somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো লাগা প্রিয় গল্প : : রূপের ডালি খেলা

১২ ই জুন, ২০১০ রাত ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এনা, বেনা,রেস....’
কুইন্তের কন্তের জেস!’

বইয়ের আলমারি খুঁজতে গিয়ে পেয়ে গেলাম সেই গল্পের বইটা, রূপের ডালি খেলা! গায়ে ধুলো জমেছে!রাশান বই, ননী ভৌমিক এর অনুবাদ! এই বই পড়ার পরে ইউ. ইয়াকভলেভকে কত খুঁজেছি, সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করেছি, পাইনি!খানিকটা স্মৃতি কাতর হয়ে পড়লাম।আমি অনেক ভেবেছি, এটা বাচ্চাদের বই কিনা! রামধনু সিরিজের বই এটা, বাচ্চাদের হওয়াই উচিৎ! বাচ্চাকালে এই বই আমি বুঝিনি, গল্পগুলোর নায়ক হয়তো বাচ্চারা কিন্ত গল্পটা আর তাদের থাকেনি! খুব সাধারন এই গল্পগুলো খুব স্বাভাবিক ভাবে শুরু হয় আর একটু পরেই রোমকুপে ঢুকতে থাকে, অস্তিত্বের অংশ হতে শুরু করে!
সবগুলো গল্পই অসাধারন তবে রূপের ডালিখেলা আমার সবচে প্রিয়...

“ কার মাথা থেকে বেরিয়েছিল জানিনা, তবে আমাদের বেশ মনে ধরেছিল । পুরোনো পপলার গাছের দলটা জুটলেই নির্ঘাত কেউ না কেউ বলে উঠতো:
‘আয় রূপের ডালি খেলি!’
সবাই দাড়াতাম গোল হয়ে, ছড়া বলে গুনে যেতাম কে মাঝখানে দাঁড়াবে:
এনা, বেনা,রেস....’
কোন এক দুর্বোধ্য ভাষার এই কথা গুলো ছিল ঠোঁটস্থ:
কুইন্তের কন্তের জেস!’
কেন জানি সাত নম্বর ফ্লাটের নিনকাকে মাঝখানে দাড় করাতে ভালবাসতাম, চেষ্টা করতাম যাতে ছড়াটা গিয়ে ওর কাছে গিয়ে শেষ হয়। চোখ নামিয়ে সে তার ফ্রকে হাত বোলাতো! আগে থেকেই তার জানা থাকত যে তাকেই মাঝখানে গিয়ে দাড়াতে হবে রূপসী হয়ে!

কিন্তু নিনকা কি রূপসী ছিল ?

“ এখন আমরা বুঝি যে সাত নম্বর ফ্লাটের নিনকা ছিল অসাধারন অসুন্দর: চওড়া খাদা নাক ছিল তার, মোটা মোটা ঠোঁট, তার চারপাশে আর কপালে রুটির গুড়োর মত ছুলি। বিবর্ণ চোখ।সোজা অঘন চুল। হাঁটতো পা ঘষে ঘষে, পেটটা সামনে এগিয়ে দিয়ে।কিন্ত এসব আমাদের চোখে পড়তোনা। যে ন্যায়পর অজ্ঞতায় আমরা তখন ছিলাম তাতে ভালো মানুষ কে ধরা হতো সুন্দর,খারাপ কে অসুন্দর!আর সাত নম্বর ফ্লাটের নিনকা ছিল গুনি মেয়ে, তাকেই আমরা সুন্দরী করতাম!”

দেখুন তো ছেলে বেলাতেই আসলে আমাদের বোধবুদ্ধি কেমন ঠিক থাকে!

“ মাঝখানে ও দাড়ালেই খেলার নিয়ম অনুসারে আমাদের ‘মুগ্ধ হতে’ হতো- প্রত্যকেই আমরা প্রশংসা করতাম বইয়ে পড়া কোন না কোন কথা দিয়ে। কেউ বলতো:
‘কী সুন্দর গলা , রাজহাঁসের মতো’
‘রাজহাঁসের মত নয়, মরাল গ্রীবা,’ সংশোধন করে দিয়ে আরেকজন খেই টানতো,
কী সুন্দর প্রবালের মত ঠোঁট....’
‘কী সুন্দর সোনালী চাঁচর।‘
চোখ ওর ইয়ে... ইয়ে...
কেবলি তুই ভুলে যাস! সাগরের মত নীল।
জ্বল জ্বল করে উঠত নিনকা। ফ্যাকাশে মুখে গাঢ় লাল ছোপ। পেটটা গুটিয়ে নিয়ে সে লীলাময়ীর মত একটা পা এগিয়ে দিত! আমাদের কথা গুলো হয়ে উঠতো আয়না, নিনকা তাতে নিজেকে দেখতো সত্যিকারের রূপসী।
আমাদের ও মনে হতে থাকতো সবকিছুই ওর মরাল, প্রবাল,মুক্তার মতো। আমাদের নিনকার মতো রূপসী আর নেই!”

এ কারনে নিনকা কখনো আয়নায় নিজেকে দেখেনি, তার দরকার হয়নি কখনো! বিপত্তি টা বাধায় নতুন আসা ছেলেটা, নিনকা ছেলেটার প্রেমে পড়ে! ছেলেটা প্রথমে টের পায়নি নিনকা যে সবখানে তাকে অনুসরন করে ,যখন টের পেল, সে ভীষন চটে গেল। “আগে আয়নায় নিজেকে দেখগে যা ”!
নিনকা ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারেনা, ভীষন লাজুক ছিল নিনকা ,দমে যায় ভেতরে ভেতরে! এতদিনকার জীবন্ত আয়নার বদলে সে প্রথমবারের মত এসে দাড়ায় ঠান্ডা, নিস্করুন আয়নার সামনে!

মৃত আয়নাটা এতদিনকার রুপসীকে খুন করলো!

এই গল্পটার শেষ দিকে হঠাৎ করে বিষন্নতা এসে জাপটে ধরে, সাত নম্বর ফ্লাটের নিনকাকে রক্ত মাংসের মানুষ বলে মনে হয়, বিষন্নতা ধীরে ধীরে রক্তের ভেতরে ঢুকে পড়ে, ভাসিয়ে নিয়ে যায়!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১০ দুপুর ১২:৫৭
১৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×