যে দিন তুমি চলে গেলে
না, সে দিন একটুও কষ্ট পায়নি
এক ফোঁটাও কাঁদিনি
ঘরে বাইরে তখন উৎসবের আমেজ
কত অতিথী !
দু’চারটে ভালমন্দে, অভিবাদনে
সময় কই তখন আমার
তোমাকে ভাববার ।
বিস্তর ভুল বোঝাবুঝি শেষে, সুখ-দুখ
আদান প্রদানের মাধ্যম হিসাবে
তোমার প্রতি কৃতজ্ঞই রইল ওরা শেষতক।
আমার স্পষ্ট মনে আছে
ওরা তোমাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করল
ওর মধ্যে অজানা অনেকেই
তোমার বাড়ির সামনে ছিল।
বোধ হয় ভুল বললাম
কখনইতো তোমার বাড়ির
দরজায় কোন নেমপ্লেট ছিলনা
ভুলেই গেছি সেই কবে তুমি
তোমার ঠিকানা পরিবর্তণ করেছ
এভাবেই বোধ হয়
অন্ধকারের কোট পরে আসে সময়
দাঁড়ায় আলোর দরজায়
গিলে খায় শব্দ করা জুতা জোড়া
ছোট্ট সাফারী সেট, লাল কোর্তা
আর তোমার কাঁধে চোড়ে
আমার বাংলা প্রথম ভাগ
"চিক চিক করে বালি কোথা নেই কাদা
এক ধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা"
তোমার সময়, আমার সময়
মেলায় বারবার।
তুমি শিখিয়েছিলে
কিভাবে পেন্সিল কাঁটতে হয়।
ওটাই নাকি অনেক বড় হতে শেখায়।
তারপর কত শত পেন্সিল কেটেছি।
ধীরে ধীরে বুঝেছি তুমি ভুল ছিলে
এ শহরে তোমার খোকা আজ অযোগ্য।
তুমি হয়তো জানতেই না
পোশাকী মুখের মত
কত রঙই না বদলায়
নিয়নের এই শহরে !
নদীর মাঝখান থেকে তুমি বলতে
পানিতে নামিসনে খোকা, ডুবে যাবি
আমি নিশ্চিত নিরাপত্তায়
নেমে যেতাম গভীর পানিতে।
তুমিই শিখিয়েছিলে কিভাবে ভাসতে হয়
বিপরীত স্রোতে।
শেখাওনি কিভাবে ভাসতে হয় জনস্রোতে।
তাই প্রতিদিনই তোমার খোকা
ভাসে আর ডোবে, ডোবে আর ভাসে
তোমার না দেখা এ শহরে।
এখনও মনে পড়লে হাসি পাই
পুরাতন ফ্লিপস রেডিওতে
তুমি কোন অজানা দেশের গান শুনতে।
বলতে পাখিদের ভাষা বোঝ তুমি
বলতাম না।
মনোযোগ দিলে ওদের গান ও
তোমার ভালো লাগবে।
রাস্তায় বাসে কত জায়গায় না খুঁজেছি
না কোথাও শুনিনি মানুষের গান।
এখন বড্ড মাথা জ্বালা করে
বুকের বা পাশটায় চাপা ব্যথা
তবু কি জানি কি দূর্বোধ্য অহংকারে
এখনও মাথা উঁচু করে গভীর জনারণ্যে হারায়
-তোমার প্রিয় খোকা।