somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

টক্সিক মানুষগুলোকে ছাড়ুন, পরিবারের সদস্য হলেও

৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“আত্মহত্যা করুন অথবা পরিবার কে পরিত্যাগ করুন” – ঠিক এমন একটি তর্কে যাওয়ার দুঃসাহস করেছি। কারণ আমার চোখে এমন কিছু টক্সিক পরিবারের দেখা মিলেছে যেসব পরিবারের সাথে সহাবস্থান করার চেয়ে ত্যাগ করা জরুরী বলে মনে হয়েছে। বিষয়টি আরো হতাশাজনক। বিভিন্ন গবেষণায় পরিবার পরিত্যাগ করার পক্ষে অনেক যুক্তিও দেখিয়েছে। চলুন এই বিষয়ে এই ধরণের কিছু বিষয় ব্যবচ্ছেদ করে দেখা যাক।


কেন একজন পরিবার পরিত্যাগ করবে তাও আজীবনের জন্য?
কোন কোন পরিবারের বিষাক্ত রুপ এত বেশি বেড়ে যায় যে, এতে করে উক্ত পরিবারগুলোতে সহাবস্থান করা শান্তির বদলে শাস্তি হিসেবে দেখা দেয়। এমন একটি পরিবার নিয়ে কথা বলা যায়, যে পরিবারে সবাই তার নিজ নিজ স্বার্থ দেখছে। কিন্তু আপনার অনুভূতি বা আপনার কাজ কে কোনোভাবেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। এতে আপনার অনুভূতিতে চোট তো লাগছেই পাশাপাশি দীর্ঘ সময়ের জন্য ডিপ্রেশন/ট্রমায় যাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়।

স্ত্রীর অত্যাচারে স্বামীর আত্মহত্যা, স্বামীর অত্যাচারে স্ত্রীর আত্মহত্যা এবং বাবা মায়ের গাফিলতির জন্য সন্তানের আত্মহত্যা। এমন খবর নিউজপেপারে নিয়মিত পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এই ধরণের পরিবার এতটাই টক্সিক যে, এখানে সহাবস্থান করলে আপনার স্বপ্নের জলাঞ্জলি দিতে হতে পারে। পরিবারের প্রধান হঠাৎ কিছু অযোক্তিক সিদ্ধান্ত নেন আর বাকিদের ভাবতে বাধ্য করান, আমার এখানে ভূমিকা কি!


পরিবার কেন্দ্রিক সমস্যার উদ্ভব হলে কাছের বন্ধুকে কি বলেন?
আমাকে গালি দেবার পূর্বে একটু বাস্তবতা খেয়াল করুন। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের কারণে আপনার বন্ধু বা বান্ধবী আপনাকে বলতে পারছে না যে, সে কি ভোগান্তিতে তার সময় পার করছে! সেই পরিবারে প্রতিরাতে হয়তো বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়া চলছে, আর্থিক সংকটের কারণে কুকুরদের চেয়েও নিচে নেমে কথায় কথায় তাকে অপমান করছে। মানে ঝিঁকে মেরে বউ কে বুঝানো টাইপ। আপনি টাকা জমিয়ে দেশ-বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছেন কিন্তু আপনার বন্ধুর ফোনকলে কড়া নির্দেশ, তুমি বরং নিজ কাজে মন দাও।

এখন ঐ বন্ধু বা বান্ধবী আপনাকে সুবিস্তার বলছে যে, দেখো ভাই আমি এই এই সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আপনি তাকে উত্তরে কি বলবেন? মন্তব্যের বক্স সেজন্য থাকলো।


কোন টক্সিক পরিবার কি আজীবন টক্সিক থাকে?
আমি এটা মানি কিছু কিছু পরিবার সাময়িক কিছু ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যায়। যেমন, আর্থিক সংকট, সম্পর্কে টানাপোড়ন, চিন্তা-চেতনার মধ্যে গড়মিল ইত্যাদি। কিন্তু কিছু কিছু পরিবার এই বাধ আর ভাঙ্গতে পারে না। তাদের অপারগতা কে পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের ওপর দিয়ে পরিবারের বাকি অংশ হাত মোছেন।

আমি আমার বাস্তব জীবন থেকে একটি উদাহরণ টানতে চাই। একদিন সন্ধ্যার দিকে বাজার থেকে এক কাপ চা খেয়ে বাড়িতে ফিরছিলাম। রাস্তার চারপাশে অনেক ভিড়। কি সমস্যা? জিগ্যেস করতেই, একজন বললো, “ছেলেটা আর তার বাবা-মায়ের সাথে থাকতে চায় না।”

আমি একটু অবাক হলাম। তার কাছে গিয়ে জিগ্যেস করলাম, “ভাই, তোমার সমস্যা কি? আর এই রাতেরবেলা কোথায় যেতে যাও?” উত্তরে ছেলেটা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো, “ভাই, আমি এই পরিবারের জন্য কি করিনি! সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি জাল টানি। তারপর দিনশেষে কিছু টাকা পেলে পরিবারকে দিয়ে দেই। তারপরেও আমার বাবা-মা প্রতিদিন রাতে ঝগড়া করে, মারধর পর্যন্ত চলে। আর ওই চেঁচামেচিতে আমার রাতে ঠিকমতন ঘুমও হয় না। বিশ্বাস করেন, নিজের জন্য কিছুই রাখিনা। আজ আমি ঢাকায় যাচ্ছি। যাবার সময় তাও বলে যাচ্ছি, আমি তোমাদের সময়মত টাকা দেবো। তোমরা শুধু আমাকে এই পরিবার থেকে মুক্তি দাও।”

এরপরের ঘটনা শুনলে চমকে উঠবেন। তার মা এসে জুতা খুলে তার গালে এমন জোরে আঘাত করলো তারপর বাজে ভাষায় কিছু বাক্য উচ্চারণ করলেন। মনে হচ্ছিলো কানে তালা দিতে পারলে ভালো হত। এসব সহ্য করার মতন নয়। আর তার বাবা এসব সার্কাস দেখছেন। তিনি এসে ছেলের পা ধরছেন (ঐ ভাইটি শুধু চোখ মেরে আমাকে বললো, কিছু বুঝলেন? টাকার দরকার। আমার কামানো টাকা দিয়ে গাঁজা আর মদ খেয়ে প্রতিদিন বাসায় আসে ভাই) ।

সেই দিনের এই বাস্তব অভিজ্ঞতার পর আমি আজ পর্যন্ত ঐ দৃশ্য ভুলতে পারিনি। ছেলেটা সেদিন অসহায়ের মত হয়ে আমায় বললো, “আপনি তো পড়াশোনা করেছেন। আপনি আজ যেটা বলবেন আমি সেটাই করবো।”

হোয়াট! আমি কি বলবো? জীবনে এই ধরণের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আমি নিজেই প্রথম। কিন্তু এই রাতেরবেলা ছেলেটাকে একা ছাড়া উচিত হবে না। হতে পারে পরবর্তীতে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তাই ফিসফিস করে বললাম, “ভাই, রাত হয়ে যাচ্ছে। তুমি বরং আজ বাড়িতে যাও। আগামীকাল সকালে কিছু একটা সিদ্ধান্ত নিও।”

এটা বলেই তাৎক্ষণিক ভাবে ঐ জায়গা ত্যাগ করলাম। চোখের কোণে জল। হ্যাঁ, আমার পরিবারও পারফেক্ট নয় কিন্তু এই ধরণের চরম দূর্ভোগে তারা আমাকে রাখেনি। পড়াশোনার জন্য না হয় দু’টা টিউশনি বেশি করাতে হয়েছিলো। ইন রিটার্ণ তারা কিছুই আমার কাছে থেকে আজ পর্যন্ত চায়নি। কিন্তু একটু আগে যে ছেলেটাকে যা বলে আসলাম তা ডাহা মিথ্যা, আমার মন থেকে তা উচ্চারিত হয়নি।



আদর্শ পরিবার বলতে অদৌ কিছু আছে?
সত্যি বলতে, নাই। বিভিন্ন উপন্যাস ও মুভিতে আমাদের এই ফাউন্ডেশন যেন না ভেঙে যায় সেজন্য কিছু উপাদান দিয়ে থাকে। বাস্তব জীবনে তাহলে এত ছাড়াছাড়ি কেন? শখের বশে কি? না কি বাবা-মায়ের যে মূর্তি আমাদের মনে গ্রথিত হয়েছে সেটা বজায় রাখার জন্য? একদিকে একজন সন্তানের দায়িত্ব যেমন তার বাবা-মায়ের দেখভাল করা অন্যদিকে বাবা-মায়ের উচিত তার সন্তানের স্বপ্ন পুরণে বাধা হয়ে না দাঁড়ানো। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে কারণে একজন মেয়ে বা একজন ছেলে তারা জীবন থেকে ছিটকে পড়ছেন তারও একটা বড় কারণ হচ্ছে এই বাবা-মা।

আমাদের মধ্যে থাকা অপার সম্ভাবনা কে তারা সবসময় তাদের জীবন দিয়ে মাপবার চেষ্টা করছেন। দেখুন, নারী-পুরুষের সম্পর্কের মধ্যেও নতুন ডাইমেনশন এসেছে। কাজের মধ্যে, চলার মধ্যে, বলার মধ্যে এক প্রজন্মের সাথে আরেক প্রজন্ম ধাক্কা খাচ্ছে।

যে বাবাটা লাঠি ধরেছেন, ছেলেকে বিসিএস পেতেই হবে জন্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সম্পর্কেও হয়তো ধারণা রাখেন না। ঠিক এমনি ভাবে তারা তাদের আদর্শিক সমাজে নিজ স্ট্যাট্যাস বজায় রাখার জন্য সন্তানদের ওপর করছেন অত্যাচার। শুধু তাই নয়, লিমিট ছাড়া অত্যাচার। আজকালের ছোট বাচ্চারা বিভিন্ন খেলা সম্পর্কে আর ধারণা পর্যন্ত রাখে না। তারা তো থাকে ফেসবুকের দুনিয়ায়, ইউটিউবের দুনিয়ায়, ইন্সট্রাগ্রামের দুনিয়ায় অথবা ভিজ্যুয়াল গেমের দুনিয়ায়। একদিন হলে ফেরার পথে দেখছিলাম একটি কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপন, “৮০ নম্বর যথেষ্ট নয়, ১০০ হলে ভালো হয়।” খানিক সময় পরিবার পরিকল্পনার বিজ্ঞাপন ভেবে ভুল করেছিলাম।


পরিশেষ
আমি জানি আমার সাথে সহমত না হওয়ার হাজার যুক্তি হয়তো আপনার কাছে আছে। ফেসবুক এখন মেটাভার্স। কিন্তু বাঙালী মা এখনো তার ছেলে বা মেয়ের হাত ধরেই স্কুলে যাবে। সে কি খাবে আর কি খাবে না সেটাও ঠিক করে দেবে।

আমি শেষ অবধি মানছি, সব বাবা-মা এক নয়। কিন্তু ভাবুন, একটা ছেলের স্বপ্ন ছিলো ক্রিকেটার হবে বা অভিনেতা হবে বা শিল্পী হবে। এখন তার গভ. জব দিয়ে সে কি সুখী হতে পারবে? কোর্ট-টাই পড়া ঐ ছেলেটা একদিন লিফট থেকে নামবে আর সবার অজান্তে চোখ দিয়ে জল ঝড়াবে। এই সমাজ ব্যবস্থা কি আমরা তবে চাই? যেই সমাজ ব্যবস্থায় আমার নিজের বাবার মনে হয়, “নাটকে অভিনয় করার চেয়ে ব্যাংকে জব করায় পাপ কম।” পাপ তো যে কোন জায়গা থেকে কামাই করা যায়। পূন্যের জন্য চেষ্টা করতে হয়, ভালো মানুষ হতে হয়।

সোজা বাংলায়, যে পরিবারে আপনার কোন ভূমিকা নেই সেই পরিবার এখনই ছেড়ে দিন। ফারাক নেই কে থাকলো আর কে চলে গেলো। অন্তত আত্মহত্যায় আরো একটি মৃত মুখ আমাদেরকে দেখতে হবে না।

ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×