somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাদ্রাসায় নির্যাতনটা শুধু ছোটদের না, বড়দেরও করে !

১১ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৮ সালের কথা। ছারছীনা মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেনীর ছাত্র। একদিন আছরের নামাজ শেষে বরিশালী হুজুর মাইকে জানালেন দোয়ার পর সবাইকে বসতে হবে, বিচার আছে।



সত্যি বলতে সেই বয়সে বিচারটা নিজের নামে হলে দেখতে ভালই লাগে। দোয়া শেষ করে কলারদোয়ানীয়া হুজুর দাঁড়িয়ে ১ জন ছাত্রকে ডাকলেন। যাকে ডাকলেন তারই বিচার হবে আজ। তিনি নিজেও সেটা জানতেন,কারন আগে থেকেই জানিয়ে দেয়া হয় এই সব বিচারের কথা।

ছাত্রটি সামনে আসল। লম্বায় হুজুরের সমান। হুজুর নিজেও বেশ লম্বা ছিলেন৷ ছাত্রের দাড়ি আর হুজুরের দাড়িও সমান লম্বা। জামাটা হুজুরের ছিল সাদা আর ছাত্রের ছিল গাড় আকাশী। বয়স হুজুরের থেকে ৫-৬ বছর ছোট। ছাত্রটি কামিলের ছাত্র। বাংলিশে বুঝালে মাস্টার্সের ছাত্র।

হুজুর ছাত্রটির অপরাধ ঘোষনা করে আমাদের জানালেন। এই ছাত্র, ৬ দিন আগে বাড়িতে গিয়েছিল ছুটি নিয়ে। বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করেছে। বিয়ের সুবাধে তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে নোকিয়া ১৬০০ মডেলের একটা ফোন উপহার দিয়েছে। ভদ্রলোক সেটা নিয়ে ছুটি শেষে মাদ্রাসায় এসেছেন। এনে নিজের তোষক কেটে তার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছেন। রাতে বের করে একটু বউয়ের সাথে কথা বলেন।

প্রসংগে; মাদ্রাসায় তখন যে কোন ছাত্রদের মোবাইল চালানো নিষিদ্ধ।

ভদ্রলোকের এই মোবাইল লুকোচুরির কথা জেনে যায় কোন এক গুপ্তচর। মাদ্রাসায় হুজুরদের গুপ্তচর থাকে। আপনার পাশের জনও সেটা হতে পারে।
যাইহোক, মাঝরাতে যখন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন তখন ৩-৪ জন হুজুরের একটা দল তার রুমে প্রবেশ করে। যখন বউয়ের সাথে কথা বলছিলেন তখনই হাতে মোবাইল সহ ধরে ফেলে। মোবাইলটি হুজুরেরা নিয়ে যায়। আর জানিয়ে যায় যে, আগামীকাল আছরের পর বিচার হবে। মানে আজ এখন সেই বিচার হচ্ছে।

ভদ্রলোকের এই বিশাল অপরাধনামা শুনে সবাই এটা ভেবে হাসছিল যে, "ইস বউয়ের সামনে কি লজ্জা!" যারা এই লজ্জা দিত তাদের নিয়ে কেউ মন্তব্য করলেন না।
কলারদোয়ানীয়া হুজুর শাস্তি ঘোষনা করলেন। তাকে ৫০ টা জোড়া বেতের আঘাত করা হবে। কলারদোয়ানীয়া হুজুর বিচারের এই সুযোগটি লুফে নিতে বরিশালী হুজুরকে অফার করলেন। উনি ইমামতির জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে ছাত্রটির দুই হাতে হিসেব করে ৩৫ টা বেত মারলেন৷ এবার উনি ক্লান্ত। উনি আবার অফারটি ফিরিয়ে দিলেন কলারদোয়ানীয়া হুজুরকে। ২ জন মিলে শাস্তির পুরো ডোজ বাস্তবায়ন করে, এই বিচার দিয়ে হাজারও ছাত্রকে শিখানোর তৃপ্ত নিলেন। ভদ্রলোক ছাত্র বড় হওয়ায় শরীরের আর কোথায় বেত নিতে চাইলেন না। শুধু হাতে জোড়া বেত খেয়ে বসে পড়লেন।

গল্পটা শুধু এটা বুঝাতে লিখলাম যে, আসলে এই বিচার শুধু ছোটদের না। নিয়মের নামে একটা সদ্য বিবাহিত ছেলের প্রতিও করা হয়। সেদিন কেহ তার মানবিক দিকটা চিন্তা করে নাই। উল্টো আমি দেখেছি বেত খাওয়া ভাইটি যখন অযু করতে আসতেন তখন অনেকে আংগুল তুলে দেখাতেন আর এটা বলে মুচকি হাসতেন যে," ওই দেখ বউয়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে মাইর খাইছিল এই লোক"। অনেকে অবশ্য সহানুভূতিও দেখিয়েছিল।
কথা হচ্ছে নিয়মের নামে এইসব নির্যাতন আসলে নতুন কিছু না। আমরা জাতী হিসেবেই মূখ ভাংচিতে বরাবরই ভাল। তবে আজ মোবাইল আছে। মানুষ ভিডিও করে বিধায় আমাদের সামনে আসে। ভিডিও ছাড়া যে কত কিছু ঘটে যায় এই জগতে!

প্রতিষ্ঠান গুলোতে সিসি টিভি এখন সময়ের দাবী। আর হা; যারা বাবা-মা তারাও ছেলেকে মাদ্রাসায় রেখে আসার সময় হুজুরকে " হুজুর মাংস সব আপনার, আমাকেই হাড় গুলো দিলেই হবে" এটাও বলে আসবে না। আমার আমার জন্যও বলেছিল। আবার অনেকদের ক্ষেত্রে বলতেও শুনেছি।

ভাল থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:৫৮
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×