somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারা বলে ইহা ভালোবাসার 'দিবস'!

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃহষ্পতিবার পাগলের মতো বৃষ্টি হচ্ছিলো। মাথার ওপর ছাতা থাকা না থাকা একই - স্কুলের স্কার্ট, জুতা, ফোল্ডার, ব্যাগ সব কিছুতে ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। ট্রেনে উঠে মোনা ও সামিয়া ধপ করে মাটিতে বসে গেলো। নতুন স্কার্টটা এখনোও ময়লা করার কোন ইচ্ছা ছিলো না। অনেক জোরাজোরি করেও আমাকে বসাতে না পেরে মোনা কিঞ্চিত বিরক্তির সাথে আমাকে বলেছে, ইউ আর সো নোট গেটিং আ ভ্যালেনটাইনস ডে কার্ড! হি হি হি।
আমি কিছুক্ষন দুঃখের ভাব করে বললাম, কিন্তু সামিয়াতো আমাকে এখনোও ভালোবাসে! হাহ!

ঘটনার সারমর্ম এই যে, পরশুদিনের আগে মনেই ছিলো না ফেব্রুয়ারির চৌদ্দ আসতে বেশি বাকি নেই। ভালোবাসা দিবস নিয়ে বেশ মাতামাতি হবে বুঝতে পারছি। ব্লগ ও স্কুল দুটোতেই উত্তেজনার তুমুল ঝড় উঠবে। সারা পৃথিবী জুড়ে এক কোটি কার্ড আদান-প্রদানের মধ্যে এ বছর কিছু হবে আমাদের স্কুলে, কিছু নেটে। রাস্তায় হাটার সময় চোখ বন্ধ করে থাকতে বাধ্য করবে কিছু সুখ পাখি। নিপিয়ান রিভারে যাওয়ার পথে যে খালি রেস্টুরেন্টটা পড়ে - ভ্যালেন্টিনো - সেটায় সেদিন বসার সিট পাওয়া যাবে না। এর পরের দিন স্কুলের আগ থেকেই ফিসফিস শুরু হবে কে কয়টা কার্ড পেলো।

পাঁচ বছর আগে ঐ দিনে মজার কান্ড ঘটেছিলো। ক্লাসের সবচেয়ে ছোটখাটো ছেলেটা হঠাৎ করে চেঁচামেচি শুরু করেছে - কে যেন তার ব্যাগে একটা কার্ড রেখে দিয়েছে। ভেতরে ছন্দহীন ছোট্ট একটা কবিতা। ছেলেটা সাইজে ছোট হলেও ভীষণ মজা করতে পারতো। সে সারাদিন এক একটা মেয়েকে কৌশলে জিজ্ঞাসা করে নিলো তারা রেখেছে কিনা। দিনের শেষেও অবশ্য বের করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত, বেশ কয়েকদিন পর বের হলো, ক্লাসের সবচেয়ে লম্বা মেয়েটার কাছ থেকে সেটা এসেছে। আমরা বাকিরা হাসতে হাসতে কাত। ব্যাপারটা যদিও খুব অন্যায় হয়েছিলো, তখন ছোট মাথায় এতো কিছু ভাবার জায়গা ছিলো না।

এরপর থেকে ভালোবাসা দিবসগুলো মোটামুটি সরল ভাবেই গিয়েছে। সবাই ছেলেবন্ধুর কাছ থেকে আসা ফুল, কার্ড ও চকোলেট নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে। এর পরের বছর আরেকজনের কাছ থেকে পাওয়া ফুল, কার্ড ও চকোলেট নিয়ে হাসাহাসি করে। এর পরের বছর আবার অন্য কেউ।

ওরা ভাবিয়ে তোলে আমাকে। ভালোবাসা এতো সহজেই দেওয়া ও পাওয়া যায়? এ জিনিসটাকে অর্থ দেয় কয়েকটা গোলাপ আর ফেরারো রোশ্যের? একটুও চিন্তা করতে হলো না তাদের?

আমিও ভালোবেসেছি। ভালোবাসি মাকে, ভালোবাসি বাবাকে, ভালোবাসি আপুনি ও ভাইয়্যুনকে। মারিসা, নিরো ওদেরও ভালোবাসি, তাই এতোদুরে চলে যাওয়ার পরও ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলে যেতে পারি। আকাশ ভালোবাসি, তাই তার দিকে নির্লজ্জভাবে তাকিয়ে থাকতে পারি। দৌড়ে ভেজা ঘাস মাড়িয়ে ব্যাকইয়ার্ড থেকে ড্যফোডিল আনতে পারি, কারন তাকেও ভালোবাসি। বাংলাদেশকে ভালোবাসি, তাই তাকে মিস করি। সিডনিকে ভালোবাসি, তাই তাকে কখনোও পুরোপুরি ছেড়ে যেতে পারবো না। ভালোবাসি সামহোয়ারইন। ভালোবাসি গোসলের গরম পানি। ভালোবাসি নিজস্ব বিছানা ও কম্বল।

ভালোবাসা কখনোও স্বার্থপর হয় না। স্বার্থের ছিটেফোটা থাকলেই তা অন্য কিছু হয়ে যায়। এ জিনিসটা একটু বিপজ্জনকও। অন্যকিছুকে দুর থেকে দেখে ভালোবাসা বলে ভুল করে অনেকেই। এই জন্যই প্রতি বছর ভিন্ন দোকান থেকে ভিন্ন ধরনের গোলাপ পায় তারা। ভুল ভাবে সুখ খুঁজে বেড়ায়। নকল ভালোবাসা থেকে কখনও শিক্ষা নেয় না। যা আছে তা দূরে ফেলে যা নেই তার পিছে ছোটে।

আর ভালোবাসা দিবস? হি হি হি। এর জন্য কোন দিবস দরকার নাকি? আমিতো মাকে সারাক্ষনই ভালোবাসছি। আকাশটাও তো শুধু একদিনের জন্য ঝলমল করে না। কম্বল জড়িয়ে শুচ্ছি প্রতি রাতেই।

নাহ, ভালোবাসার কোন দিবস নেই। যাদের ভালোবাসি, তাদের তিনশ পঁয়ষট্টি দিনই ভালোবাসি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:৪০
৫১টি মন্তব্য ২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×