somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মিজানুর রহমান মিলন
আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

ইরানে একটি খুন , অভিযুক্ত মহিলার ফাঁসি ও ঘটনার ইতিকথা !

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইরানি এক মহিলা রিহানিহ জাবারী (২৬) এর ফাঁসির রায় কার্যকর নিয়ে বিশ্ব মিডিয়া তোলপাড়! আপনারা যারা প্রতিদিন আন্তর্জাতিক নিউজ পড়ে থাকেন তারা নিশ্চয় ইরানি ঐ মহিলার ফাঁসির নিউজটাও পড়েছেন। আমি এটা নিয়ে লিখতাম না, দুটি কারণে লিখতেছি। ১. পশ্চিমা মিডিয়া্য় এই ফাঁসির রায় নিয়ে তোলপাড় ২. আমাদের সোসাল মিডিয়াতেও এই ফাঁসির রায় নিয়ে কম আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে না বিশেষ করে শিয়া ইরান বিরোধী মুসলিম সমাজের মধ্যে । তাই পশ্চিমা মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত নিউজ অনুসারে আমি পুরো ঘটনার স্বল্প বিস্তার বর্ণনা করতেছি। তবে তার আগে বলে নেই-ব্যক্তিগতভাবে আমি যে কোনো ধরণের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী সে যেই হোক। আমার ব্যক্তিগত কামনা পৃথিবীর প্রতিটি দেশ থেকে মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত হোক।এটা আমার নৈতিক অবস্থান। আপনাদের অবস্থান আমার বিপরীতমুখী হতে পারে তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই ।

ইরানের বিচার ব্যবস্থা প্রকৃত অর্থে স্বাধীন কারণ ইরানের নির্বাহী বিভাগের কোনো ক্ষমতা নেই বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ করার। ইরানের নির্বাহী বিভাগের প্রধান হলে প্রেসিডেন্ট। ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান হলেন একজন আয়াতুল্লাহ যিনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা সাইয়েদ আয়াতুল্লাহ আলী খামেনী কর্তৃক নিয়োগকৃত। যাইহোক, ইরানি সংবিধান অনুসারে হত্যা , দেশ ও বিপ্লবের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকদের এবং মাদক চোরাচালান ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের হত্যার শাস্তির বিধান আছে। তবে খুন বা হত্যার ক্ষেত্রে যদি নিহতের পরিবার খুনীকে ক্ষমা না করে বা রক্তপণ বিনিময়ে ক্ষমা না করে তাহলে ইরানের কোনো ব্যক্তিরও ক্ষমতা নেই খুনীকে বাঁচানোর, প্রেসিডেন্ট ও সর্বোচ্চ নেতারও নেই!এ প্রসঙ্গে ছোট্ট পরিসরে একটি ঘটনার উল্লেখ করি। গত বছর ইরানের একটি গ্রামের দুই তরুণ বন্ধুর মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে একজন আর একজনকে খুন করে ! যাইহোক, মামালা দীর্ঘদিন চলার পর আদালত খুনি যুবকের ফাঁসির রায় দেয়। রায় কার্যকরের দিন ভিকটিমের পরিবার সেখানে উপস্থিত। খুনি যুবকের গলায় ফাঁসি রশিটি পড়িয়ে দিবেন নিহত যুবকের মা ! কিন্তু বিষ্ময়ের ব্যাপার, সেই মা তার ছেলের খুনির গলায় ফাঁসির রশিয়ে না পড়িয়ে সবাইকে অবাক করে ছেলেটিকে ক্ষমা করে দেন! তৎকালীন সময় তা আলোড়ন তুলে সারা বিশ্বে। এরকম আরো কয়েকটি ঘটনা আমার জানা আছে যা এখানে স্বল্প পরিসরে বলা সম্ভব নয়।

এখন আসি মূল ঘটনায়। রিহানিহ জাবারি ছিলেন একজন গৃহসজ্জাকারক। ২০০৭ সালে সাবেক এক সরকারী কর্মকর্তা মোর্তেজা আব্দুল আলী সারাবান্দির সাথে এক ক্যাফেতে সাক্ষাৎ করেণ রিহানিহ জাবারী। সেখানে তারা দুজন একটি ব্যাবসায়িক চুক্তি নিয়ে কথা বলেন এবং চুক্তি করার জন্য সারাবান্দি রিহানিহ জাবারিকে তার অফিসে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। সেই মোতাবেক জাবারি সারাবন্দির অফিসে উপস্থিত হন। ঘটনা এখানেই শুরু। জাবারীর দাবি অনুসারে সারাবন্দি জাবারীকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হলে জাবারী তার পকেট থেকে ছুরি বের করে তাকে ছুরিকাহত করে বিছানায় ফেলে রেখে পালিয়ে যান! রক্তক্ষরণ অবস্থায় সারাবান্দি মারা যান। কিন্তু কথা হল জাবারী সারাবান্দির পিঠে ছুরিকাহত করেণ! যদি সারাবান্দি জাবারীকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হত আর জাবারী আত্মরক্ষার জন্য ছুরিকাহত করত তাহলে নিশ্চয় তা পিঠের দিকে ছুরিকাহত করত না ! যাইহোক তারপর সারাবন্দির পরিবার হত্যা মামলা দায়ের করেণ। ২০০৭ সালেই জাবারী গ্রেফতার হন এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সারাবান্দির পরিবার দাবি করেণ, ঘটনাটা পূর্ব পরিকল্পিত এবং তদন্তে জানা যায়-জাবারী ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করার দুই দিন আগে একটি দোকান থেকে ছুরিটি কিনেন !

মামলা দীর্ঘদিন চলার পর ২০০৯ সালে ইরানের নিম্ন আদালত তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে রিহানিহ জাবারীকে মৃত্যুদণ্ড দেন।তখন থেকেই জাবারীর মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাও এর প্রতিবাদ জানায়। অ্যামেনিস্টি ইন্টারন্যাশনাল জাবারীর পক্ষে বক্তব্য দেয় এভাবে-রিহানিহ জাবারী সারাবান্দিকে ছুরিকাহত করেছেন ঠিকই কিন্তু তিনি সারাবান্দিকে হত্যা করেণনি, হত্যা করেছে অন্য কেউ।According to Amnesty International, Jabbari had admitted stabbing Sarbandi, but had claimed that someone else in the house had killed him. কিন্তু জাবারী ঐ বাড়ির তৃতীয় ব্যক্তিকে চিনতে ব্যর্থ হন। এরপর জাবারী উচ্চ আদালতে আপিল করেণ। মানবাধিকার সংস্থাগুলোসহ বিশ্ব মিডিয়ার প্রচারণার ফলে ইরানের উচ্চ আদালত তার ফাঁসির রায় স্থগিত করে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্ত ও মামলার শুনানি শেষ উচ্চ আদালত পূর্বের রায় বহাল রাখে। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ইরান সরকার থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় শীঘ্রই রিহানিহ জাবারীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে।০১ অক্টোবর ২০১৪ রায় কার্যকর সাময়িকভাবে স্থগিত করে ইরানি আদালত জাবারীকে নিহতের পরিবার থেকে ক্ষমা অথবা রক্তপনের বিনিময়ে ক্ষমা গ্রহন করার সুযোগ দেয় কিন্তু নিহতের পরিবার জাবারীকে ক্ষমা করতে সম্মত হননি। জানা গেছে, নিহতের পরিবার জানিয়েছে মূলত ধর্ষণের অভিযোগ করাতে তারা সমাজের কাছে হেয় হয়ে গেছেন এজন্য তারা ক্ষমা করতে রাজি হননি।অবশেষে ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ভোর রাতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রিহানিহ জাবারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়! মৃত্যুর পুর্বে রিহানিহ জাবারী তার মাকে একটি চিঠি লিখে যান ও তার মরদেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তিনি দান করে যান।

রিহানিহ জাবারীর ফাঁসির রায়ের পক্ষে ইরানি প্রসিকিউটর মিডিয়াতে যা বলেছেন-

১. জাবারীকে সন্দেহবশত গ্রেফতার করা হয়েছে কারণ তদন্তে দেখা গেছে নিহতের শেষ ফোন কলটি জাবারীর ছিল।
২. পুলিশ রিহানিহ জাবারীর বাড়িতে রক্তমাখা স্কার্ফ ও ছুরির প্রকৃত খাপ পেয়েছে যা খুন করার ছুরির সাথে মিলে গেছে।
৩. জাবারী স্বীকার করেছেন যে তিনি ঘটনার দুই দিন পূর্বে ছুরিটি কিনেছিলেন।
৪. জাবারী ঘটনার তিন দিন আগে তার বন্ধুকে মেসেজ করেণ যে, আমি আজ রাত্রিতে তাকে হত্যা করব।
৫.জাবারী দাবি করেণ যে তিনি সারাবান্দিকে ছুরিকাহত করেছেন ঠিকই কিন্তু তিনি তাকে হত্যা করেণনি তবে তিনি ছুরিকাহত করে পালিয়ে আসার সময় শেইখী নামে এক ব্যক্তিকে দেখেছেন কিন্তু সেই শেইখিকে তিনি চিহ্নিত করতে পারেণনি।
৬. জাবারীর দাবি যে তিনি ছুরিকাহত করে আসার পর তৃতীয় ব্যক্তি সারাবান্দিকে খুন করেছে। তার দাবির পক্ষে যথাপোযুক্ত তদন্ত চালানো হয়েছে কিন্তু তার দাবির পক্ষে নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালত কোনো প্রমান পাননি।তারপরেও প্রোসিকিউটর অফিস চেষ্টা করেছে দুই পরিবারকে একত্রে বসে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের কিন্তু নিহতের পরিবার কোনোমতেই ক্ষমা করতে রাজি হয়নি।

! ( লেখকের নাম ছাড়া লেখা প্রকাশ করা দণ্ডনীয় অপরাধ! কপি করার আগে একবার ভাবুন, এই লেখাটি আপনার নিজস্ব সম্পত্তি নয়!)

মিজানুর রহমান মিলন।
২৯.১০.২০১৪।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৪৩
১৪টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×