্লাকে ভারি করতে পারবে না দিনশেষে। তবে আনন্দের বিষয় হলো আমরা বেমালুম ভুলে যাই যত দুঃখের কথা আর আজন্ম লালন করি ক্ষনিক সুখকে। এটা অবশ্য আমাদের মস্তিষ্কের কারসাজি।
অবশেষে বিষয়টা এমন দাঁড়াচ্ছে আত্মহত্যা না করেও আপনার বিশেষ কোনো লাভ হবে না। আবার আত্মহত্যা করেও আপনি এই অর্থহীন জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারবেন না। আত্মহত্যার মাধ্যমে আপনি নিরর্থকতার চিন্তা থেকে পালিয়ে গেলেন কিন্তু এর কোনো সমাধান করতে পারলেন না। আর যেটা সমাধান অযোগ্য তা সমাধান করার ইচ্ছা রাখার কি দরকার?
তবে যারা ভয়ানক রোগে ভুগছেন তাদের কথা আলাদা। যে রোগে ভবিষ্যতে সেরে ওঠার আশা থাকে না শুধু থাকে অন্তহীনভাবে কষ্টভোগ করে যাওয়া; তারা মৃত্যুর অধিকার চাইতে পারে। আইনসম্মতভাবে পেশাদারদের পরামর্শে জীবনের ইতি টানা প্রতিদিন অনন্ত কষ্টভোগের চেয়ে কম কষ্টকর।
এযুগের ইচ্ছামৃত্যু আকাঙ্ক্ষীদের অধিকাংশই সম্পর্কচ্ছেদের বেদনায় কিংবা সামাজিক অর্থনৈতিক চাপে আত্মহত্যা করতে চায়। এইসব কারণগুলো কি আদৌ অতটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যতটা তারা ওই সময়টায় দাঁড়িয়ে অনুভব করে? ঠিক কিছুদিন পরে তারা স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে আসে। এখন যদি খোলাখুলিভাবে ইচ্ছামৃত্যকে অধিকার হিসেবে দেখানো হয় তাহলে তাদের অপরিণত মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা তীব্রতর হবে এবং দেখা দেবে বিপর্যয়ের। তীব্র অসুস্থতাজনিত কারণ ছাড়া ইচ্ছামৃত্যুর অধিকার থাকা ভয়ংকার কারণ তাতে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিবৃত্তিক জীব ভাবা গর্বিত এই নিতান্ত প্রাণীটি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে গর্বিত গাধামীতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




