আপুনি আমার আর মার হাতে মেহদি দিয়ে দিয়েছে। ছোটবেলায় মা সবসময় হাতের তালুতে ফুল বা সুর্য এঁকে দিতো। গোলাকার, সবুজ, নরম ও ভেজা জিনিষটা নিয়ে মহা উৎসাহে বসে থাকতাম। তবে এক-আধঘন্টা পরেই অস্থির লাগতো। আবারও ভীষন উৎসাহে হাত ধুয়ে ফেলে দেখা যেত কোন রং হয় নি
।
এবার সব কাজ শেষ করে মেহদি দিতে দিতে বেশ রাত হয়ে গেলো, তাই মেহদি হাতে রেখেই শুতে গেলাম। বিরাট ভুল। ঈদের সকালে খুব অসস্থির সাথে ঘুম থেকে উঠলাম।
ভেবেছিলাম সুন্দর দিনটা সুন্দরভাবে শুরু করব - তাহাজ্জুদ দিয়ে। এই প্লানটা এক বন্ধুকে বলার পর একটা 'আই রেসপেক্ট ইউ' পেলাম। কিন্তু মেহেদি-কেলেংকারীর জন্য ভাবনা বাস্তবায়ীত হলো না
। বিছানা গুছিয়ে লম্বা গোসলে ঢুকলাম। প্রায় একঘন্টা পরে বের হওয়ার পর মাথা ঘুরাচ্ছিলো। বুঝলাম এতও সকালে গায়ে এতো পানি ঢালার ফলাফল সুখকর হবে না। ফজরের নামাজ পরে তৈরী হলাম। ঈদের নামাজ জামাতে পরার জন্য সর্বচ্চ চেষ্টা চলছিলো।
চারুকলা থেকে বের হওয়া খালাত ভাই ও ভাবী থাকায় অনেক সুবিধা । ওদের চিত্রশিল্প দিয়ে করা আবায়া দিয়েছিলো মা। আবায়াটার ভেতরে সাদা, ওপরে আসমানি নীলের পাতলা পরত, আর সবুজাভ নীলের হ্যান্ড-পেইন্ট। এর সাথে পরেছি আপুনির দেওয়া সবুজাভ-নীল হিজাব। সবাই তৈরী হওয়ার পর খাবার টেবিলে জড়ো হলাম। খেজুর ও কিছু নাশতা খেয়ে ভাইয়া সবাইকে গাড়িতে ঢুকিয়ে ঈদের নামাজের জন্য রওনা দিলো।
বাইসেন্টেনিয়াল পার্কে ঢোকার সময় গাড়ির বিরাট লাইন চোখে পড়লো। প্রায় প্রতিটা গাড়িতে দাড়িওয়ালা ও হিজাবী তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, কিশোর-কিশোরী, পিচ্চি-পাচ্চি দেখা যাচ্ছিলো। প্রায় প্রতি বছর একই ঘটনা ঘটে, তবুও প্রতিবারই মুগ্ধকর ভাবে ভালো লাগে। গাড়ি থেকে নেমে নামাজের জায়গায় যাওয়ার সময় অনেকগুলো ঈদ মুবারক ও সালাম পেলাম। অচেনা মানুষগুলো হঠাৎ করে যেন অনেক কাছের হয়ে গেলো। আর মাঠে ঢুকেতো কথাই নেই, কান্না চলে আসার মত অবস্থা!
নামাজ শেষে কিছুক্ষন ঘুরলাম পাঁচজন মিলে। একেবারে দুপুর দু'টা পর্যন্ত বিভিন্ন বাসায় যাওয়া হলো, মজার মজার খাবার খাওয়া হলো ও টায়ার্ড হওয়া হলো। ভাইয়ার ইউনিতে জরুরী কাজ ছিলো, তাই ও চলে গেলো নামাজ পড়ে। আর আমরা বাকি চারজন বাসায় এসেই বিছানায় কাত।
বিকালে উঠে মাকে রাঁধতে সাহায্য করলো আপুনি। আমি পিচ্চিদের জনউ অনেকগুলো ললিব্যাগ বানালাম। তারপরে আসরের নামাজ পরে সাজলাম।
এবার ঈদে পরেছি সবুজ শর্ট কামিজ - অনেকটা লাইম সবুজ। সাধারনত আমি খয়েরি, কালো বা নীল ধরনের কিছু পরি... কিন্তু এবার একেবারে সবুজ! সাথে মিলিয়ে কানের দুল, গলার চেইন ও চুড়ি ছিলো।
সবাই আসতে শুরু করলো মাগরিবের একটু আগে। কলকাতার একটা আন্টি এসেছে প্রথমে। ওনার একটা চার-পাচ মাসের পিচ্চি ছেলে ছিলো - নয়ন। এতো কিউট দেখে আদর করতে চেয়েছি, পিচ্চি দিলো কেঁদে
। আস্তে আস্তে বাসা ভরে গেলো, পরে গুনে দেখা গেলো 69 জন! এর মধ্যে আনেকগুলাই পিচ্চি - যাদের অতি কিউট কান্ড কারখানা বর্ণনা করা আমার শব্দ ভান্ডারের বাহিরে।
যাহা হউক, ভারী ভালো একটা দিন গেলো, ভীষণ আনন্দের। ঈদের লেট শুভেচ্ছা রইলো সব ব্লগানিতে-ব্যাস্ত-ব্লগারদের জন্য।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।

