প্রায় একই সময়ে দুটি ঘটনা প্রকাশিত ও আলোচিত হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ঋতু কুণ্ডর সাথে কয়েক মাস আগে যখন পরিচিত হই তখনও তিনি ইসলাম গ্রহণ করাই ছিলেন। তাঁর নাম ও বোরকা-হাতেপায়ে কালোমোজা পরা দেখে অবাক হয়েছিলাম। নাম হিন্দু কিন্তু পোশাক মুসলমানের। তাঁর বিয়ে, সন্তান গ্রহণ ও ডিভোর্স ইত্যাদি নিয়েও কথা বলেন। সন্তানটি তার সাথেই আছে। ঠিক মনে পড়ছে না- ওনি কি মুসলিম বিয়ে করার পরেই মুসলিম হন না ডিভোর্সের পরেই এমন অনুরাগী হন। মানে ঘটনাটা হঠাৎ সামনে এলেও বেশ কয়েক বছর আগেরই। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসনে পড়াশোনা করেছেন এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। বিভিন্ন ধর্ম পড়ে তার মনে হয়েছে ওগুলো মানুষের লেখা। কোরান পড়ে তার মনে হয়েছে এটা ঐশ্বরিক। এমন তুলনা আমরা দেখেছি মরিস বুকাইলির লেখাতেও। তবে মরিস মুসলিম হননি।
একই সময়ে আলোচনায় আসেন কুয়েতের বিখ্যাত মুসলিম গায়িকা ইবতিসাম হামিদ। তিনি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করেছেন। কারণ হিসেবে বলেছেন- ইহুদী ধর্ম নারীদের প্রতি বেশি সহিষ্ণু। তিনি ইসলামকে ভণ্ড ও আতঙ্ক ধর্ম বলেও কটুক্তি করেন। তিনি দাবি করেন, ইসলাম মহিলাদের সম্পূর্ণ অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং খারাপ কাজ করতে বাধ্য করে। তিনিও দাবি করেন কোরান পড়ার।
প্রায় একই সময়ে দুটি ঘটনা বাংলাদেশে প্রচারিত হওয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তবে সাম্প্রতিক কালে বিয়ে করে ধর্মবদল ছাড়া সাধারণত ধর্ম বদলের ঘটনা দেখা যায় না। কিছু বিখ্যাত মানুষও বিভিন্ন কারণে সাম্প্রতিক কারণে ধর্ম বদল করেছেন। প্রথমে ইসলামত্যাগকারীদের কথা বলি। শ্রীলংকার বিখ্যাত ক্রিকেটার তিলকরত্ন দিলশান ও সুরজ রণদ্বীপ ইসলাম ছেড়ে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। প্রখ্যাত অভিনেত্রী নার্গিস সুনীল দত্তকে বিয়ে করে হিন্দু হন। ভারতের সেতার বাদক আলাউদ্দিন খানের কন্যা রুশনারা খান রবিশঙ্করকে বিয়ে করে অন্নপুর্ণা দেবী নাম নেন ও হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন। ইন্দোনেশিয়ার অভিনেত্রী-লেখক হ্যাপী সালমা, ভারতীয় অভিনেত্রী আশা গাওলী, সংগীত শিল্পী আশিস খান, অভিনেত্রী জুবাইদা ইত্যাদি অনেকে বিয়ের কারণে ইসলাম ছেড়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন। কিছু লেখকও রয়েছেন যারা হিন্দু হয়েছেন। খৃস্টান হয়েছেন আরো অনেকে। ভারতীয় অভিনেত্রী নাগমা খৃস্টান হয়েছেন।সালমান রুশদি, ননী দারবিশসহ বহু মুসলিমই ইসলাম ত্যাগ করে অন্য ধর্মগ্রহণ করেছেন বা ধর্মহীন হয়েছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে মুফতি মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাসুদের ইসলাম ত্যাগ করা ছিল আলোচিত। আফিস মহিউদ্দিনসহ সহ আরো বেশ কয়েকজনও ইসলাম ত্যাগ করেছেন আদর্শগত কারণে।
তবে বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীও রয়েছেন। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলি ক্লে ও মাইক টাইসন এর মতো মুষ্ঠিযোদ্ধা, পাকিস্তানের ক্রিকেটার ইউসুফ ইউহানা (নতুন নাম মোহাম্মদ ইউসুফ), সংগীতজ্ঞ এ আর রহমান অন্যতম। বিভিন্ন কারণে মানুষ ধর্ম পরিবর্তন করে। বিশেষ করে বৌদ্ধ ধর্মগ্রহণকারীদের কেউ কেউ এর অহিংস মতাদর্শ দ্বারা আকৃষ্ট হন। ইসলাম ধর্মগ্রহণকারীরা অনেকে এর সাম্যতার কথাও বলেন। হিন্দু ধর্মগ্রহণকারীরা এর সংস্কৃতি দ্বারা আকৃষ্ট হন। খৃস্টান ধর্মগ্রহণকারীরা উদারতার কথা বলেন। তবে খৃষ্ট ধর্মে দীক্ষা দেয়ার জন্য বিপুল প্রচারপ্রচারণার ব্যবস্থা রয়েছে। সাম্প্রতিক কালে অন্য ধর্ম থেকে ভাগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে খৃস্টানরাই হয়তো এগিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা বিপুল অর্থ ব্যয় করে।
অনেকেই ধর্ম ত্যাগ করে আবার স্বধর্মে ফিরে আসার অনেক নজিরও রয়েছে। প্রধান চারটি ধর্মের মধ্যে এই গ্রহণ/ত্যাগের ঘটনাও তেমন বেশি নয়। খুবই কম বলেই কেই ধর্ম ত্যাগ করে নতুন ধর্ম গ্রহণ করলে তা আলোচিত হয় ও পত্রিকার শিরোনাম হয়। আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখেছি- সাধারণত বিয়ে করতে গিয়েই মানুষ ধর্ম বদল করে। যে দেশে যে ধর্মানুসারী বেশি সে দেশে সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মই মানুষ গ্রহণ করে নিরাপদ থাকে। বাংলাদেশে যেমন হিন্দু মেয়ে/ছেলেরা (সংখ্যায় খুবই নগণ্য) বিয়ে করে সাধারণত মুসলিম হন। আবার ভারতে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে। শ্রীলংকায় এমন পরিস্থিতিতে মানুষ বৌদ্ধ ধর্মই গ্রহণ করে। ইউরোপে গিয়ে বিয়ে করে বহু হিন্দু/মুসলিম/বৌদ্ধই খৃস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত দুজন খৃস্টান নারীকে দুবার বিয়ে করেন। তাদের উত্তরপুরুষরা আজও খৃস্টান। প্রখ্যাত টেনিস খেলোয়াড় নিয়েন্ডার পেজ মাইকেল মধুসূদন দত্তেরই বংশধর।
ভারতের মিডিয়া কেউ বিয়ে করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করলে খুবই গুরুত্ব দিয়ে নিউজ ছাপে। কিন্তু কেউ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করলে তারা তা গোপন করে যায়। বাংলাদেশেও এমনটাই দেখি। রিতুু কুণ্ডু মুসলিম হয়েছেন বিষয়টি খুবই ভাইরাল হয়েছে। পত্রিকাগুলো তার বক্তব্য ব্যাপকভাবেই প্রচার করেছে। কিন্তু কুয়েতের বিখ্যাত মুসলিম গায়িকা ইবতিসাম হামিদ এর ইসলাম ত্যাগ করে ইহুদি ধর্মগ্রহণকে বাংলাদেমের পত্রিকাগুলো ব্লাক আউট করে। এই গ্রহণ বা ত্যাগ নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে সাম্প্রতিক সময়ে ইসলাম গ্রহণকারী ও ত্যাগকারীর সংখ্যা সারা বিশ্বে প্রায় সমান। শুধু দরিদ্র মানুষকে লোভের ফাঁদে ফেলে বিশ্বজুড়েই খৃস্টান মিশনারীরা তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে শুধু জন্ম হার কমের কারণেই তাদের এতো ব্যয়ের পরেও খৃস্টানদের সংখ্যা বাড়েনি। বরং জন্মহার বেশি থাকায় মুসলিম ও হিন্দুদের সংখ্যাই দ্রুত বাড়ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:২০