আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ১১ মিনিট ২৭ সেকেন্ড এ ভূমিকম্প অনুভূত হয় এবারের মত আল্লাপাক আমাদের ক্ষমা করেছে যানিনা কত দিন ক্ষমা করবেন । ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দূরে, নেপালে। এ ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৫। এটির গভীরতা ছিল ১৫ কিলোমিটার।
রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা
৫ - ৫.৯৯ মাঝারি
৬ - ৬.৯৯ তীব্র
৭ - ৭.৯৯ ভয়াবহ (আজ তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৫ তার মানে ভয়াবহ )
৮ - এর ওপর অত্যন্ত ভয়াবহ
ভূমিকম্প এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলেই এর মাত্রা ১০ থেকে ৩২ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে ।
ভূমিকম্প কী
প্রথমেই বলি ভূমিকম্প আসলে জিনিসটা কী,। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, পৃথিবী যখন কাঁপা কাঁপি করে , তখন তাকে ভূমিকম্প বলা হয়। প্রকৃতির নিয়মে মাটির নিচে সৃষ্ট আলোড়নের কারণে ভূ-পৃষ্ঠের কোনো কোনো অংশ হঠাৎ কেঁপে ওঠে। আর এই কেঁপে ওঠাকেই আমরা বলি ভূমিকম্প।
অনুমান করা হয়, প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ বার বা আরও বেশি বার ভূমিকম্প হয় । আর এগুলোর ভিতর হয়ত মানুষ ১ ভাগ বুঝতে পারে। অনেক সময়ই সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্প হয়, সেই গুলা অনেক সময় বুঝতে পারিনা । তবে সাগর তলে বড় সড় ভূমিকম্প হলে সুনামি হতে পারে।
ভূমিকম্প কেন হয়
ব্যাপারটা আরেকটু বুঝিয়ে বলি। বাইরে থেকে তাকালে পৃথিবীকে নিরেট বলের মতো মনে হলেও এর ভেতরের অংশে রয়েছে প্রধানত চারটি স্তর। সবচেয়ে উপরের শক্ত স্তরকে বলে ভূত্বক ।এই উপরিতল স্তর কতগুলো অনমনীয় প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলোকে বলা হয় টেকটনিক প্লেট। টেকটনিক প্লেটগুলো একে অপরের সাথে পাশাপাশি লেগে থাকে। আর ভূত্বকের নিচে রয়েছে গরম গলিত লাভার স্তর। অর্থাৎ গরম লাভার স্তরের ওপর ভেসে আছে প্লেটগুলো। কেন্দ্রভাগের ভীষণ গরম তরল লাভা, গ্যাস থেকে প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয়। এই শক্তি পৃথিবীর বাইরের দিকে সবসময় চাপ প্রয়োগ করতে থাকে মাঝে মঝে যোরে ধক্কা দেয় । তখন টেকটনিক প্লেটগুলোও নিজেদের মাঝে ধাক্কায় জড়িয়ে পড়ে কখনও মৃদু, কখনও সজোরে। যেহেতু প্লেটগুলো শিলা দ্বারা গঠিত, তাই ধাক্কার ফলে তাদের মাঝে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়। একেই বলে ভূমিকম্প।
বিজ্ঞানিরা বলেছে প্লেটগুলো যখন একটা আরেকটার গায়ে ধাক্কা খায়, তখন আসলে ভূমিকম্প শুরু হয়না প্রথমে কিছুক্ষণ লেগে থাকে। ফলে কোনো প্লেটই নড়ে না, কিন্তু একটা আরেকটাকে বিপুল শক্তিতে ঠেলতে থাকে। সেই ঠেলায় প্রথমে হয়তো প্লেটগুলো একটু-আধটু নড়ে, আর একটু পরেই সেই প্রচণ্ড ঠেলা সামলাতে না পেরে দুই প্লেটের শেষপ্রান্তের পাথরগুলো ভেঙে যায়। ঠিক তখনই ভূমিকম্প হয়।
পাথরগুলো ভাঙতে শুরু করলে প্লেট দুটোও নড়তে শুরু করে। ওই প্লেট দুটো যতক্ষণ পর্যন্ত আবার স্থির হয়ে নড়াচড়া বন্ধ না করছে, ততক্ষণ ভূমিকম্পও চলতে থাকে।
অনেকে হয়ত ভাবছে সব যায়গাইত প্লেট আছে তাহলে কিছু কিছু দেশে সব সময় ভূমিকম্প হয় আবার কিছু কিছু দেশে কেন হয়না। আসল কথা হলো ভূমিকম্প বেশী হবার সম্ভাবনা থাকে প্লেট বর্ডারে তার মানে দুটি প্লেটের সংযোগস্থলে । হ্যা, আসলেই তাই। যেখানেই দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে সেখানেই ঘর্ষণ সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থাকবে সব চেয়ে বেশি। এবং এর ফল স্বরূপ হবে ভূমিকম্প। গবেষকরা বলেছে প্লেট বর্ডার গুলা পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও আলাস্কা, গুয়াতেমালা, চিলি, পেরু, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, নিউজিল্যান্ড, গ্রিস, ইতালি এবং জাপানে । আমাদের এশিয়ার জাপানে , ইন্দোনেশিয়ার দিকে যদি তাকান তাহলে পরিষ্কার বুঝতে পারবেন কেন ঐ স্থানগুলোতে নিয়মিত বড় বড় ভূমিকম্প হয়ে থাকে ।
এবার ফিরে আসা যাক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। দুর্ভাগ্যবশতঃ আমাদের বাংলাদেশ ভারতীয়, ইউরেশিয় এবং মায়ানমার টেকটনিক প্লেটের মাঝে আবদ্ধ। ফলে এই প্লেটগুলোর নাড়াচাড়ার ফলে আমাদের দেশে মাঝেমাঝেই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তাছাড়া ভারতীয় এবং ইউরেশিয় প্লেট দুটো হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে রয়েছে এবং ১৯৩৪ সনের পর তেমন কোন বড় ধরনের নাড়াচাড়া প্রদর্শন করে নি। এ কারণে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছে এই প্লেট দুটো হয়তো নিকট ভবিষ্যতে নড়ে উঠবে যা বড় ধরনের ভূমিকম্পের কারণ হবে।
টেকটনিক প্লেটের অবস্থান দেখলে বোঝা যায় যে আমাদের উত্তর ও পূর্বে দুটো বর্ডার বা টেকনিকাল ভাষায় “ভূ-চ্যুতি” রয়েছে যা বাংলাদেশের ভূমিকম্পের কারণ। এজন্যে বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল তথা সিলেট এবং ততসংলগ্ন এলাকা প্রবল ভূমিকম্প প্রবণ। এর পরের অংশগুলোও যেমন ঢাকা ও রাজশাহী শহরও ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা।
১৮৯৭ সনের ১২ জুন ৮.৭ মাত্রার “দ্যা গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক” ভারতবর্ষকে আঘাত হানে যা আজও পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ভূমিকম্প হিসেবে পরিচিত। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভারতের শিলং শহর তবে এর প্রভাব বর্তমান বাংলাদেশ সহ বহু দূর পর্যন্ত অনুভূতি হয়েছিল। সে সময়ের ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন মিশনারীদের বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়েছিল এই ভূমিকম্পের কারণে। এছাড়াও ঢাকায় ৪৫০ জনের মত নিহত হবার খবর পাওয়া গিয়েছিল যা সেই সময়ের তুলনায় রীতিমত অনেক বড় সংখ্যা।
এ ভূমিকম্পগুলোর একটা বৈশিষ্ট্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মোটামোটি প্রতি একশ বছর পরপর এই অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ১৯১৮ সন ছিল সর্বশেষ বড় ভূমিকম্পের বছর। এরপর প্রায় একশ বছর কেটে গিয়েছে কিন্তু আর কোন বড় ভূমিকম্প আঘাত করে নি বাংলাদেশকে যা বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে। অনেক আবহাওয়াবিদ এটাও মনে করেন যে ছোটছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের বার্তা বহন করে। সে হিসেবে বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প যে কোন সময় আঘাত হানতে পারে। আর যদি সেটা ঘটে, তাহলে সেটার ভয়াবহতা হবে মারাত্মক।
আমি কোন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ না শুধু জানার চেস্টা করেছি
বিভিন্ন নিউজ/ ব্লগ /উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহিত
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




