মহা ধুমধামে রাজকীয় বিয়ে সম্পন্ন হলো হিমালয় তনয়া ভুটানের রাজার। ড্রাগনের দেশ নামের ছোট্ট দেশ ভুটানের তরুণ রাজা জিগমে খেসার নামগিল ওয়াংচুক বিয়ে করলেন সাধারণ ঘরের সুন্দরী তরুণী জেটসান পেমাকে। রাজা জিগমে আর জেতসানের মন দেওয়া নেওয়া হয়েছিল সেই ১৪ বছর আগে থিম্পুর এক ঘরোয়া বনভোজনে গিয়ে। তখন জেটসানের বয়স ছিল সাত আর জিগমে ছিলেন ১৭ বছরের টগবগে যুবক।
গত আগস্ট মাসে ছাত্র-ছাত্রীদের এক সমাবেশে নিজেদের সেই ছোট্ট বয়সের প্রেমের গল্প শুনিয়েছেন রাজা জিগমে নিজেই। তিনি বলেন, ‘আমি তখন রাজপুত্র। সেদিন আমি জেটসানের সামনে হাটু গেঁড়ে বসে বলেছিলাম, তুমি যখন বড় হবে, তখন যদি আমি এবং তুমি দু’জনই অবিবাহিত থাকি এবং যদি দুজনই চাই তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো। সেই চৌদ্দ বছর আগে শুরু হওয়া একটি প্রেমের সফল পরিণতি ঘটলো ২০১১ সালের ১৩ অক্টোবর, একটি চমত্কার রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে। তবে সাত লাখ অধিবাসীর ছোট্ট দেশটির প্রিয় রাজা জিগমে দেশের ভবিষ্যত্ রানীর কথা জনগণকে জানান গত মে মাসে। সেই থেকে দেশের মধ্যে রাজার প্রায় প্রতিটি সফরেই সঙ্গী হয়েছেন জেটসান। এমনকি এই সফরের সময়গুলোতে রাজা জিগমে এমনভাবে জেটসানের হাত ধরে ঘুরতেন যে, তা ভুটানের তরুণ-তরুণীদের কাছে এখন বেশ অনুসরণীয় ধারায় পরিণত হয়েছে।
দুই শক্তিধর দেশ চীন ও ভারতের মাঝে ছিমছাম এই ড্রাগনের দেশে প্রিয় রাজার বিয়েতে গতকাল গোটা দেশই ছিল উল্লসিত। এই বিয়ে যেন প্রতিটি ভুটানি পরিবারেরই উত্সব। ৩১ বছর বয়সী অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট রাজা জিগমে ২০০৮ সালে রাজ সিংহাসনে বসার পর থেকে দেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে মানুষের সাথে দেখা করেছেন। এমনকি অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় পায়ে হেঁটেও গিয়েছেন জিগমে। কথা বলেছেন, খোঁজ-খবর নিয়েছেন আপামর জনসাধারণের।
বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন দেশের সাংসদ, মন্ত্রী, রাজপরিবারের বন্ধু-বান্ধব আর সাধারণ জনগণ। শুধু তাই নয়, সপ্তদশ শতকে তৈরি থিম্পুর ছোট্ট রাজ কুটিরে এখনও জনসাধারণকে আমন্ত্রণ জানান, চা খাওয়ান আর খোলা মনে গল্প করেন জিগমে। তাই আজ রাজকীয় বিয়ের আসরেও বিশ্বের কোন দেশের রাজা-রানী, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী কিংবা সুপার ভিআইপিদর উপস্থিতি ছিল না। ছিলেন দেশের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজপরিবারের বন্ধু-বান্ধব আর সাধারণ জনগণ। বিয়ের আসরে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে প্রচলিত রীতি-নীতি সম্পন্ন করেন দেশের শীর্ষ বৌদ্ধ ধর্মগুরু। এরপর রাজা জিগমে জেটসানকে রানীর মুকুট পরিয়ে দেন আনুষ্ঠানিকভাবে। তবে বিয়ের উত্সব এখানেই শেষ নয়। চলবে তিন দিন ধরে। তাই ক’দিন আনন্দের বন্যায় ভাসবে গোটা ভুটান।
নব দম্পতি মধুচন্দ্রিমায় যাবেন ভারতের রাজস্থানে। ২৩ অক্টোবর তাঁদের নয়াদিল্লি পৌঁছানোর কথা। সেখানে ১ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান করবেন। ভারতের হিমাচল প্রদেশের সানাওয়ারে লরেন্স স্কুলে পড়াশোনা করেছেন পেমা। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের কালিমপংয়ে সেন্ট জোসেফস কনভেন্টেও পড়েছেন তিনি। ২০০৬ সালে বাবা জিগমে সিংহে ওয়াংচুক সরে দাঁড়ালে ভুটানের রাজার দায়িত্ব পান জিগমে খেসার ওয়াংচুক। ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজত্ব করা বর্তমান রাজবংশের পঞ্চম রাজা তিনি।
২০১১ সালের ১৪ অক্টোবর দৈনিক আমাদের অর্থনীতিতে প্রকাশিত
facebook.com/JournalistMesbahPatwary