somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিদিনের আজইরা প্যাঁচাল-২

০৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিন দিন অসামাজিক জীবে পরিণত হয়ে যাচ্ছি ! নতুন একটা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, সেটা হলো আমি কোনো দুঃখের সংবাদ, খারাপ সংবাদ কিছুই সহ্য করতে পারি না, তাই যতটা সম্ভব টিভি, পেপার থেকে দূরে থাকি! তারপরও ফেসবুক এবং দুনিয়ার সব মানুষের মাতামাতিতে কান দিয়ে হলেও খারাপ একটা সংবাদ শুনা হয়ে গেলো, মা'র হাতে সন্তান খুন!!!
আমিও একজন মায়ের সন্তান, খুব খারাপ ভাবে ডিপ্রেশনের শিকার আমি আমার মা'র মৃত্যুর পর থেকে। ব্যাপারটাকে আরো বেশি পীড়াদায়ক করেছে যে কোনো কাজ-কর্ম না থাকার দরুণ আমি সারাদিন বাসায় থাকি। তিন রুমের একটা বাসা, যার প্র তিটা কোণা আমার মায়ের হাতে সাজানো! এক বছর হয়ে যাবে প্রায়, তবুও মা যেন আছেন! যে জিনিসটা গত কয়েক মাসে আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি সেটা হলো বাঙালী সমাজে মা'দের স্হান কতটা নগন্য। মাফ করবেন, মিথ্যা বলছি না। একটা মেয়ে মা হবার পর তার স্বপ্ন, আশা, আকাংখা সবই তার সন্তানদের ঘিরে। তার নিজস্ব জীবন বলতে কিছু নাই, নিজের ক্যারিয়ারটাও অনেকে বিসর্জন দেয় সন্তানদের জন্য, অনেকে পারিবারিক চাপে পড়ে ছেড়ে আসে তার অনেক সাধের কোনো ক্যারিয়ার! তারপরেও সংসারের সমস্ত দোষ যেন মায়েদের। সন্তানদের বিফলতা, খাবারে লবণ কম, স্বামীর অফিসের ঝামেলার দোষটাও যেন তার! একটা সময় বাসার চার দেয়াল হয়ে যায় তার নিজের বানানো কারাগারে বন্দী হয়ে পড়ে। দোষটা কার? আসলে কপালের , সবই যেন তার কপাল, এই ভেবে কেউ কেউ ওভাবেই জীবনটা কাটিয়ে দেয়।
তাই খবরটা পড়ে আমি সারাদিন খালি ভেবেছি, কখন মা তার সন্তানকে হত্যা করে? কখন ? অবশ্যই তার আগে অনেকবার এমন একটা ঝড়ের পূর্বাভাস পরিবারের মানুষের পাওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের সমাজে ডিপ্রেশন এবং মেয়েমানুষের যে কোন সমস্যার কোনো দাম নেই। তাই দাম দিল দুটি ছোট্ট শিশু!
কখন বুঝবেন আপনার আশেপাশে কেউ কোনো মানসিক যন্ত্রণার মাঝে আছে? নিচে কয়েকটা পূর্বাভাস লিখছি (সবই আমার নিজের জীবন থেকে নেয়া!):

১। হুট করে রেগে যাওয়া। কোনো সামান্য কথাতেও বেশি রিঅ্যাক্ট করা।
২। মুড সুয়িং বা এই ভালো এই খারাপ মেজাজ থাকা।
৩। হঠাৎ করে বড় রকমের আচরনের পরিবর্তন, যেমন হাসিখুশি মানুষ গম্ভীর হয়ে যাওয়া ।
৪। খাবারে অনীহা।
৫। কাজের মাঝে অমনোযোগী থাকা, কিছুটা বেখেয়ালি হয়ে যাওয়া, চোখের সামনে থাকা জিনিসও খুঁজে পাচ্ছে না এমন!
৬।অনীদ্রা ।
৭। ইমোশনাল হয়ে পড়া, কিছু না হলেও কান্নাকাটি করা।
৮। কিছু বলতে চেয়েও না বলা এবং প্রায়ই এটা করা!
৯। খুব বেশি সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়া।
১০। মানুষকে অবিশ্বাস করতে শুরু করা। (রেড এলার্ট!!)

আমরা মানুষ। মানুষের একটা অদ্ভুত ক্ষমতার মাঝে একটি হলো পাশের মানুষটির যদি খুব মন খারাপ থাকে, কিভাবে যেন বুঝতে পারা যায়! এটা প্রাকৃতিক সেন্সর বলতে পারেন। কিন্তু এই যুগের মানুষ বুঝে না , অথবা বলতে পারেন বুঝতে চায় না। আমি জানিনা কেনো একটা মা তার সন্তানকে খুন করতে পারে। তবে অনেক সময় পুরানো কথা মনে পড়লে ভাবি, আসলে এত বেশি অত্যাচার করেছি মাকে কেনো তিনি তারপরও আমাদের এত ভালোবাসতেন। শেষ সময়টায় কেউ আমরা তার পাশে থাকতে পারিনি, হয়তো এটা আমাদের শাস্তি। এখন যেখানে বসে লিখছি সেখানে আমার মা ঘুমাতেন। আমি হোস্টেল থেকে বাসায় আসলে রাতে মা না ঘুমানো পর্যন্ত তার মাথায় হাত বুলাতাম, তার পাশে বসে থাকতাম। আমার মা খুব সুখী মহিলা ছিলেন, এমন না। জীবনে তারও অপ্রাপ্তি অনেক। তবে তিনি অনেক মানসিক শক্তির অধিকারীনী ছিলেন। তাই হয়তো প্রথম সন্তানের মৃত্যুশোক, নিজের জীবনের লক্ষ্যচ্যুতি, জীবনের অনেক ক্ষেত্রে অনেক মানুষের কথার ভার তিনি বহন করতে পেরেছিলেন, কিন্তু সবাই যে তা পারবে এমন কোনো কথা নাই।
সব কথার শেষ কথা, জীবনে একটা মানুষ থাকে যার একটা ভালো কথা মানুষকে ভালো আর একটা খারাপ কথা মানুষকে খারাপ করতে পারে!!! মানুষটা যে কেউ হতে পারে, ঘরের মানুষই যে হবে এমন না। তাই আপনার ঘরের মানুষটিকে একটু মানুষের মত সম্মান দিন, তার ভালো মন্দের খোঁজ নিন, তার জীবনের অংকগুলো মিলিয়ে দিন। নাহলে একদিন হয়তো আপনাকেও মাশুল দিতে হবে। আমি কোনো বিশেষজ্ঞ নই, ভুক্তভোগী! তাই লেখার মাঝে অনেক ভুল থাকতেই পারে।
**লিখতে ইচ্ছা করে অনেক, কিন্তু সব মাথাতেই থেকে যায়। কোনো এমন অ্যাপ নাই যেটাতে মুখে বলে বাংলা লেখা যাবে? থাকলে জানাবেন, অলস হয়ে যাচ্ছি!! আমি আর মা ছবিতে!

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৫৫
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×