পৃথিবীর কোন কিতাব বা জ্ঞানের কোন শাখা ইসলাম ও বিজ্ঞানকে পরস্পরের বিপরীতমুখী করে দাঁড় করিয়েছে কিনা তা আমার জানা নাই। আজকালকার বেশীরভাগ মানুষ যেখানে বিবেক ও যুক্তিনির্ভর সেখানে যুক্তিকেই যদি শুদ্ধতার মাপকাঠি হিসাবে নির্ণয় করা হয় তবে দেখা যাবে বিজ্ঞান মানবজাতির কল্যানের জন্য আর ধর্ম মানবজাতির অধিকতর কল্যানের জন্য। তাহলে কেন মানুষে মানুষে বিবাদ-বিভেদ?
অনেকে বিশ্বাস করেন ধর্ম মানুষকে মানুষের মধ্য হতে পৃথক করে রেখেছে। মানুষের মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে ধর্ম- এমন বিশ্বাসীর সংখ্যাও কম নয়। ব্যাপরটা আসলে তেমন নয় মোটেও। মানুষ নিজেদের স্বার্থে ধর্মকে মোডিফাই করেছে, পরিবর্তন-পরিবর্ধন করেছে নিজ নিজ ধর্মের। ধর্মকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করেছে শুধুমাত্র নিজেদের পৈশাচিক মনের খোরাক মিটাতে গিয়ে।
এটা সম্ভব হয়নি শুধুমাত্র ইসলামের বেলায়। ইসলামে বেসিক আনুষ্ঠানিকতা বা মূল ইবাদাত মুসলমানদের মধ্যে হাজারো বিভক্তি স্বত্বেও পুরো পৃথিবীজুড়ে একই রকম রয়ে গেছে। পৃথিবীর সবত্র 5 ওয়াক্তই সালাত আদায় করা হয়, সাওম বা রোযা পালন করা হয় নির্দিষ্ট মাসে (রমযান মাসে), হ্জ্ব ও কুরবানি করা হয় জিলহজ্জ মাসে। সর্বত্রই যাকাত দেয়া-নেয়ার বিধান রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা পৃথিবীর সর্বত্র যেখানেই যাই না কেন প্রত্যেক মুসলমান বিশ্বাস করে আল্লাহ এক এবং রাসুল স. আল্লাহর রাসুল। এই একটিমাত্র কালিমা পৃথিবীর মুসলমানদের দেশে দেশে ইবাদত বন্দেগী করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও সুকোমল ধারণা প্রদানে সমর্থ হয়েছে। ইসলামের এই সীমাহীন বোধগম্যতার কারণে ইসলাম বিদ্বেষীরা হাজারো অপচেষ্টার পরেও আজো কালিমার পতাকা পৃথিবীর বুক হতে নিশ্চিন্হ করে দিতে পারেনি আর পারবেও না। কেননা পৃথিবীর সকল মুসলমানের প্রভু একজন, নবীও একজন। সুতরাং হাজারো প্রভু, হাজারো অবতারের ক্ষমতা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ হওয়ার সম্ভবনা একেবারেই নেই।
ইসলামের পরিচালনা ক্ষমতা যখন একক স্বত্বার হাতে তখন অন্যান্য ধর্মাবলিম্বরা তাদের মুল আনুষ্ঠানিকতায় ব্যপক পরিবর্তন এনেছে যুগে যুগে। সংস্কারের নামে ধর্মীয় রীতি নীতিতে নিজেদের ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে ধর্মকেই পরিবর্তন করছে কেউ কেউ। সেই অজুহাতকে দৃষ্টান্ত করতে গিয়ে মুসলমান নামধারীদের মধ্যেও অনেককে দেখা যায় ধর্মীয় সংস্কারের কথা বলতে। না বুঝে হোক বা অতি বুঝার কারণে হোক এমন আচরণকারীকে ইসলাম মুসলমান হিসাবে গণ্য করে না। সংস্কার, মধ্যম পন্থা, সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে গিয়ে ধর্মের বিকৃতি সাধনের ফলশ্রতিতে পৃথিবীর বুকে আজ সুখের বড় অভাব। এই সুযোগে একশ্রেণীর দলবদ্ধ জীব ধর্মের অসাড়তা তুলে ধরতে গিয়ে বিজ্ঞান ও ধর্মকে পরস্পরের মুখোমুখি করে দাঁড় করিয়েছেন। (চলবে)