somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ!

৩১ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের পাঠাগারের পক্ষ থেকে গত একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের স্কুলে একটি বই প্রদর্শনীর আয়োজনের ঘোষণা দিলে একটি চিহ্নিত মহল বিরোধীতায় নামে। সেটা এমন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে ভাবতেই পারিনি।

আমি অফিস টাইমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকি না। একুশে ফেব্রুয়ারির কদিন আগে দশটার দিকে আমার একটি পোস্টে একটি ফেক আইডি থেকে হযরত মোহাম্মদ (স.) সম্পর্কে অপ্রাসঙ্গিকভাবে খুবই জঘণ্য মন্তব্য করে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ফেসবুক ওপেন করে দেখি ওই ফেক আইডির মন্তব্যের জের ধরে ওই চিহ্নিত মহল গালিগালাজের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। আমি ওই ফেক আইডির মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে মন্তব্যটি হাইড করে দেই। ওই ফেক আইডিতে কোন ছবি ছিল না, সে আমার ফেসবুক বন্ধুও নয় আবার ব্যক্তিগতভাবেও চিনি না।

ওই চিহ্নিত মহল সারাদিন আশেপাশের মাদ্রাসাগুলোতে গিয়ে ওই মন্তব্য পড়ে শুনিয়ে হুজুরদের উত্তেজিত করে তূলল। তারা বলে আসলো ওই মন্তব্য আমারই। বিভিন্ন জন জানালো একুশে ফেব্রুয়ারি বই প্রদর্শনীতে হুজুরগণ হামলা চালাবেন, সমাবেশ করবেন। শ্রীনগর প্রেসক্লাবে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলছিল। তারাও এই সুযোগে আমাকে ওই অভিযোগে অব্যাহতি দিল/বরখাস্ত করল। ঘটনায় আমি হতভম্ব ও বিস্মিত হলাম। আমাদের লাইব্রেরির সদস্যরা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ‘বই প্রদর্শনী’ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও তা প্রকাশ করা হল না পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য। এরমধ্যে একে একে কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী ফোন করে জানান যে, তারা হুজুরদের বুঝিয়ে বলেছেন যে, ‘কেউ অনাহুত মন্তব্য করলে তার দায় পোস্ট দাতার উপর বর্তায় না। এছাড়া পোস্টদাতা মন্তব্যের প্রতিবাদও করেছেন।’

ভাবলাম ঝামেলা শেষ। এবার ‘বই প্রদর্শনী’ করবো। এরমধ্যে উপজেলার একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ফোন করে জানালেন, আমি নাকি হুজুরদের ক্ষেপিয়ে তুলে একুশে ফেব্রুয়ারিতে সরকারের বিরুদ্ধে সমাবেশ করাচ্ছি!’ যারা মাদ্রাসায় গিয়ে আমার পোস্টের মন্তব্য দেখিয়ে হুজুরদের খেপিয়ে তুলে অরাজকতা তৈরি করতে চেয়েছিল তাদের একজনই তাকে বলেছে এবং রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করার জন্য গ্রেফতার করানোর জন্য অনুরোধ করেছে। শীর্ষ নেতার সাথে সাক্ষাৎ করে বুঝিয়ে বললাম। তিনিও খোঁজ নিলেন এবং বুঝলেন। আমরা নির্বিগ্নেই ‘বই প্রদর্শনী’ করতে পারলাম। এসব বিষয়ে সমাধানের আগেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ঘটনাতেই দেখা গিয়েছে, আইডি হ্যাক করে ইসলাম বিরোধী পোস্ট দিয়ে মারমুখি জনতার মুখে ঠেলে দিয়েছে। মারমুখি জনতার হাতে কয়েকজন নিহত হয়েছেন, তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। এরপর জানা গিয়েছে ওই লোক মোবাইল সারাই করতে দিলে মেকানিক তাকে ফাঁসাতে এ কাজ করেছে। কখনো মোবাইল হ্যাক করে করেছে। পাকিস্তানেও এমন ঘটনা অহরহ ঘটে। বহু হত্যার ঘটনাই ঘটে এ কারণে। দুটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে-
এক চিকিৎসক একজন গ্রাহককে তার গবাদি পশুর জন্য ওষুধ দেন স্কুলের ইসলাম শিক্ষা বইয়ের একটি পাতা দিয়ে মুড়িয়ে । আরবী লেখা পাতায় ওষুধ দেয়ায় ইসলাম অবমাননার অভিযোগ এনে তার ক্লিনিক ও পার্শ্ববর্তী দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয় ব্লাসফেমি আইনে।
পাকিস্তানে যাত্রীর ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক ট্যাক্সি ড্রাইভার চিৎকার করে ঘোষণা দেয় তার যাত্রী ইসলামকে অবমাননা করে কথা বলেছেন। জনতা ওই যাত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে জানা যায় ওই যাত্রী ছিলেন ধর্মভীরু এবং ভাড়ার দ্বন্দ্ব নিয়ে ড্রাইভারই মিথ্যা রটিয়েছিল।

বাংলাদেশেও একের পর এক ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটছে। গত ২৯ অক্টোবর ২০২০ লালমনিরহাটের পাটগ্রামের ঘটনা খুবই হৃদয় বিদারক। সেখানে জনৈক শহিদুন্নবী জুয়েল বিকেলে একজন সঙ্গীসহ বুড়িমারীতে ওষুধ কিনতে আসেন। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরীফ নামাতে গিয়ে অসাবধনাতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই পড়ে যায়। এ সময় তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি হয়। বাইরে রটিয়ে দেয়া হয় কোরআন অবমাননার কথা। এক মেম্বার তাদের ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে এক কক্ষে আটকে রাখলেও উত্তেজিত জনতা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করে পুড়িয়ে হত্যা করে। কেউ অবশ্যই মিথ্যা ধর্ম অবমাননার কথা ছড়িয়েছে। এ মৃত্যুর দায় সম্পূর্ণই তাদের। হত্যার অভিযোগে তাদের বিচার করা দরকার।

এর আগে আরো অসংখ্য ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ উঠে নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে। অনেকগুলো ঘটনাতেই প্রমাণিত হয়- যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দুজন শিক্ষার্থীকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তার ফেসবুক হ্যাক হওয়ার বিষয়ে থানায় জিডিও করেছিলেন। তাকে ৬দিন ধরে খুঁজেও পাচ্ছে না পরিবার। দেশে একের পর এক মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বহু ক্ষয়ক্ষতি হলেও যারা মিথ্যা রটনা দিয়ে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়টা দেখছি না। এদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলেই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু বন্ধ করা যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:২৫
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×