somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নের মাঝেই বাস্তবতা

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা ছোটবেলা থেকেই রূপকথার গল্পগুলো হয় বইয়ে পড়েছি না হয় দাদা-দাদী কিংবা নানা-নানীর মুখ থেকে শুনেছি । আসলে এই রূপকথার গল্পগুলো পুরোটাই অবাস্তব এবং কল্পনার জগতে সীমাবদ্ধ হলেও এগুলো কিন্তু বেশ মজর এবং শুনতে ও পড়তে ভালোই লাগে । ছোটবেলায় সবার মাঝেই এই ভাবনা আসে , ইস ! যদি এই জগতে একবার ঢুকা যেত তাহলে কেমন মজা হত । সে এক আজব চিন্তাভাবনা । তবে পুরোপুরি মজার বিষয় এটি একটি ।

আজ আমি আপনাদের শুনাব জনের কথা । পুরো নাম জন রেক্সেমা । বাবা রেস্তেম রেক্সেমা আর মা নাইমুন রেক্সেমার একমাত্র সন্তান এই জন রেক্সেমা । পুরোপুরি বাবা-মায়ের চোখের মণি সে । এবার ক্লাস সিক্সে উঠেছে । বয়স বার কিংবা তের বছর । জনের পড়াশুনায় অনেক মনোযোগ যার প্রায় অর্ধেক বিজ্ঞানের প্রতি । সে যখনই সময় পায় তখনই বিজ্ঞান বই পড়ে । ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস টেনের সব বিজ্ঞান বই তার এই বয়সেই পড়া হয়ে গেছে । তাই তো আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা যেসব বিজ্ঞানীদের নাম বড় হয়েই জানতে পারে জন তাদের নাম ছোটবেলা থেকেই জেনে আসছে । তার প্রিয় কাজ কিছু আবিস্কার করার চেষ্ঠা করা । এই জন্যই সে টিভির রিমোট থেকে শুরু করে কম্পিউটারের যাবতীয় জিনিস খুলে খুলে নতুন নতুন কিছু জানার চেষ্ঠা করে । অন্য কেউ হলে এতকিছু নষ্ট করার জন্য বাবা-মায়ের বকুনি খেত । কিন্তু জন এইদিক থেকে সম্পূর্ণই নিরাপদ । তাকে বরং আরও উৎসাহ দেয়া হয়। জনের বাবা-মায়েরও ইচ্ছা ছেলেকে বড় বিজ্ঞানী করে গড়ে তোলার । ইদানিং জনের একটি বদঅভ্যাস হয়েছে । সে প্রায় মাঝেই মাঝেই বিজ্ঞান বই পড়তে পড়তে এর মাঝে ঢুকে যায় মানে বিজ্ঞানের জগতে ঢুকে যায় । কখনো সে ঐ জগতে এক ঘণ্টা থাকে কখনো আবার তিন কিংবা চার ঘণ্টা থাকে । একবার সর্বোচ্চ ছয় ঘণ্টা ছিল সে । অনেকের কাছেই মনে হতে পারে এ কি সম্ভব নাকি ? কিন্তু সত্যি, জনের সাথে এমনটাই ঘটেছে । একদিনের ঘটনা আজকে আপাদের সাথে শেয়ার করবো । অবশ্য জনের কথাতেই ।

একদিন জন বিজ্ঞান বই পড়তে পড়তে বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ করলো । প্রবেশ করা মাত্রই সে দেখলো সে এক বিরাট মাঠে দাড়িয়ে আছে । অনেক বড় আর সবুজ মাঠ । এরপর সে খেয়াল করলো মাঠের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে একটি বিরাট নদী । কিন্তু নদীটা ভালভাবেই খেয়াল করে সে বুঝলো নদীতে পানি নেই । পানির বদলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন পরমাণু । তারা একে অন্যের সাথে জড়িয়ে আছে । জন আর দাড়িয়ে না থেকে নদীর পাড় ঘেঁষে হাঁটা শুরু করলো । হাঁটতে হাঁটতে সে অনেকদূরে এসে দেখতে পেল একটি মেয়েকে । কিন্তু মেয়েটির চারপাশে আর কেউই নেই । জন মেয়েটির আর কাছাকাছি গিয়ে দেখলো মেয়েটি কাঁদছে । জন মেয়েটির সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিল । জন যখন মেয়েটির একেবারে কাছাকাছি গেল তখন মেয়েটিও জনকে খেয়াল করলো কিন্তু তার মাঝে কোন প্রকার ভাবান্তর দেখা গেল না । জন এক্সকিউজ মি দিয়ে কথা বলা শুরু করলো । মেয়েটি এইবার জনের দিকে তাকাল । মেয়েটি জনের থেকে বয়সে বড় এবং বেশ সুন্দরী । জন মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করলো । মেয়েটি তার নাম বললো ক্লোরিন (Cl) । নামটি শুনে জন অবাক হয়ে গেল । জন ক্লোরিনকে আবার জিজ্ঞেস করলো সে এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদছে কেন ? তখন ক্লোরিন একটি লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তার দুঃখের কথা জনকে বলা শুরু করলো । জনকে ক্লোরিন জানালো যে তার বাবা আর্গন (Ar) তার প্রেমিক সোডিয়ামের (Na) সাথে বিয়ে দিতে রাজী হয়েছেন । এমনকি সোডিয়ামের মা নিয়ন-ও (Ne) ক্লোরিনের সাথে সোডিয়ামের সাথে বিয়ে দিবেন বলেছে । মানে তিনিও রাজী । জন বুঝতে পারলো না তাহলে সমস্যা কোথায় ? তাহলে ক্লোরিন কাঁদছে কেন ? জন বুঝতে না পেরে ক্লোরিনকে জিজ্ঞেস করলো তাহলে তোমাদের বিয়েতে সমস্যা কোথায় ? তবুও তুমি কাঁদছ কেন ? তখন ক্লোরিন বললো আমাদের সমাজে একজন ঘটক সাহেব আছেন । ইলেকট্রন (e) মশাই । আমাদের শাস্ত্রমতে কোন বিয়ের সময় যদি ঘটক সাহেব অসুস্থ থাকেন তাহলে সেই বিয়ে মানে হল অমঙ্গল । আবার ইলেকট্রন মশাইয়ের কি রোগ হয়েছে তা কোন ডাক্তারই বের করতে পারছেন না । কোন ওষুধেই সে সুস্থ হচ্ছে না । এভাবে তার বিয়ের কথাবার্তা চলাকালীন সময় থেকে দুই বছর পার হয়ে গেছে । আর কতদিন লাগবে কে জানে ? কিন্তু সোডিয়ামকে ছাড়া সে এতদিন থাকবে কিভাবে ? জন কেন জানি কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করলো ইলেকট্রন মশাই কোথায় আছেন বাসায় না হাসপাতালে ? ক্লোরিন তাকে জানালো এতদিন পরমাণুর হাসপাতালে ছিলেন এখন নিজ বাসায় আছেন মানে পরমাণুর কক্ষপথে । তার স্ত্রী প্রোটন (p) তাকে দিনরাত সেবা করছে । জনের কেমন জানি জানতে ইচ্ছে হল যে নিউট্রন (n) তাহলে এখানে কে ? সে ক্লোরিনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো । তার এই হঠাৎ জিজ্ঞাসা সত্ত্বেও ক্লোরিন অবাক হলনা । সে উত্তর দিল, ও নিউট্রন । সে তো ইলেকট্রন মশাই ও প্রোটনের ছেলে । প্রচণ্ড দুষ্ট । এত দুষ্ট হওয়া সত্ত্বেও মায়ের যক্ষের ধন সে । বয়স কম তো তাই সবসময় মায়ের আশেপাশেই ঘুরঘুর করে সে । ইলেকট্রন মশাই সবসময় পরমাণুর কক্ষপথে থাকলেও প্রোটন-নিউট্রন দুই মা ছেলে অধিকাংশ সময়ই নিউট্রনের নানাবাড়ি থাকে । মানে নিউক্লিয়াসে গিয়ে থাকে । সেখানে তারা বেশ আরামেই থাকতে পারে । নিউট্রনের মা তার নানা-নানির একমাত্র সন্তান । তাছাড়া নিউট্রনের নানা-নানি তো অনেক আগেই মারা গেছেন । তাই তাদেরও কোন অসুবিধা হয়না । কিন্তু সেখানে ইলেকট্রন মশাই যেতে চান না । কেন, কে জানে । তাছাড়া ইলেকট্রন মশাই অনেক গরীব তাই তিনি কিছু বলতেও পারেন না এই ব্যাপারে । ক্লোরিনের সব কথা খুব মনোযোগ দিয়েই শুনলো জন । তার গল্প শুনতে ভালোই লাগছে ।

হঠাৎ মনে হল জনকে ধরে কেউ ঝাকি মারছে । অনেক অনেকক্ষণ এভাবে ঝাকি মারার পর জন হঠাৎ তার সৎবিৎ ফিরে পেল । তার মা মিসেস নাইমুন রেক্সেমা এতক্ষন ধরে ওকে ডাকছিলেন । শেষে ও যখন উঠলো না তখন ঝাকাতে শুরু করেন । ওহ, তাহলে কি সপ্ন দেখছিল ? কিন্তু সপ্ন তো এমন হয়না । জন অনেকটা বিরক্তিভরেই তার মাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ধুৎ, মা, তুমি আমাকে ঝাকালে কেন ? তার মা, মিসেস নাইমুন রেক্সেমা বললো তোমার এক বন্ধু এসেছে অনেকক্ষণ আগেই । তুমি ঘুমাচ্ছিলে বলে আমি এতক্ষন তোমাকে ডাকিনি । কিন্তু ছেলেটাকে আর কতক্ষণ বসিয়ে রাখা যায় ? যাও, ফ্রেশ হয়ে ওর কাছে যাও । তাছাড়া তোমাকে না বলেছি এই দিনের বেলায় ঘুমাবেনা । তোমাকে তো অনেকবার বলেছি দিবালোকের হয় অবাস্তব এবং ভ্রম । তার মা বলেই সেখান থেকে চলে গেল কিন্তু এদিকে জন ভাবছে অন্য কথা । তার সপ্ন তো অবাস্তব আর ভ্রম নয় । সে তো এই সপ্নই হোক কিংবা বাস্তব কিছুই হোক, এর মাধ্যমে পরমাণুর গঠন সম্পর্কে জানতে পেরেছে । সে ফ্রেশ হবার জন্য ওয়াশরুমের দিকে যেতে থাকলো । যেতেই যেতেই সে ভাবতে লাগলো শেষ পর্যন্ত কি ক্লোরিন এবং সোডিয়ামের বিয়েটা হয়েছে ?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×