somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

দালির ঘড়ি ও আমাদের বুদ্ধিজীবীদের গলে পড়া

৩০ শে জুন, ২০২০ সকাল ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘দ্য পারসিসটেন্স অব মেমোরি বা স্মৃতির অধ্যবসায়’ সালভাদর দালির সবচেয়ে রহস্যময় ও আলোচিত ছবি। এই ছবিটি দেখে যে যা ইচ্ছা ভাবতে পারেন। বহুজন বহুভাবে ভেবেছেন। এই ভাবনা বাড়তেই থাকবে। এই ছবিটি দেখে আমার বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের কথাই মনে হয়। চারটি ঘড়ি আমাদের চারজন প্রধান বুদ্ধিজীবীকেই নির্দেশ করে যেন। যে লাল ঘড়িটা টেবিলে পড়ে আছে। তাকে পিঁপড়া নামের লোভ খেয়ে ফেলছে। তাকে ছোট ছোট দুর্বৃত্তরা ঘিরে ধরেছে, সমষ্টিগত আক্রমণে দংশন করে তার মগজ গলিয়ে দিয়েছে। তার রক্তমিশ্রিত গলিত মস্তিষ্ক জমে আছে পাদদেশে। সে হয়তো কবি বা ঔপন্যাসিক বা প্রাবন্ধিক। গলা মস্তিষ্ক থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অর্থ আর পুরস্কার তাকে নিস্তেজ করে দিয়েছে। সামনে থাকা দিগন্তের বিশালতার কাছে তিনি অর্থহীন। পরাজিত হওয়ার এক করুণ উপাখ্যান। তিনটি বুদ্ধিজীবী ঝুলে আছে ডাইনিং টেবিলে, গাছের ডালে ও একটি মানব আকৃতির নীল পাথরের উপর। আকাশ ও সমুদ্রের নীল জলের মতো তারাও দংশনে নীল হয়ে গলে পড়ছে। রাজার কাছে যেভাবে প্রজারা গলে পড়তো। স্তুতি করতে করতে যেভাবে কবিয়াল গলে যেতো। কবিতা থেকে, প্রবন্ধ থেকে যেভাবে গলে গলে পড়ে স্তুতি সেরকম গলে যাচ্ছে ঘড়িগুলো। আরেকটি ঘড়িতে মাছি বসেছে। মনে হয় প্রলোভন যেন চুষে নিচ্ছে বুদ্ধিজীবীর প্রাণ। দালির প্রতিকৃতি বলে উল্লেখিত যে পাথরটিতে ঝুলছে একটি ঘড়ি সে পাথরের চোখ বন্ধ, শান্ত নির্জীব, মৃতপ্রায়। এ পাথরটিও আকাশ সমুদ্র ও ঘড়ির মতো বেদনায় নীল ও মুহ্যমান। যেখানে প্রতিফলিত আমাদের আরেক বুদ্ধিজীবীর নির্মম অক্ষমতা। পাথরটিও লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। আমাদের বিষণ্ন এক সময়ের প্রহেলিকা। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের সঠিক রূপচিত্র দালির এই ছবি। দালি তার এই ছবির মধ্যে অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজি। ঘড়িগুলো তাদের গলে যাওয়া কাকে দেখাচ্ছে? তারা গলতে গলতে সামনের সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবেন না অন্ধকার ক্ষমতা তাদের খেয়ে ফেলবে? গলতে গলতে কিভাবে তাদের কাটাসম সচলতাগুলো নিঃশ্বেষ করে দিচ্ছেন? বিবেচনাবোধ, বুদ্ধির স্ফূলিংগ, শাণিত মেধা সব যেন স্থবির হয়ে থেমে গেছে- ঘণ্টা, মিনিট ও সেকেন্ডের কাটার মতো। আমাদের বহুজনকেই চারটি ঘড়ির মধ্যে সেট করা যায়। তারা লেখায়, বলায় ও চলায় নিজেদের ব্যক্তিত্বের বৃত্তকে ভেঙ্গে গলিয়ে দিয়েছেন।

সারা বিশ্ব কি ভাবে দালির চিত্রকর্মটি নিয়ে?

এ ছবির প্রধান চরিত্র চারটি ঘড়ি। ঘড়িগুলোর অভিব্যক্তিতে যুক্তির অতীত এবং কালাতীত অবস্থাকেও ধরতে চেয়েছেন দালি। এখানে সময় বর্তমানে লুপ্ত কোনো প্রাণীর মতো। এখানে সময় ঝুলে পড়েছে কাপড়ের মতো, নিঃশেষ হতে চলা মোমের মতো। গলে পড়েছে মাখনের মতো। তিনি ছবিটি এঁকেছিলেন গরমে চীজ গলে যাওয়া দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে। চীজ গলে যাওয়া দেখে একটি গলে যাওয়া ঘড়ির কল্পনা তার মাথায় এসেছিল তার! সাদা গলিত পনিরের দিকে চেয়ে দালির মনে হলো সময় এভাবেই চলছে, গলে পড়ছে, রূপান্তরিত হচ্ছে। ক্রমে গলিত পনিরের জায়গায় উপস্থিত হলো ঘড়িগুলো। সময়ের অস্থিরতা স্মারক ঘড়িগুলোর কোনোটাই সদর্থকতার ইঙ্গিত দেয় না। অসংখ্য পিঁপড়ে ঘিরে আছে টেবিলে পড়ে থাকা আরেকটি লালচে ঘড়ি। এখানে সময় দংশিত কালো পিঁপড়াদের সমষ্টিগত আক্রমণে। পিঁপড়ের দংশনে মুছে গেছে ঘড়ির সময়ের সমস্ত সংখ্যা। ঘড়ির শরীর রক্তাক্ত। ঘড়ির যে গোলাকার ডায়াল সময়ের ঘূর্ণমানতাকে প্রকাশ করে, সেই বৃত্তের বেড়ি ভেঙে পড়েছে এ ছবিতে। এখানে সময় সাগরবেলায়, সাগরে, সাগরপাড়ের পাহাড়ে, দূর আকাশে। বহমান সময়ের এক করুণ উপাখ্যান। এখানে সময় পায়ের কাছে এবং এখানে দৃষ্টির অজান্তে ধাবমানতা আছে। আরো আছে বিশাল পর্বতের নিচে ক্ষুদ্রতম অনুষঙ্গ। তিনটি নীল ঘড়ি ঝুলে আছে ডাইনিং টেবিলে, গাছের ডালে ও একটি মানব আকৃতির নীল পাথরের উপর। আকাশ ও সমুদ্রের নীল জলের মতো ঘড়িগুলোও দংশনে নীল হয়ে গলে পড়ছে। আরেকটি ঘড়িতে মাছি বসেছে। সেই ঘড়ির ভেতরকার নীল জল পান করছে মাছি। বিলুপ্ত প্রাণীর মতো হারিয়ে যাচ্ছে সময়, বদলে যাচ্ছে রঙ। দালির প্রতিকৃতি বলে উল্লেখিত যে পাথরটিতে ঝুলছে একটি ঘড়ি সে পাথরের চোখ বন্ধ, শান্ত নির্জীব, মৃতপ্রায়। এ পাথরটিও আকাশ সমুদ্র ও ঘড়ির মতো বেদনায় নীল ও মুহ্যমান। যেখানে প্রতিফলিত মানুষের নির্মম অক্ষমতা। হারিয়ে যাওয়া বিষণ্ন এক সময়ের প্রহেলিকা। সময়ের এক অনন্য বয়ান দালির এই ছবি। দালি তার এই ছবির মধ্যে দিয়ে হয়তবা স্বপ্নলোকে সময়ের অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিজের মনের জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজেছিলেন। কিংবা তিনি হয়তো এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, স্বপ্নলোকে সময় বলে কিছু থাকে না। সময় সেখানে এক অলীক কল্পনা মাত্র। সময়ের অনুপস্থিতিতে স্বপ্নলোকে যেটার অস্তিত্ব থেকে যায়, সেটা হচ্ছে শুধুই স্মৃতি।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×