লিবিয়াতে গণতন্ত্র ছিল না। আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমাদের খায়েশ হইলো তারা লিবিয়ায় গণতন্ত্র কায়েম করবে। মানে তারা বিশ্বকে এটাই বোঝালো যে লিবিয়ায় গণতন্ত্র কায়েম করতে হইবে। অন্যদিকে ইসলামপন্থীদের খায়েশ হইলো তারা প্রচলিত শাসন ব্যবস্থা উৎখাত করে লিবিয়ায় খেলাফত এবং শরীয়া শাসন কায়েম করবে।
সেই ২০১১ সালের কথা। লিবিয়াতে আমেরিকা নেতৃত্বে পশ্চিমারা বোমা হামলা শুরু করল, গাদ্দাফি বিরোধীদের ট্রেনিং এবং অস্ত্র দিল আর অন্যদিকে ইসলামিস্টরা পশ্চিমাদের সহায়তায় জেহাদ শুরু করল মরলে শহিদ বাঁচলে গাজি নামে। ফলাফল কি দাড়ালো? এখন ২০২০ সাল। গাদ্দাফির পতন হয়েছে এবং তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু লিবিয়াতে পশ্চিমারা যেমন গণতন্ত্র কায়েম করেনি তেমনি ইসলামিস্টরাও খেলাফতি শাসন কায়েম করতে পারেনি। এই দুই দলের মাঝখানে পড়ে প্রাণ গেছে লাখো মানুষের!আসলে পশ্চিমারা লিবিয়াতে গণতন্ত্র কায়েম করতে যায়নি তারা মূলত গিয়েছে লিবিয়ার তেল সম্পদ চুরি করতে। সিরিয়ার ক্ষেত্রে তো ট্রাম্প সেটা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে ধর্মবাদি ও জঙ্গীবাদি দলগুলো হল এই পশ্চিমা চোর-ডাকাতদের টয়লেট টিস্যু। পশ্চিমাদের যখন যে সরকারকে উৎখাতের প্রয়োজন হয় এরা সেখানে যায় জেহাদ করতে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও এরা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
সিরিয়াতেও একই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেমেছিল পশ্চিমা শক্তি ও ইসলামিস্টরা। কিন্তু সিরিয়া ধ্বংসের কিনারায় যাওয়ার পরেও মিত্র ইরান ও রাশিয়ার হস্তক্ষেপে টিকে গেছে মাত্র। উঠে দাড়াতে কয়েক বছর সময় লাগবে, কিন্তু লিবিয়াকে কম করে হলেও ৫০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দেশটি কবে স্থিতিশীল হবে কেউ জানে না। একটি সশস্ত্র গ্রুপকে আরেকটি সশস্ত্র গ্রুপের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে। ফলে লিবিয়ার ভাগ্য লিবিয়ার জনগণের হাতে নেই। লিবিয়ার ভাগ্য চলে গেছে আঙ্কারায়, মস্কোয়, বার্লিনে, প্যারিসে, ওয়াশিংটনে। ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণ হারানো দোষটা কার?
নিশ্চিৎভাবেই লিবিয়ানদের। গাদ্দাফি ভাল শাসক ছিলেন না কোন সন্দেহ নাই; কিন্তু গাদ্দাফিকে উৎখাত করতে যেয়ে তারা হায়েনা দলের সাথে হাত মিলিয়েছে। হায়েনাদের ডেকে নিয়ে এসেছে লিবিয়ায়। হায়েনাদের কোলে চড়ে তারা লিবিয়া শাসন করতে চায়। এখন তো সেই ফল ভোগ করতেই হচ্ছে লিবিয়ানদের। লিবিয়ার কোথাও শান্তি নেই, কোথাও নিরাপত্তা নেই। নেই নাগরিক সুবিধা। চারদিকে শুধু যুদ্ধ আর যুদ্ধ!
লিবিয়ার পরিণতি থেকে বাইরের বিশ্বের জনগণের অনেক কিছুই শেখার আছে। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে কোন পরিবর্তনই আসতে হবে ভিতর থেকে। পরিবর্তন বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয় বা বাইরের শক্তির সাহায্যে বোমা হামলা করে ঘটানোর বিষয় নয় এবং সেটা করতে গেলে আম ও ছালা দুটোই হারায় সেই দেশের জনগণ। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশগুলোর জনগণের জন্য লিবিয়ার পরিণতি একটা বড় শিক্ষা।