ছোটবেলা থেকেই আমি দু'টো খবর প্রায় প্রায় দেখে অভ্যস্ত। এক, ফের ফেরিডুবি, মৃতের সংখ্যা… দুই, ফিলিস্তিনিদের উপর আবারও ইসরায়েলের হামলা, মৃত…
আমি একজন মুসলিম কমিউনিটির ছেলে। নিজের কমিউনিটি কোথাও আঘাত পেলে আমাকেও সেটা আহত করে বা হয়তো করা উচিত।
কিন্তু দেখা যায়, এই দুই ঘটনা প্রায়শই ঈদের দিনের পূর্বে বা ঠিক ঈদের দিনের একটু আগে ঘটে থাকে। গত কয়েকদিন ধরে যা চলছে তা নিতান্তই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। ছোট ছোট বাচ্চাদের লাশ আর রক্তের ছবি ফেসবুকে ভেসে উঠছে। স্ক্রোলিং যত করছি তত বের হচ্ছে। এন্ড লেস…
ইতিহাস ও ভূ-রাজনৈতিক বিষয় দু'টিতে আমার জ্ঞান বলা যায় শূন্যের কোটায়। এখনো বাংলা ভাগ নিয়ে পড়াশোনা করছি, নেহাৎ নতুন একটি উপন্যাস লিখতে হবে তাই। কিন্তু ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের ভৌগোলিক অবস্থান বুঝতে গিয়ে মনে পড়ে গেলো সেই ইন্টারমিডিয়েটের গণিত বিষয়ের কথা।
যদিও উক্ত সাবজেক্টে এক কালে ৮০% শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছিলাম কিন্তু বর্তমানে দূর্দশা তুঙ্গে।
একাধিক ভিডিও দেখে ক্রিস্টোফার নোলানের কথা মনে পড়ে গেল। আচ্ছা? কোন কোন জায়গা ইসরায়েলের? আর কোন কোন জায়গা ফিলিস্তিনের? এখনো পরিপূর্ণভাবে বুঝে উঠতে পারিনি। চেষ্টা অব্যাহত আছে…
খেয়াল করে দেখবেন, হামাস ইসরায়েলের উপর রকেট নিক্ষেপ করেছে ঠিক ঈদের আগের মূহুর্তে। তারপর নিউটনের তৃতীয় সূত্র, মানে ফিলিস্তিনে বেশ কিছু লাশ(ছোট ছোট বাচ্চা সহ)। মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টান অধ্যুষিত এই এলাকায় শুরু হলো একের পর এক লাশের তান্ডব। কিন্তু বাংলাদেশীরা ঈদ মনে হলো ভালোই কাটালো।
প্রতিবেশি দেশে ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে টুইটে হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিং। পরপর দ্বিতীয় হ্যাশট্যাগ ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানাচ্ছে। আর ফেসবুক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে একদল ফেসবুক যোদ্ধা হ্যাশট্যাগ করছেন। তারা অবশ্য টুইটেও আছেন।
ইসলামিকসংস্থা ও.আই.সি চুপ মেরে যেন সব দেখছে। না, এটা ওদের স্বভাব। ইসলামিকসংস্থা না বলে এটাকে কোনোভাবে বাণিজ্যিক সংস্থা বলা যায় না? ভেবে দেখা উচিত। আবার কেউ কেউ এরদোয়ানের ভাষণের অপেক্ষা করছেন। সেটাও খারাপ কীসে!
এরদোয়ান ভাষণ দিলেন… আমরা শুনলাম। ওনার ভাষণকে কেন জানি ভিশন অমায়িক ও অসহ্য লাগছে! এরদোয়ান সাহেব, মানুষ মরছে? হ্যালো? কিছু তো করুন?
জর্ডানের মানুষজন সীমান্ত ডিঙিয়ে গিয়ে প্রতিহত করতে চাইছে। ইউরোপীয়ানদের রাস্তায় নেমে শ্লোগান দিতে দেখা যাচ্ছে। ওরা অবশ্য ঠিকঠাক প্রতিবাদ করতে জানে।
হঠাৎ ও.আই.সি জেগে উঠার খবর পেলুম। মনে বড় আশা জাগলো, এই বৈঠক কত দীর্ঘায়িত হতে পারে সেটা জানবার আশা। এর বেশি প্রত্যাশা আমি কখনো করিনি, হয়তো সেটার যৌক্তিক কারণ তাঁরা ইতোমধ্যে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এই যেমন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য কষ্ট লাগে, আবার কষ্ট হয়ও।
এখনো ঠিকঠাক মতো নিজ ধর্ম বুঝি না তার উপর ধরুন, "Zionism" অথবা "Anti-Semitism" কি ঘন্টা বুঝি বলেন? TRT World - নামক চ্যানেলটি খুব সুন্দর করে কিছু বিষয় ব্যাখ্যা করলেন। সত্যি বলতে কিছুই বুঝলাম না।
The Wire - চ্যানেল কী বলা যায় বুঝতে না পেরে বলছেন, "... অন্তত মানবতার জন্য কি ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করা উচিত নয়?"
একটু বিষম খেলাম..
এদিকে ঈমান রক্ষার্থে অন্তত হ্যাশট্যাগ দিয়ে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করছেন অনেকে। কিন্তু আমি খুব ভয়ে আছি। দাদুর বলা একটি হাদিস মনে পড়লো,
“ঈমান মদীনার দিকে ফিরে আসবে, যেভাবে সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে’’। [সহীহ বুখারী – ১৮৭৬ ও মুসলিম – ৩৭২]
দাদুর বলা এই হাদিসের ফল আসার পূর্বে আরো অনেক কিছু হবার কথা। কী জানি! মদীনার সেই বিশ্বাস আজ বোধহয় আবার মদীনার দিকেই রওনা দিয়েছে।
শত শত লাশ দেখেও যখন ঈদ ভালো যায়, কোনোরূপ খারাপ লাগা কাজ করে না, তখন আমার মতে যে কোনো সাধারণ ব্যক্তির ডাক্তার দেখানো উচিত।
খুব সম্ভবত, আমিও তাদের দলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২১ রাত ৯:৫৩