somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেস্টসেলার

১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ নিয়ে তিনদিন ধরে জরথ্রুস্ট প্রকাশনীর স্টলে বসে মাছি মারছেন সময়ের কর্ণধার কবি বজ্রযানী বজলু। বই মেলার এই হতশ্রী তিনি তার সাতানব্বই বছরের জীবনে আগে দেখেননি। একসময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী বইমেলার আজ এ কী হাল!!! তিনদিন ধরে তিনিসহ সবাই মাছি মারছেন। কোনো ক্রেতা নেই। নেই কোনো দর্শনার্থী। গত তিনদিনে পুরো বইমেলায় মাত্র এক কপি বই বিক্রি হয়েছে। ক্রেতা এক লাস্যময়ী। মুহূর্তের মধ্যেই সেই ক্রেতা সেলিব্রিটি হয়ে গেলেন। কিন্তু সাংবাদিকদের উপর্যুপরি জেরার মুখে তিনি বলে বসলেন আসল কথা। তিনি আসলে পাপুয়া নিউগিনিপন্থী কবি চার্বাক চাঁদ এর অতিমানবিক প্রেমিকা। চার্বাক শুধু তার পা ধরতে বাকি রেখেছিলেন। তাই তিনি এসেছেন। যদিও আসা-যাওয়ার ভাড়া, বই কেনার টাকা সবই চার্বাক দিয়েছে। তার বাসায় কেউ জানে না ব্যাপারটি। কিন্তু এভাবে ধরা পড়ে যাবে সেটাও কখনো ভাবে নি। কবিদের এই অধঃপতন দেখেও কষ্ট হয় না বজলুর। তিনি নিজেও গতবার হেলমেট পরে এসে নিজের বই নিজে কিনতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন। কী আর করার ছিলো তার? একটা বইও যদি বিক্রি না হয়, তাহলে তিনি মুখ দেখাবেন কী করে? কত লোককে অনুরোধ করলেন। কেউ এলো না। বজলুর বজ্রযানী কাব্যসাধনা ধোপে টিকছে না। অথচ কী প্রভাব আর জৌলুস ছিলো মেলার!! সারাদিন অটোগ্রাফ দিতে দিতে কলমের কালি ফুরিয়ে যেত। চুলে বেলী, জবা, অপরাজিতার মালা পরা লাস্যময়ীরা তার বপুলগ্না হয়ে সেলফি তুলতো। বিউটি ক্যামের বদৌলতে তার গোধুলির সোনালি আভায় রঞ্জিত দাঁত শুভ্র তুলোর রঙ ধারণ করতো। ইনবক্সে মেসেজের উত্তর দিতে দিতে কখন সকাল থেকে রাত কিংবা রাত থেকে সকাল হয়ে যেত সেটা বুঝতে পারতেন না তিনি। এতটা দুরবস্থা হবে সেটা তিনি কল্পনাতেও আনেননি কখনো। তার আজো মনে পড়ে মেলায় তার প্রথম দিনের কথা। তার প্রথম কাব্যগ্রন্ত্র 'বনলতার চেতনায় রডোডেনড্রন' এর মোড়ক উন্মোচন করেছিলেন তৎকালীন বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক শৈল্পিক সেন্টু। সাথে ছিলেন বিখ্যাত কবি মৃন্ময় মজনু। কী দিনই না ছিলো সেটা। মোড়ক-উন্মোচনের পর সাংবাদিকদের সামনে তিনি কাব্যগ্রন্থ থেকে পাঁচ লাইন আবৃত্তি করেছিলেন।

" ওহে অসূর্যস্পর্শ্বা মেয়ে!!
শহুরে নিয়ন আলোয় উদ্ভাসিত তুমি
এক সবুজ বনলতা।
তোমাতে সপেছি আমারি প্রেমের
রডোডেনড্রনের পাতা।"

উপস্থিত দর্শকের করতালিতে কানে তালা লেগে যাবার অবস্থা হয়েছিলো সেদিন। সুবর্ণ সময়ের কথা মনে করে বুকটা হু হু করে ওঠে বজলুর।তার চোখ দিয়ে অশ্রু নির্গত হয়। তার অমানবিক প্রেমিকা; যাকে উৎসর্গ করে বজলু লিখেছিলেন 'ছেঁড়াকাঁথার জমিনে আফ্রোদিতি' নামক এক কালজয়ী কাব্য যা একসময় ভাঙারির দোকানে কেজিদরে বিক্রি করে দিতে হয়েছিলো ; সেই অমানবিক প্রেমিকার কাছ থেকে উপহারপ্রাপ্ত পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে চোখ মুছে তিনি রওনা দেন নিজের বাড়িতে। আজ মেলার শেষ দিন। বইমেলায় পাঠকের অনাগ্রহ বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থা হয়েছে যে, কর্তৃপক্ষ মেলার দিন কমাতে কমাতে এখন তিনদিনে নিয়ে এসেছে। এবছর এই তিনদিনে একটা বইও বিক্রি হয় নি, শুধু চার্বাকের ঐ জোচ্চুরিটা ছাড়া। বাতাসে কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে, এর পরের বার থেকে মেলা হবে একদিনের জন্য। এটা শোনার আগে তার কেন মৃত্যু হলো না ভাবতে ভাবতে মেলার প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে যান বজ্রযানী বজলু। বের হবার সময় বজলু লক্ষ করলেন গত দুদিন গেটের সামনে কয়েকজন হকার ছালা বিছিয়ে কিছু বই নিয়ে বসেছিলো। আজ তারা কেউ নেই। "আহা রে! গরীব মানুষ! দুদিন বই বিক্রি করতে পারে নি বলে আজ আসে নি।" ওদের কষ্টে হৃদয় আর্দ্র হয় বজলুর। দুপুরের তপ্ত রোদে হাঁটতে হাঁটতে নিজের বাড়িতে গিয়ে স্নান-আহার সেরে ঘুমিয়ে নেন। ঘুম থেকে ওঠেন সন্ধ্যা ছয়টায়। আরেকটু পরেই মেলার সমাপ্তি ঘটবে। বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে রিমোট কন্ট্রোল চেপে টিভি চালু করলেন। মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করলেন মাননীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী সাংস্কৃতিক সেতু। দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে টিভি অফ করতে উদ্যত হলেন বজ্রযানী বজলু। কিন্তু টিভির স্ক্রলে একটা নিউজ দেখে তার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল। মনে মনে ভাবলেন, "হকারদের না আসার কারণ তাহলে এই!!" বজলু বিস্মায়াবিষ্ট চোখে স্ক্রলের সেই নিউজ দেখতে লাগলেন।

"এবারের বই মেলার বেস্টসেলার ’৩০ দিনে ইংরেজির জাহাজ'’ !!"


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৪৯
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×