সামহোয়্যারইন একটা ভার্চূয়াল ব্লগ কমিউনিটি হলেও এটিই আমার বাংলা লেখালিখির একমাত্র স্থান। এই ৭-৮ মাসে এই কমিউনিটিতে দেশ এবং সমাজ চেতনা নিয়ে বিভিন্ন ক্ষুরাধর লেখা যেমন নানা সময়ে আন্দোলিত করেছে একই ভাবে চমৎকার সাহিত্য রচনা এবং চিন্তন বিমুগ্ধ করেছে আমার মত পাঠককে। সামহোয়্যারইন এর মাধ্যমে আমরা দেশের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি, ব্যক্তি মানবতার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। এর পাশাপাশি নিজেও কিছু লেখার চেষ্টা করেছি, কতটুকু লেখা হয়েছে জানিনা তবে ভাবনার প্রকাশ হয়েছে সেটা বলতে পারি।
ব্যাপারটি যে সবসময় এরকম সুন্দর তা নয়। সামহোয়্যারইন এ আমার লেখা শুরুর পর থেকেই এর বাইরেও আরো কিছু ব্যাপার আছে যেগুলি হলো স্বাধীনতা বিরোধি একটি শক্তির আদর্শ প্রচারের চেষ্টা, মুক্ত প্ল্যাটফর্মের সুবাদে মুক্ত গালাগালি, স্বাধীনতার চেতনার আশ্রয় নিয়ে ব্যক্তিগত হ্যারাসমেন্ট। মুক্তিযুদ্ধকে অতিব্যবহারের মাধ্যমে সবকিছুকেই পক্ষশক্তি আর বিপক্ষ শক্তির মধ্যে বিভাজিতকরণের একটা স্থূল জেনারালাইজেশন।
কথাগুলি এই সময়ের প্রেক্ষিতে কর্কশ শোনালেও আমি মনে করি এই সময়ের জন্য এটি দরকারী। এখন একটি অস্থির, অস্থিতিশীল সময়, এর পরিবর্তন দরকার এবং সেই পরিবর্তনটি সকল খারাপকে বাদ দিয়েই যেন আমরা করতে পারি।
ব্লগ যেন হয়ে ওঠে সত্যিকারের একটি মুক্ত চিন্তার চর্চাস্থল । উট পাখির মত মুখ গুজে খারাপকে খারাপ না বলার মধ্যে আমি কোন সৎসাহস দেখিনা। একটি কথা আমি এখানে কোন জেনারালাইজেশন করছিনা যার ফলে আমার ব্ক্তব্যকে ভিন্ন খাতে নেবার চেষ্টা না করলে খুশী হবো।
শুরুর কথাগুলি একটু বড় হয়ে যাওয়ায় দু:খিত কিন্তু এই কথাগুলি না বললে এর পরের কথাগুলি অ-প্রাসঙ্গিক লাগতো -
এবার কি চাই এবং কি চাইনা
- মুক্ত চিন্তার চর্চাক্ষেত্র হিসাবে ব্লগ দেখতে চাই । আমরা সেইসব মানুষদের আমাদের সাথে চাই যারা যারা যুক্তিতে থাকতে চান । ব্লগকে তর্ক-বিতর্কের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে চান ।
- ব্লগে স্বাধীনতার চেতনার প্রতিফলণ দেখতে চাই । এই প্রতিফলণ শুধু কথার প্রতিফলন নয়, বাস্তব চিন্তার প্রতিফলন । মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মুক্তির জন্য । মুক্তিযুদ্ধের ফসল বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মুক্তির জন্য কার্যকর চিন্তাভাবনার প্রকাশ দেখতে চাই ।
- ভার্চূয়াল জগতে রাজাকার চিন্হিত করণ একটি কঠিন এবং বিতর্কিত কাজ । এই কাজটি ব্লগাররা করতে গেলে তা আরো ব্যক্তিসুবিধাকেন্দ্রিক একটা প্রক্রিয়ায় পরিণত হয় । একটা পরিস্কার নীতিমালা দেখতে চাই , স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী কোন পোষ্ট প্রথম পাতায় থাকবেনা। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ কতজন? এটা কি গৃহযুদ্ধ ছিল? যুদ্ধাপরাধ হয়েছে কি না? এই সব প্রশ্ন তোলা চিন্তার স্বাধীনতা নয়, এগুলি হচ্ছে আস্ফালন এবং হীন স্বার্থে বাস্তবতাকে অস্বীকার করা। এই ভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোন পোষ্টকে ব্লগে রাখা যাবেনা। কোন ধূয়া তুলেই নয়। ব্লগ কর্তৃপক্ষকে এই ধরণের পোষ্ট আসা মাত্রই মুছে ফেলতে হবে ।
- ব্লগে গালাগালি দেখতে চাইনা । কোনভাবেই না । চিন্তার প্রকাশে দৈন্যতা থাকলেই গালাগালি আসে প্রকাশ মাধ্যম হিসাবে। গালাগালির ক্ষেত্রে এর বাইরে কোন সত্য নেই, যা আছে তা হলো বানানো সত্য ।
- ব্লগে অশ্লীলতা এবং ব্যক্তি আক্রমণ চাইনা। সেটা কোন আদর্শের আড়ালে থেকেই নয়। বিশেষ করে কোন নারীর প্রতি কু-ইঙ্গিত বা মুখের ভাষায় ধর্ষণ তো নয়ই । আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, যুদ্ধাপরাধীরা আমার মা - বোনদের উপরে যে বর্বরতা চালিয়েছে, অনলাইনে আদর্শের দোহাই তুলে কোন ভাবেই কারো যুদ্ধাপরাধীদের মত আচরণকে মেনে নেয়ার কোন কারণ নেই । আমার ভাষায় পার্থক্যটা হলো মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীরা ইসলামকে ব্যবহার করেছে আর এখন কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করছে ।
- ব্লগে কোন রেসিজম দেখতে চাইনা । রেসিজম এর স্থান বর্তমান বিশ্বে নেই । কেউ যদি অশ্লীলতা আর রেসিজম করে তবে তার প্রতিবাদ করার সৎসাহস দেখতে চাই । এখানে একটি প্রাসঙ্গিক কথা বলি - গত দুয়েকদিনে "কালোবিড়াল" নামের এক ব্লগার একের পর একের রেসিষ্ট এবং অশ্লীল মন্তব্য করেছে । আমি যখন এর প্রতিবাদ করলাম তখন আমাকে রাজাকার, মীরজাফরের বাচ্চা, জারজ ইত্যাদি বলা হলো। একমাত্র "নেই মানুষ" চাড়া আর কাউকে কোন প্রতিবাদ করতে দেখলামনা । এমনকি একজন বিশিষ্ট ব্লগার আমাকে "কমরেড কালোবিড়াল" এর প্রতিবাদ করায় চুপ করতে বললেন এবং "কালোবিড়াল" কে তারমত করে প্রতিবাদ করতে দিতে বললেন। পরিস্কারভাবে বলি এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়। এটা ভুল ছিলো । তখন সবারই এই ধরনের চিন্তার প্রতিবাদ করা দরকার ছিল । মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অশ্লীলতা, রেসিজম আর গালাগালি শেখায়নি।
- ব্লগে সু-নির্দিষ্ট আইন চাই এবং সেই আইন সকলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ দেখতে চাই । কর্তৃপক্ষ যদি আইন করে প্রয়োগ করতে না পারেন তাহলে ব্লগ চালাতে পারবেননা। আপনাদের লোকবলের অভাব থাকলে ব্লগারদের কাছ থেকে সাহায্য নিন । সকল সাইটই এভাবে মেম্বারদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রাণবন্ত থাকে
এবার একটি জিনিস জানতে চাই । যারা স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং যারা মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাস করেন তাদের কাছে জানতে চাই -
সামহোয়্যারইন একটি ওপেন প্ল্যাটফর্ম। একটা ই-মেইল এ্যাড্রেস হলেই একটা একাউন্ট খোলা যায় । গালি দিয়ে..ফ্ল্যাডিং করে...ব্লগ স্তব্ধ করে দিয়ে কতজন প্রতিক্রিয়াশীলকে থামানো যাবে? থামালাম এক দলকে। কিন্তু তারপর তারাই আবার আরেক ই-মেইল ব্যবহার করে (ওয়েবমেইল এর ১০০ একাউন্ট খোলা কোন ব্যাপার নয়), ভিন্ন নিকে আসবে। আবার তারা পোষ্ট দেবে... আবার গালিবাজি হবে... ফ্ল্যাডিং হবে.. বিষ্ঠার ছবি আসবে... ব্লগ স্তব্ধ হবে। এই চক্র কতবার চলবে? এর শেষ কোথায়?
একবার চিন্তা করে দেখুনতো!! এর ফলে কারা লাভবান হচ্ছে?
এর ফলে কি মুক্ত চিন্তার চর্চা যারা করতে চান, স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সাধারন ব্লগার তাদের লেখালিখি, চিন্তার প্রকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে না? আমরাই তো সংখ্যায় অনেক বেশী। তাই নয় কি? একবার ভাবুন । আমরা কেন আমাদের লেখালিখিকে চিন্তার প্রকাশকে রুদ্ধ করছি?
তার চাইতে কি এটার ভাল নয়?
আমরা প্রতিক্রিয়াশীল, ধর্মান্ধ, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চিন্তাধারাকে সরাসরি উপেক্ষা করা । লেখালিখি আর চিন্তার মাধ্যমে এদের অস্তিত্ব অস্বীকার করা !! তাদের কোন পোষ্টে কোনভাবেই না যাওয়া, কোন মন্তব্য না করা । এছাড়া সহজ ভাবে দুটো ব্লগ টুলই তো আছে... নিজেদের ব্লগে তাদের ব্লক করে রাখা । আমরা সংখ্যায় অনেক বেশী, সৃষ্টিশীলতা আমাদের অনেক বেশী । আমরাই জয়ী হবো, এতে কোন সন্দেহ নাই ।
আর সরাসরি দেশবিরোধী কোন পোষ্ট দিলে কর্তৃপক্ষকে সংগে সংগে ব্যবস্থা নিতে হবে ।
আমরা সামহোয়্যারইন ছেড়ে যেতে চাইনা । কেন ছাড়বো? আমাদের কথা আর চিন্তা দিয়ে সামহোয়্যারইনকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ মুক্ত চিন্তার ব্লগ ক্ষেত্রে পরিণত করবোই ।
(অনেক লম্বা হয়ে গেল লেখাটা, যারা মন্তব্য করবেন, পোষ্ট পড়ে মন্তব্য করবেন)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


