জ্বর হলে প্যারাসিটামল খেতে হয় সবাই জানেন। পল্লী চিকিৎসক আর ফার্মেসির বদৌলতে এখন সাথে জিম্যাক্স বা সিপ্রোসিন জ্বর এর রুটিন ট্রিটমেন্ট হয়ে গেছে। কিন্তু জানেন কি জ্বর কেন হয়? শোনেন তাহলে, জ্বরের অন্তত এক হাজারটা কারণ আছে। কয়েকটা বলি। টাইফয়েডে জ্বর হয়, ম্যালেরিয়ায় জ্বর হয়, টিবিতে জ্বর হয়, কালাজ্বরে জ্বর হয়, প্রস্রাবে ইনফেকশন থেকে জ্বর হয়, এপেন্ডিসাইটিস, সাইনুসাইটিসে জ্বর হয়, জরায়ুর ইনফেকশনে জ্বর হয়, ক্যান্সারে জ্বর হয়। আপনি কি জানেন প্রত্যকটা জ্বরের চিকিৎসা আলাদা? আপনার কেন জ্বর হল এটা খুজে বের করার দায়িত্ব কার? ডাক্তারের। একজন ডাক্তার জ্বরের কথা শোনার পর কি চিন্তা করে জানেন? চিন্তা করে আপনর বয়স কত? আপনার জ্বর কতদিন ধরে? জ্বর কি সবসময় থাকে নাকি মাঝে মাঝে আসে? দিনে কয়বার আসে? যখন আসে খুব বেশী আসে নাকি অল্প অল্প আসে? জ্বর কি কাপুনি দিয়ে আসে? প্রস্রাবে কি জ্বালাপোড়া হয়? আপনার কি ওজন কমে যাচ্ছে? কাশি হয়? এইসবগুলো চিন্তা করার পর তিনি কয়েকটা কারণ দাড় করান। তারপর আসল কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনাকে হয়ত ২-৩ টা পরীক্ষা করতে দিতে পারেন। আবার নাও দিতে পারেন যদি তিনি মনে করেন জ্বরটা স্রেফ ভাইরাল। তারপর তিনি ঠিক করেন আপনাকে কি চিকিৎসা দেবেন।
আপনি বলতে পারেন ডাক্তার তো দেখে মাত্র ২-৩ মিনিট। এত চিন্তা করে কখন? এখানেই প্রশ্ন। যে চিন্তা করতে পারে তার জন্য ৩ মিনিটই যথেষ্ট। যে চিন্তা করতে পারে না সে ১৫ মিনিটেও করতে পারে না। চিন্তা করতে যোগ্যতা লাগে। এই যোগ্যতা একদিনে হয় না।
"মেডিকলের পড়াশুনা এমনিতেই এত কঠিন যে পাশ করতে হলে পড়াশুনা করেই পাশ করতে হয়" এই হাস্যকর যুক্তি অনেককেই দিতে শুনেছি। পাশ করতে পড়াশুনা ঠিকই করতে হয় কিন্তু ভিতরের যে চিন্তাশক্তি সেটা কি উন্নতি করা সম্ভব? সেটা তো হয় সেই প্রথম শ্রেণীতে শিশু যখন অ আ ক খ শেখে তখন থেকে। সেটা কি এই বয়সে অর্জন করা যায়?
প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় পাস মার্ক ২০ করার দাবী জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় ২০ মার্ক পেতে কতখানি জ্ঞান থাকা লাগে? আপনি জানেন দেশের পাবলিক পরীক্ষায় পাশনম্বর ৩৩? আর কিছু বলতে চাই না। শুধু প্রশ্ন করতে চাই পাশমার্ক পাওয়ার যোগ্যতা যাদের নাই তাদের কাছ থেকে আপনি কি চিকিৎসা আশা করতে পারেন? জ্বর হলে "নাপা" ব্যাস এর বেশী কিছু না।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশে চিকিৎসা বিষয়টাকে খুব সেনসিটিভ বলে বিবেচনা করা হয়। ইউরোপে চিকিৎসক হিসেবে প্রাকটিস করতে হলে প্লাব পাশ করতে হয় আর অস্ট্রেলিয়ায় এএমসি। আমেরিকা তো আরো এক ধাপ বাড়া ওদের ইউএসএমএলই পাশ করলেও এশিয়ার চিকিৎসকরা নাকি শুধু এশিয়া থেকে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ পায়। কেন এমন কড়াকড়ি জানেন? ওদের কাছে চিকিৎসা জিনিসটা ছেলেখেলা নয়। চিকিৎসার মানের ক্ষেত্রে একবিন্দু ছাড় দিতে ওরা রাজী নয়।
প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ থাকতে পারে। সেখানে কারা পড়বে? যাদের টাকা আছে তারা? নাকি যারা যোগ্যতা থাকা সত্বেও সিট স্বল্পতার কারণে সরকারী মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পায়নি তারা? একটু চিন্তা করে দেখুন কোনটা মানদন্ড হওয়া উচিত?
কাজটা তো কঠিন না। এখনতো একসাথেই পরীক্ষা নেয়া হয়। সরকারী মেডিকেলের ওয়েটিং লিস্ট থেকে প্রাইভেট মেডিকেলে ছাত্র নেয়া হয়। শুধু কাটমার্ক করতে হবে ৫০ বা সর্বনিম্ন ৪৫। একদিন যে ছাত্রটি মানুষের জীবন মৃত্যুর দায়িত্ব নেবে তার এতটুকু যোগ্যতা থাকবে না?
গত দুই বছরে আমার পরিচিত বেশ কয়েকজনকে দেখেছি কোন ভার্সিটিতে চান্স না পেয়ে শেষে প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। কি লজ্জা ! কি লজ্জা !! ডাক্তার পরিচয় দিতে ইদানিং কষ্ট হয়।
কষ্টটা এখন শুধু আমাদের। ১৫ বছর পর কষ্টটা শুধু আমাদের থাকবে না। ২০ পাওয়া ছেলেটা দায়িত্ব নিবে কার্ডিওলজি ইউনিটের। ২২ পাওয়া ছেলেটা গলব্লাডার অপারেশন করবে। অপারেশনের টেবিলে থাকবে কে জানেন? আপনি। অথবা আপনার প্রাণপ্রিয় সন্তান।
এখন সিদ্ধান্ত নিন আপনি কি করবেন? যা হবার হোক ভেবে চুপচাপ বসে থাকবেন? নাকি প্রতিবাদ করবেন?
আসুন আমরা সকল পেশার মানুষ এক হই। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারি না
লেখাটি পূর্বে আমার ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে "আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিকিৎসার ভার আমরা কাদের হাতে তুলে দিচ্ছি ?"