somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বজিৎ না হয়ে বরকত ও স্কুলশিক্ষক তারকচন্দ্র না হয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক তাওফিক হলে যা হত

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাল সময়ের কয়েকটি প্রাসঙ্গিক নামের মধ্যে বিশ্বজিৎ এবং পরাগ উল্লেখযোগ্য। দুজনেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। সরকারি দলের ছাত্র এবং যুবকবেশি সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অপকর্মের কল্যানে দুই তরুনের সাধারন থেকে অসাধারন হয়ে ওঠার বাস্তব কাহিনী মানব হৃদয়ে দারুনভাবে রেখাপাত করেছে। বিশ্বজিতের অসহায় আর্তনাদ এবং তার রক্তের করুন চিহ্ন এখনও প্রতিটি সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষকে ভাবনার গহীন সাগরে নিমজ্জিত হতে বাধ্য করে। ভুলে যাওয়ার উপায় নেই মায়ের কোল থেকে শিশু পরাগকে ছিনিয়ে নেওয়ার মত আদীম বর্বরতা। ধর্ম-বর্ণ কিংবা গোত্র-সম্প্রদায় বাদ দিয়ে দুটি ঘটনাকে সারাদেশের মানুষ এবং গণমাধ্যম বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে আক্ষায়িত না করে অপরাধ হিসেবেই গণ্য করেছে যা নিঃসন্দেহে প্রসংশার দাবী রাখে। একই সাথে যুগের পর যুগ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুপ্রতিষ্ঠিত অধিকার এবং মর্যাদা সমুন্নত হওয়ারও প্রমান পাওয়া যায়।

বিশ্বজিৎ আর পরাগের ঘটনা দুটো কিছুটা পুরনো হয়েছে। বিশ্বজিৎ ও পরাগকে নিয়ে নরপিশাচদের সেকেলে নিষ্ঠুরতা হৃদয়াঙ্গন থেকে মুছে আর কয়েকটি ঘটনার মত মরিচার প্রলেপে ঢাকা পড়তে খুব বেশি দিন লাগবে না হয়ত। তবে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা বেশ ভাল লক্ষন, সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। বলা বাহুল্য সর্বক্ষেত্রে অপরাধীদের সমানভাবে মুল্যায়ন না করায় সোনার বাংলাদেশ ইতিমাধ্যেই অপরাধীদের অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে। বিশ্বজিৎ ও পরাগ ঘটনার দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত বিচারের সম্মুখীন হলেও পরিমল, অরুন চৌধুরী গংদের ভাগ্য সুপ্রসন্নই বলতে হয়। প্রগতিশীলদের অন্তর্ভুক্ত পরিমল, অরূন চৌধুরীরা মুসলিম মেয়েদের ধর্ষন কিংবা শ্লীলতাহানী করেছিল যাদের বেলায় কোর্ট-কাচারি একেবারেই প্রযোজ্য নয়। পরিমল বাবুদের দেখানো পথেই এখন তারক, চন্দন বাবুদের সাবলীল পথচলা।

তখন পরিমল গংদের বাচাতে উঠে পড়ে লেগেছিল বাংলাদেশের সেক্যুলার গণমাধ্যমগুলো। সেক্যুলার পত্রিকা প্রথম আলো এবং বাংলাদেশের প্রগতিশীল সাংবাদিকতার জননী মুন্নী সাহা পরিমলদের বাচাতে অসত্যের আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা করতে পারেন নি। তাতে অবশ্য আমজনতার কাছে তাদের মুখোশ কিছুটা হলেও উম্মোচন হয়েছে। অন্যদিকে নিষ্ঠাবান কতিপয় গণমাধ্যম এবং সচেতন জনসাধারনের ভুমিকার কারনে পরিমল বাবুকে বিচার প্রক্রিয়ায় আনা হলেও সুশীলতা ও সেক্যুলারিজমের জোরে পার পেয়ে গেছে অরুন চৌধুরীর মত হাজারো বাবু। সেইসাথে গৌয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে অরুন, পরিমল বাবুদের পোয়া বারো হওয়ায় তারক, চন্দন বাবুদের ধৃষ্ঠতা মানবতার সকল সীমা অতিক্রম করেছে। আর তার ফল আমরা ভালভাবেই প্রত্যক্ষ করছি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বক্ষেত্রে।

বিশ্ব পরিক্রমার স্রোতের অনুকূলে বাংলাদেশের সিংহভাগ গণমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রেই ন্যায়নিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে দারুনভাবে ব্যর্থ। রাজনীতির নোংরা প্যাচে আবর্তিত বিরোধী মনভাবাপন্ন মানুষদের ব্যাপারগুলো এমনকি তাদের জীবন-জীবিকাও স্বদেশীয় গণমাধ্যমের কাছে একেবারেই মূল্যহীন, তাচ্ছিল্যের পাত্র। বিশ্বজিত ছাত্রলীগের নরপিশাচদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সরকারের শীর্ষমহলের সকলেই ঘাতকদের আইনের আওতায় নেওয়ার ব্যাপারে ছিল দারুন সোচ্চার। ঘটনার প্রেক্ষিতে একটা বিবৃতি প্রদানও ছিল সকলের কাছে প্রশংসনীয়। অথচ এই একই প্রক্রিয়ায় ছাত্র এবং যুবলীগের হাতে বিরোধীদলগুলোর একাধিক নেতাকর্মী হতাহত হলেও সরকার এবং একশ্রেনীর মিডিয়া দুষ্কৃতকারীদের ব্যাপারে ছিল একেবারেই নীরব। হতাহতের মধ্যে কেউ কেউ দাড়ি টুপিওয়ালা হওয়ায় তাদের পক্ষে আইনের কথা বলা ছিল সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন। দুঃখ নিয়েই বলতে হচ্ছে দাড়ি, টুপিওয়ালা কিংবা খাটি মুসলমানদের জন্য নয়; এ দেশের আইন প্রযোজ্য বিশ্বিজিতদের জন্য।

মাদ্রাসার কোন শিক্ষক কোন ছাত্রীর দিকে চোখ তুলে তাকালেই সেক্যুলার মিডিয়াগুলোর ঘুম হারাম। ইসলাম ও মাদ্রাসা শিক্ষার বারোটা বাজিয়ে সেটাকে নিয়ে পত্রিকার পাতায় করা হয় মস্তবড় শিরোনাম, লেখা হয় সম্পাদকীয়ও। বুদ্ধিজীবী (?) আর নারী নেত্রীদের বিবেক সাড়া দেয় ব্যাপকভাবে। অথচ শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজের শিক্ষক তারকচন্দ্র এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চন্দনবাবু মানবিকতার শেষ সীমা লঙ্গন করার পরেও নারী নেত্রী আর তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের মুখে কুলুপ আটা। সুশীল পত্রিকা প্রথম আলো এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে নরপাষন্ডের নামটা পর্যন্ত চেপে যায়। কল্পনা করুন, অপকর্মের হোতা স্কুল শিক্ষক তারকচন্দ্র না হয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক তাওফিক হলে প্রগতিশীলদের অবস্থা কেমন হত?

রাজনীতিকে বাইরে রেখেই বলছি, অন্তসত্ত্বাসহ বিশজন নারীকে কোন অভিযোগ ছাড়া গ্রেফতার করে অমানষিক এবং শারিরিক নির্যাতন কোন সভ্য সমাজেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। অথচ তিল পরিমান ত্রুটি খুজে না পেয়েও সুশীল মিডিয়াগুলো তাদেরকে মৌলবাদী কিংবা জঙ্গি বানাতেই ব্যস্ত। ধারনা করতে পারেন বিশজন পর্দানশীল নারী নাহয়ে যদি দুইজন হিন্দু নারীকে গ্রেফতার করা হত তাহলে সুশীল মিডিয়া আর সুশীল সমাজের ভুমিকাটা কেম হত? সমগ্র মানবাধিকারের সংজ্ঞাটাই পরিবর্তিত হয়ে যেত। নারী নেত্রী আর সুশীল-প্রগতিশীলদের বিবেকের তাড়না বৃদ্ধি পেত জ্যামিতিক হারে। পত্রিকাগুলো সম্পাদকীয় লিখে আর রমরমা সংবাদ পরিবেশন করায় কাটতি বাড়ত কয়েক গুন। টেলিভিশনের টকশোগুলো ফিরে পেত দারুন প্রান চাঞ্চল্য। দুর্ভাগা জাতি আমরা। এদেশের আইন সবার জন্য নয়, প্রযোজ্য বিশ্বজিতদের জন্য। এদেশের মানবাধিকার সবার জন্য প্রযোজ্য নয়, প্রযোজ্য শুধু সেক্যুলার ও সুশীলদের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১৯
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×