একটি সিনেমার রিভিউ কীভাবে মানুষদের মনে প্রভাব ফেলে? এবং ঐ সিনেমা দেখার প্রতি মানুষকে আগ্রহী বা অনাগ্রহী করে তোলে? এই সমস্ত বিষয় সূক্ষ্মভাবে ফুটে তোলা হয়েছে জনপ্রিয় মালয়ালম অভিনেতা দুলকার সালমানের ‘Chup’ সিনেমায়।
একনজরে ‘Chup’ সিনেমা
অভিনয়: Sunny Deol, Dulquer Salmaan, Shreya Dhanwanthary, Pooja Bhatt (মূখ্য ভূমিকায়)
রচনা, স্ক্রিনপ্লে ও পরিচালনায়: R. Balki
বাজেট: ১০ কোটি রুপি
রেটিং: 8.5/10 IMDb, 3.5/5 Koimoi, 36% Rotten Tomatoes
সত্যি বলতে এই সিনেমা দেখার পর রিভিউ দিতেও একরকম ভয় করছে। ‘Chup’ সিনেমা হচ্ছে, সমালোচকদেরও সমালোচক। একটি সিনেমা মুক্তি পেলেই আমরা যেভাবে তার পা টানতে টানতে পাজামাও খুলে ফেলা আরম্ভ করে দেই তা কততুকু ঠিক?
আবার ভালো সিনেমা হওয়া সত্ত্বেও কিছু টাকার বিনিময়ে সেটাকে খারাপ সিনেমা বলা। খুঁজে খুঁজে বের করা উক্ত সিনেমার খারাপ দিকগুলো। একইভাবে খারাপ সিনেমার ক্ষেত্রেও টাকার জোর ক্যামনে বদলে দেয় তার রিভিউ সেটাও বিবেচ্য।
এবং দিনশেষে এই বাক্য দিয়ে শেষ করা যে, “সিনেমাটি খারাপ ছিলো, তাই বক্স অফিসে ভালো করতে পারেনি।” খুব সম্ভবত এই কথাটি আপনি অনেক মানুষের কাছে থেকে শুনেছেন। আবার এটাও সত্য কম রেটিং পাওয়া, বাজে রিভিউ পাওয়া, বক্স অফিসে ফ্লপ সিনেমা কীভাবে দর্শকদের মন পরবর্তীতে জয় করেছে, তার তালিকাও কিন্তু বিশাল।
শিল্পের জায়গা থেকে যদি দেখা যায়, তাহলে একজন চিত্রকারের একটি পেইন্টিং, একজন লেখকের একটি বই, একজন পরিচালকের একটি সিনেমা – এসব কিন্তু শিল্পীদের সন্তান মত। আপনি শিল্প এবং যে কোনো ফর্মের শিল্প কে একেবারে উড়িয়ে দিতে পারেন না। আপনাকে অবশ্যই সে ব্যাপারে অত্যন্ত সুবিবেচক হওয়া জরুরী।
যদিও এই সিনেমা শেষের দিকে একজন ব্যক্তির পয়েন্ট অব ভিউ কে খারাপ চোখে দ্যাখে নাই। মানে, একই সিনেমার ব্যাপারে সবার অভিমত এক হবে সেটাও বলছে না।
এই সিনেমার একটি বিশেষ ডায়ালগ হচ্ছে, “টেস্ট বাড়াও।” মানে হচ্ছে, সিনেমা যদি মানুষকে বিনোদন দিয়ে থাকে সেটা কীভাবে বিনোদন দিচ্ছে এর চেক এন্ড ব্যালেন্স বজায় রাখা। উত্তর-সত্যের এই যুগে ভারতীয় সিনেমা যখন ইতিহাস নতুন করে লিখতে শুরু করেছে এবং ফ্লপও খাচ্ছে সেখানে ‘চুপ’ সিনেমা যেন একটি চপেটাখাত।
গুরু দত্তের ক্লাসিক সিনেমা ‘Kaagaz Ke Phool (১৯৫৯)’ কীভাবে উক্ত সময়ে বেশ সমালোচিত ও আলোচিত হলেও ফ্লপের খাতায় নাম লিখিয়েছে সেটা কিন্তু একটি জ্বলন্ত প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে দুলকার সালমানের ‘Chup’ সিনেমায়। এরপর গুরু দত্ত আর কোনো কাজ করেন নি। শুধু তাই নয়, সমালোচনার খপ্পরে পড়ে তিনি তার স্টুডিও পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
আরো একটি বিষয় হচ্ছে, ‘Corporatization’। ভারতীয় সিনেমার একটি বিশাল মার্কেট আছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করছে ভারতের একাধিক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। এরই সাথে গড়ে উঠেছে একাধিক সিনেমা সমালোচক। এখন বড় বড় নিউজ হাউজ সিনেমা রিভিউ দিয়ে থাকেন।
আমার দেখা মতে, ‘Taran Adarsh’ হচ্ছেন একজন পক্ষপাতদুষ্ট সিনেমা সমালোচক। এছাড়া ব্যক্তিবিশেষ কে বাদ দিলে গল্প কিন্তু এখানেই শেষ হচ্ছে না। একাধিক নিউজ পোর্টাল এবং টিভি চ্যানেল এখন সিনেমা রিভিউ করে থাকেন। আর এখানেই চলে টাকার খেল এবং ‘Corporatization’।
যাইহোক, দুলকার সালমান এই সিনেমায় একজন সাইকোপ্যাথ এবং অভিনেত্রী শ্রেয়া ধনোয়ানথারি একজন মুভি সমালোচক হিসেবে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। স্ক্রিনপ্লে এবং পাশপাশি পুরনো গানের সাথে অনেক সুন্দর বিন্যাস আপনাকে নিশ্চয় মুগ্ধ করবে।
আমি এই মুভি কে দিচ্ছি ৪ স্টার। কারণ বাকিদের অভিনয় মোটামুটি ঠিক ছিলো। কিন্তু যথার্থ ছিলো না।