somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তগদ্য -১

২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিন অফিস থেকে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফিরি। কোনো দিন পেটে কিছু একটা দিয়েই শরীর এলিয়ে দিই বিছানায়। ক্লান্তিতে চোখের পাতা জুড়ে নেমে আসে রাজ্যের ঘুম। আবার কোনো কোনো দিন চাইলেও দু চোখের পাতা এক করতে পারি না৷ এরকম এক নির্ঘুম রাতে হঠাৎ মনে পড়ে যায় উপমার কথা। উপমার সাথে আমার সম্পর্কের কোনো প্রচলিত নাম দিতে পারি না৷ আমরা বন্ধু নই, নই প্রেমিক প্রেমিকাও। তবে আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক কী? এ যেনো এক জটিল ধাঁধা৷ সর্বোপরি আমাদের সম্পর্ক থেকে গেছে এক ভীষণ টানাপোড়েনে, এক নিবিড় অস্থিরতায়। তখন একে একে মনে পড়ে যায় বহু বছর আগের টুকরো অনেক স্মৃতি।

কোনো এক জ্যোস্না রাতে আমরা পাশাপাশি বসে আছি৷ কেউ কোনো কথা বলছি না৷ কেননা দীর্ঘদিন পর আমাদের দেখা হলে আমরা পরস্পরের কাছে নিজেকে সহজভাবে তুলে ধরতে পারি না৷ আমার এই সংকোচবোধ কোনো ভণিতা না। যেনো প্রকৃতিপ্রদত্ত। উপমাই সবসময় এরকম গুমোট পরিস্থিতিকে করে ফেলতো স্বাভাবিক। নীরবতা ভেঙ্গে সে আমার কাছে জানতে চায় কিছুদিন আগে ঢাকায় হওয়া গোলমাল সম্পর্কে। আমাদের কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে। এক জেনারেল দেশ জুড়ে কায়েম করেছেন স্বৈরশাসন। নূর হোসেন নামে এক যুবক মারা যায়। আমি এসব গল্প শোনাই উপমাকে। অন্য সময় হলে আমার গল্পের ভান্ডার ফুরিয়ে যেতো দ্রুতই৷ কেননা একজন অন্তর্মুখী মানুষ হওয়ায় আমার মনে যতসব কথা ঘুরপাক খায়, মুখ ফুটে প্রকাশ করতে পারি না তার সিকিভাগও। এ যেনো এক নিরাময়ের অযোগ্য কোনো ব্যাধি যা আমাকে বয়ে বেড়াতে হবে আমৃত্যু। কিন্তু সেদিন যেনো আমার মুখে কথার ফোয়ারা ছোটে৷ হয়ত কাছ থেকে বিপ্লব দেখে আমার ভিতরের নির্লিপ্ততা পালিয়ে গেছে। আমাদের কথা চলতে থাকে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়। দেশের এই আলোচনা ছাপিয়ে আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে দৃষ্টিপাত করি। উপমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসছে দীর্ঘ দিন ধরে৷ এ নতুন কিছু না৷ কিন্তু এক আমেরিকা প্রবাসী যুবকের প্রস্তাবে তার বাবা মার মন গলতে শুরু করেছে। উপমার মনও যে গলতে শুরু করেছে এটাও টের পাই আমি। তবে কি মনে করে যেনো বলে ফেলি, ‘আমার মনে হয় তোমার সাথে আমারই বিয়ে হবে, এবং তা হবে খুব শীঘ্রই।’
উপমা হেসে ওঠে। যেনো আমি কোনো জোক্স বললাম। চাঁদের উজ্জ্বল আলোর সাথে তার এই হাসি মিলেমিশে পরিবেশটাকে ভীষণ অপার্থিব মনে হয়৷ উপমা জিজ্ঞেস করে, ‘তোমার হঠাৎ এমন মনে হবার কারণ?’
‘আমার সিক্সথ সেন্স বড্ড প্রবল’
‘কই? আগে তো কখনো বলো নি!’
‘এখন তো বললাম।’

বুদ্ধিমান পাঠকরা ইতোমধ্যে ধরে ফেলেছেন যে আমার সিক্সথ সেন্স মোটেও প্রবল না৷ আমার আর উপমার বিয়ে হয় নি। সে পাড়ি জমিয়েছে আমেরিকায়। অনেকদিন আগের এসব স্মৃতি আমাকে বিপাকে ফেলে দেয়৷ ‘কেউ কারও জীবনে অনিবার্য না’ এই সত্য আমি জানি। উপমাকে ছাড়া আমার জীবনও কেটে যাচ্ছে বেশ৷ জীবনকে ঘিরে রাখা এই নিঃসঙ্গতা, একাকীত্ব আমি উপভোগ করি। তবুও যখন কোনো স্যাড এন্ডিং উপন্যাস পড়ার পর ভিজে ওঠে আমার চোখের পাতা, ঠিক তখনই আপনাআপনি মনে পড়ে যায় উপমার কথা৷ ভাবি আমার সাথে উপমার সম্পর্ক নিয়ে। এও ভাবি এই সম্পর্কের কী নাম দেওয়া যায়? হুমায়ূন আজাদের একটা কবিতার লাইন আমাকে তখন উদ্ধার করে৷ কবির কাছ থেকে ধার করা কথা নিয়ে উপমার নাম দিই ‘তুমি মোর আঁখিপাতে চিরদিন জমে থাকা জল’।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৪৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×