জীবিত অথবা মৃত প্রাণীর শরীর মাত্রই কোননা কোন প্রাণীর আহার।জীবিত মানুষের মাংস অনেক মাংসাশী প্রাণীর প্রিয় আহার হলেও তারা মানুষের মাংস ভক্ষণ থেকে বঞ্চিত হয়, কারণ মানুষ বুদ্ধির কারণে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা, ফলে আকৃতিতে ছোট হলেও অনেক বৃহৎ, হিংস্র ও শক্তিশালী প্রাণীর আক্রমণ থেকে সে নিজের শরীর ও প্রাণকে রক্ষা করতে ।হিংস্র মাংসাশী প্রাণীকে বঞ্চিত করে মানুষ জীবিত অবস্থায় অন্য প্রাণীর মাংস ভক্ষণ করলেও মৃত্যুর পর তাহার গলিত ও পচা শরীরকে পোকা মাকড়কে খাদ্য হিসেবে সপে দিতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ, মানুষ অন্য প্রাণীর মাংস খেয়ে বেঁচে থাকার ঋণের শোধ জীবিত অবস্থায় করতে না পারলেও প্রাকৃতিক নিয়মে তার মৃত্যুর পর মৃত দেহ পোকা মাকড় ও কীট পতঙ্গকে খাবার সুযোগ দিয়ে শোধ করে।আবার জীবিত মানুষের শরীরের উপর ভর করে কৃমি তার প্রাণের স্বাদ গ্রহণ করে থাকে।মানুষ শুধু অন্য প্রাণীকে খায়ই না উকুন ও মশার মতো ক্ষুদ্র প্রাণীদেরকে তার রক্ত খাইয়ে বাঁচিয়েও রাখে।সৃষ্টি প্রকৃতির নিয়ম খাও এবং নিজেকেও খাওয়াও। আমি নিজে না চাইলেও সৃষ্টি প্রকৃতি এই ভাবেই চলছে এবং চলবে।অর্থাৎ এককে খেয়ে অন্যের জীবনের সুখ উপভোগ।এই নিয়ম এক দৃষ্টিকোন থেকে নিষ্ঠুর হলেও অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে অপার অনিন্দ্য সুন্দর।
উপরোক্ত আলোচনাটুকু করার কারণ আজ মুসলিম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কোরবানির ঈদ।এই দিনে সারা পৃথিবীতে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রচুর চতুষ্পদ প্রাণী জবেহ করা হয় এবং এই জবেহ করা মাংসের আবার ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী সুন্দর একটি বণ্টন ব্যবস্থা রয়েছে।
নিয়ম হচ্ছে কোরবানির মাংস বানানোর পর সব মাংস সমান তিনভাগে ভাগ করতে হবে। মাংস সমান তিন ভাগ করার পর এক ভাগ সমাজের নিম্ন বৃত্ত মানুষের জন্য , এক ভাগ আত্মীয়স্বজনকে এবং এক ভাগ নিজে খাওয়ার জন্য রাখা হয়।
কোরবানির গরুর আরেকটি অংশ হচ্ছে চামড়ার টাকা। যা সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদেরকে প্রদান করা হয়ে থাকে।
এই কোরবানির ফলে সমাজের যে শ্রেণীর মানুষের ম্যাকডোনাল্ড, কে এফ সি খাওয়ার সামর্থ নেই,এমন কি সারা বছরে একদিনেও মাংস কিনে খাওয়া হয়না তাদের ন্যূনতম মাংসের স্বাদ নেবার সুযোগ ঘটে।
কিন্তু প্রতি বছর কোরবানি ঈদ আসলেই কোরবানির এই মুসলিম রীতিকে কেন্দ্র করে কিছু ম্যাকডোনাল্ড,কে এফ সি , শুকুরের মাংস খাওয়া এবং পায়ে পশুর চামড়ার জুতা পরা উদারপন্থী মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোরবানির পশুর জবেহ হওয়ার কষ্টে কাতর হয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রূপে সরব হয়ে ওঠেন।অনেক উদারপন্থী বিদ্বান রয়েছে যারা কোরবানির মাংস দিয়ে ভূড়ীভোজ করার পর কোরবানির পশুর গলায় ছুরি চালানোর ব্যথায় ব্যথিত হয়ে ফেচবুকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এই রীতির তুখোড় সমালোচনার ঝড় তোলেন।
এমন উদারপন্থীদের প্রতি পরামর্শ, এ ধরনের সমালোচনার পূর্বে প্রতিজ্ঞা করুণ আজ থেকে কোন প্রাণের থেকে নিজের প্রাণের উপকরণ সংগ্রহ করবো না (উদ্ভিদ এবং প্রাণী) । দরকার হলে নিজের শরীর কৃমি, উকুন,মশা, ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য উপকরণ বানাবো কিন্তু নিজে পানি এবং বাতাস খেয়ে পৃথিবীর এই খাওয়া খাওয়ি নিয়মের প্রতিবাদ করে পোকা মাকড়কে এই রক্ত মাংসের দেহকে দান করে দেবো ……।
সবাইকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা ……
শ্লোগান হোক… নিজে খাই এবং অন্যেকেও মনের আনন্দে খাওয়াই ...।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫