somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষতান্ত্রিকতার ধ্বজভঙ্গ সমাজতত্ত্বঃ “নারীর ইজ্জতই তার প্রধান সম্বল”

২৫ শে জুন, ২০০৯ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

... সিনেমার ল্যাদল্যাদা দৃশ্য, মেয়েটি আরেকটু পর রেপড হবে, চিৎকার করে ভিলেনকে বারণ করছে ইজ্জত কেড়ে না নিতে। সাথে এও দোহাই দিচ্ছে যে তার ইজ্জত চলে গ্যালে আর কি বাকি রইল । ভিলেন ছাড়ার পাত্র না। অতঃপর রুপালী পর্দায় বজ্রপাতের দৃশ্য, বানের জলে পাড় ভেঙ্গে পরার দৃশ্য ... সব শেষ ... সবই গেলো।

পরবর্তি দৃশ্যে মেয়েটা ছেড়া শাড়িতে ঘরে ফিরে, মায়ের বুকচেরা কান্না, এইটা কি হইলো রে এ এ ... তোর আর কি বাকি রইল রে এ এ এ ...

পরের পরিচিত দৃশ্য, মেয়েটির বন্ধ করা ঘর ভেঙ্গে ঢুকে সবাই আবিস্কার করবে, মেয়েটি ফ্যানের সাথে ঝুলছে ... সিনেমা হল কেপে উঠবে মায়ের তীব্র চিৎকারে ... আবার বজ্রপাতের দৃশ্য, বান ভাঙ্গার দৃশ্য ... এবার সত্যি সব শেষ ... সবই গেলো।

... খালি সিনেমার কথা বললাম, এভাবে উপন্যাসে, থিলারে, দৈনিক পত্রিকা এমনকি ধর্মগ্রন্থের নায়িকা (চোখ কপালে ঊঠলে পড়ুন ধর্মগ্রন্থের কোন নারী চরিত্র) পর্যন্ত সবারই একমাত্র সম্বল তার ইজ্জত। কোন আপদ সময়ে ধর্ষনের স্বীকার হলেই তার সব শেষ।

... এবার আসি বাস্তবে, অভিসার স্পট ধানমন্ডি লেক ... জুলিয়েট কোন কারণে তার রোমিওর উপর খুশি, ওয়াদা করে বসে যে, সে তার চরম এবং পরম ধন ইজ্জত'কে শুধু রোমিওর কাছেই সপে দিবে। রোমিওর কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা এখানে মূখ্য নয়, তাই আলোচ্যও নয়।

সমাজে একটা মেয়ে বড় হয় এটা শুনতে শুনতে যে, তার ইজ্জতই তার জীবনের একমাত্র চরম এবং পরম ধন । এটা ছাড়া তার ইহজগতে আর কোন মুল্য নেই । কি মা কি বাবা ... কি ভাই কি স্বামী সবাই তাকে দেবীর আসনেই রাখবো, যদি তার ইজ্জত ঠিক থাকে ।

... এই যে মেয়েটার দুইটা হাত আছে, পা আছে, মাথা আছে ... লাখো ছেলেকে পেছনে ফেলে বোর্ডে স্ট্যান্ড করে ... লাখো মানুষকে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে চাকরি পায় ... তার একমাত্র সম্বল তার ইজ্জত । আর কিছু নয় ... একবার যদি কোন ক্রমে কোন অনাকাঙ্খিত সময়ে অনাকাঙ্খিত পুরুষের অনাকাঙ্খিত অঙ্গটি মেয়েটির জগৎকাঙ্খিত অংশে প্রবেশ করে বসে তাহলেই সব শেষ ... সব গেলো ।

তার প্রতিভা, তার সাধনা, তার স্বপ্ন, তার লড়াই, তার আজীবন সকল অর্জন ... এই অনাকাঙ্খিত সময়ের অনাকাঙ্খিত পুরুষের অনাকাঙ্খিত অঙ্গটির মেয়েটির জগৎকাঙ্খিত অংশে প্রবেশে ... একেবারে ধুলায় মিশিয়ে গেলো সব।

... অপর দিকে একটি ছেলে যদি দুর্ঘটনাক্রমে এরকম পরিস্থিতির স্বীকার হয় (মানে সোজা কথায় হোগামারা খায়) তো তার ক্ষেত্র একটূ হাসাহাসি , বন্ধুদের টিকাটিপ্পনি, মা-বাবার " আহারে আমার সোনার পোলাটা" ... এই শেষ ... কয়েকদিন পরেই সবাই ভুলে যাই ... মাঝে মাঝে হাসির খোরাক হয়ে গল্পটির পুনঃচর্চা ... ব্যাস এই শেষ।


... সমাজ পত্তনের প্রথম পর্বে যখন সামাজিক তত্ত্ব দিয়ে এর কাঠামো দাঁড় করানো হচ্ছিল বোধ করি তখন থেকেই ... এর নির্বাহী পুরুষ কর্তারা
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই তত্ত্বটি ঢুকিয়ে দেয় যে ... নারীর সতীত্বই তার প্রধান অবলম্বন, সম্বল।

... খুব সম্ভব, নির্মল কুমারী যোনির প্রতি অমোঘ আকর্ষন আর তার স্বাদ নেয়ার লোভ থেকেই এই তত্ত্বের উদ্ভব। আর নিজের দুর্বল যৌনক্ষমতায় নারী যেন পরমুখি না হয়, সেই ভয় তো আছেই।




... উপরে যে সিনেমাটির দৃশ্য আপনারা দেখলেন তার নির্মাতা কারা, ভোক্তা কারা, ভুক্তভোগি কারা ?
এখানে দয়া করে কেবল সিনেমাটিকেই ভাববেন না ... এই যে উপন্যাস, থ্রিলার, গল্প, কবিতা নাটক, ধর্মগ্রন্থের কাহিনি, ইতিহাসের পাতা, প্রাত্যহিক নারীর সাবধানতা অবলম্বন ... সব কিছু সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সমাজতত্ত্বেরই ধারাবাহিকতা।

মোরাল ঐ একটাই ,""তুমি নারী ... সতীত্বই তোমার প্রধান এবং পরম সম্পদ ... ইহাকে স্বেচ্ছায় অনিচ্ছায় নষ্ট করিলেই তুমি শেষ ... তোমার সব শেষ ...""



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০০৯ রাত ১০:৪৯
১০৫টি মন্তব্য ৮৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৩৯

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৪১

ছবিঃ আমার তোলা।

আজকে সাত রোজা।
সময় আসলে অনেক দ্রুত যায়। গতকাল সুরভি আর ফারাজাকে নিয়ে গিয়েছিলাম শপিং করতে। কারন আমি জানি, ১৫ রোজার পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বাসীকে লজিকের কথা বলার দরকার কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১৭




হনুমান দেবতা এবং বোরাকে কি লজিক আছে? ধর্ম প্রচারক বলেছেন, বিশ্বাসী বিশ্বাস করেছেন ঘটনা এ পর্যন্ত। তাহলে সবাই অবিশ্বাসী হচ্ছে না কেন? কারণ অবিশ্বাসী বিশ্বাস করার মত কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের শাহেদ জামাল- ৭১

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



শাহেদ জামাল আমার বন্ধু।
খুব ভালো বন্ধু। কাছের বন্ধু। আমরা একসাথেই স্কুল আর কলেজে লেখাপড়া করেছি। ঢাকা শহরে শাহেদের মতো সহজ সরল ভালো ছেলে আর একটা খুজে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×