সমাজের অসঙ্গতি - পর্ব-০১
মোঃ খুরশীদ আলম
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ যখন কারো চাকুরীর উদ্দেশ্যে অর্জন করা হয় তখন সেই ব্যক্তির চাকুরী না হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত। “এই নিয়োগপত্র আপনার নিয়োগের চূড়ান্ততা ঘোষণা করেনা” - ঘোষণাটি যেমন তেমনি কোন শিক্ষাই আপনাকে চাকুরীর নিশ্চয়তা দিবে না- এটা সর্বজনজ্ঞাত ব্যাপার। শিক্ষা গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য যদি হয় চাকুরী করা তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দরকার কি? কোন রকম এস.এস.সি পাশ করেইতো কোন না কোন আয়ের পথ অবলম্বন করা যায়। আসলে সমস্যা হচ্ছে আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারি নাই যে, কি কারণে লেখাপড়া করছি।
শিক্ষা গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানবিক মন তৈরি করা। আমার বিচারে যিনি মানবিক তিনিই শিক্ষিত। যিনি মানবিক নন তিনি ডিগ্রিধারী হলেও সমাজ তার কাছে কি পাবে তা বোধগম্য সহজেই। আপনি দেখেছেন, বেকার-অর্ধবেকার, শিক্ষিত-আধাশিক্ষিতদেরকে আমাদের দেশের সব সরকারের আমলেই জাতীয়ভাবে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী করে গড়ে তোলার চেষ্টা প্রতিনিয়ত চলে আসছে। প্রক্ষিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষনার্থীদেরকে ভাতাও প্রদান করা হচ্ছে। অথচ সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া রানিং রেখে খুব কম শিক্ষার্থীরাই অংশগ্রহণ করে। যারা অংশগ্রহণ করে অন্যান্য ছাত্ররা তাদেরকে অনগ্রসর ও গরীব বলে হেয় করে।
শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি পছন্দ মতো ছোট ছোট ট্রেডে প্রশিক্ষণগ্রহণ করে নিজেকে ভবিষ্যত কর্মযজ্ঞের জন্য তৈরী করার মতো মানসিকতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীর যেমন অভাব তেমনি অভিভাবকেরও অভাব। এই ক্ষেত্রে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা অনেকটা এগিয়ে আছে আমার বিবেচনায়।
একটি উদাহরণ দিই- মাদরাসা হতে ৮ম শ্রেণী পাশ করে একজন ছাত্র নূরানী ট্রেনিং নিয়ে যে কোন প্রাথমিক নূরানী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতে পারে। মিনিমাম টু মিনিমাম তাদের ৮০০০ টাকা সম্মানী ভাতা দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ৮ম শ্রেণী পাশ কোন শিক্ষার্থী কি সেটা পারে? পারে না। সেখানে আমি দেখিছি পাড়ালেখার পাশাপাশি তারা কাপড় সেলাই, চুল কাটা, আতর-সুরমা-রুমাল-কাপড় ইত্যদি বিক্রি করার মতো কাজ করে থাকে। এই কাজগুলো একই সাথে একজন ছাত্রের আয়ের উৎস হয় অন্যদিকে ভবিষ্যত উদ্যোক্তা হিসাবেও অভিজ্ঞতা দান করে। আমাদের ছেলেরা যেমন আমরা মা-বাবারাও তেমন। আমরা কখনোই মনে করিনি আমাদের সন্তানরা কিছু করতে হবে। এক গ্লাশ পানিও তাদের দ্বারা ঢেলে নিই না- কারণ সন্তান এখনো ছোট এই অজুহাতে। জন্মের পর থেকেই আমরা স্বপ্ন দেখি সন্তান জর্জ হবে, ডাক্তার হবে, পাইলট হবে, উকিল-ব্যরিস্টার হবে। আবদুল্লাহ আবু সাইদ স্যারের কোন এক সেমিনারের উক্তি ছিল যেটা এখনো মনে পড়ে- তিনি ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করলেন, কে কি হতে চান? উপস্থিত ছাত্রদের সবাই বড় বড় লোক হতে চায় কিন্তু শিক্ষক হতে চান - এমন কাউকে পাননি। তাই অধ্যায়ন শুধু চাকরীর জন্য নয়, বড় পেশাদার হবার জন্য নয়, হওয়া উচিত মানুষের মতো মানুষ হওয়ার জন্য এবং পাশাপাশি ছাত্রজীবনেই ভবিষ্যত কর্মযজ্ঞের জন্য নিজেকে তৈরী করার সময় হওয়া উচিত। তাহলে হতাশা থাকবে না।