somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নামে মি. বিকেল। একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ডেভেলপার, ওয়েব ডিজাইনার, সম্পাদক, উপস্থাপক এবং নাট্য পরিচালক সহ - এই বহুমুখী পেশার সাথে জড়িত থাকলেও, আমার মূল পরিচয় একজন গল্পকার।

‘সিগমুন্ড ফ্রয়েড’ এর মনোসমীক্ষণ বা মনঃসমীক্ষণ (ইংরেজি: Psychoanalysis) তত্ত্ব বিশ্লেষণ

১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চেতন ও অচেতন মন নিয়ে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যে তত্ত্ব তা অত্যন্ত আধুনিক এবং অনেকাংশে গ্রহণযোগ্যও বটে। ‘মন’ নিয়ে যদি কথা বলতেই হয় এবং সেটা যদি সিগমুন্ড ফ্রয়েড কে বাদ দিয়ে করা যায় তা বোধহয় সম্ভব নয়। ইদ (Id), ইগো (Ego) এবং সুপার ইগো (Super Ego) এসবের পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় সিগমুন্ড ফ্রয়েডের এই তত্ত্ব থেকে।



ছবি: ১


‘কামশক্তি (Libido)’ নিয়ে এই নিউরোলজিস্ট এবং মনোবিজ্ঞানী অনেক কাজ করেছেন। যখন আমরা জন্মগ্রহণ করি তখন আমাদের মধ্যে যে বিষয়টি বিদ্যমান থাকে সেটা হচ্ছে, ইদ (Id) । একটি বাচ্চা তার কামশক্তি বা যৌনতার সাধ পেয়ে থাকে তার মায়ের নিকট থেকে ‘Oral Sex’ এর মাধ্যমে। উদাহরণস্বরুপ, বাচ্চাটি মুখ দিয়ে তার মায়ের দুগ্ধ পান করছে। তাই এই তত্ত্ব অনুযায়ী মা হচ্ছেন ছেলে বাচ্চার প্রথম ‘প্রেমিকা’ যেটাকে ‘Oedipus Complex’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।


মেয়ে বাচ্চার ক্ষেত্রে বাবার প্রতি যে প্রাথমিক আগ্রহ (যৌনতার দিক থেকে) থাকে সেটাকে ‘Electra Complex’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাবা হচ্ছেন মেয়ে বাচ্চার ক্ষেত্রে তার প্রথম ‘প্রেমিক’ কিন্তু বিষয়টি ছেলেদের মত সোজাসাপ্টা নয়। এটা নিয়ে আলাদা আর্টিকেল লেখা যেতে পারে। পুরো ব্যাপারটা রিভার্সাল, এই পর্যন্তই থাক।


এরপর আস্তে আস্তে আমরা ‘Psychosexual’ শব্দের সাথে পরিচিত হই। আরো পরিচিত হই ‘ইগো (Ego)’ এবং ‘সুপার ইগো (Super Ego)’ এর সাথে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ‘ইদ (Id)’ এবং ‘সুপার ইগো (Super Ego)’ এর মধ্যে এক ধরণের মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। হ্যাঁ, এক পর্যায়ে ছেলে বাচ্চা যেমন তার বাবা কে হত্যা করতে চায় কিন্তু পারে না, বা মেয়ে বাচ্চা তার মা কে রি-প্লেস করতে চায় কিন্তু পারে না।


ফলত এরা খুঁজে বেড়াই একটি নিজস্ব ডোমেইনের জন্য। চারপাশ থেকে নানান রকমের ধর্মীয়, নৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি মোরাল ব্যক্তিত্বের সাথে যুক্ত হতে শুরু করে। এভাবে এক পর্যায়ে বাচ্চাটি পরিণত হয়; সেটা তার Penis/Clitoris পরিণত হওয়ার মাধ্যমে এবং হস্তমৈথুন এরপর ‘ফুলকোর্স (Sexual Intercourse)’ এর মাধ্যমে। উল্লেখ্য, এখানে এক পর্যায়ে মেয়েরা তাদের ‘Penis’ না থাকায় এক ধরণের শূন্যতা বোধ করে।


আবার ‘মন’ কে সিগমুন্ড ফ্রয়েড দু’ভাগে ভাগ করেছেন,

১. চেতন (Conscious)
২. অচেতন (Unconcious)

উল্লেখ্য, আমরা যে কথায় কথায় ‘অবচেতন’ শব্দের ব্যবহার করে থাকি এটা কিন্তু সিগমুন্ড ফ্রয়েডের শব্দ নয়। কিন্তু বারবার ‘অবচেতন’ শব্দের ব্যবহারে গুগল আপনাকে ভুল তথ্য দিতে পারে। একই সাথে চেতন এবং অচেতনের মাঝখানে এই ‘অবচেতন’ শব্দের অকারণে প্রবেশ করানো অন্তত আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যাইহোক, সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ‘দ্য ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমস (১৮৯৯)’ প্রকাশ পেলে মনোবিজ্ঞানের এই আধুনিক জনক বেশ নাম করেন।


এখন এই ‘চেতন’ মনে নির্বাচিত সব তথ্য থাকে। মানে আমরা সিলেক্টিভ কিছু বিষয়, কিছু ইচ্ছে, কিছু আকাঙ্ক্ষা ‘চেতন’ মনের ফোল্ডারে জমা করে রাখি। অপরপক্ষে ‘অচেতন’ মনে আমরা আমাদের সিক্রেট (গোপন) তথ্য লুকিয়ে রাখি অথবা, যেসব বিষয়ে আমরা বলতে চাই না বা প্রকাশ করতে চাই না বা মনে আনতে চাই না সেসব।


ধরুন, আপনি একজন পুরুষ বা মহিলা এবং কর্মক্ষেত্রে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার সহকর্মীর/সহপাঠীর প্রতি এক ধরণের সেক্সুয়াল ডেজায়ার (আকাঙ্ক্ষা) কাজ করে কিন্তু এই কথা তাকে বলতে পারছেন না। এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। বুঝার খাতিরে, যদি আপনি আপনার এই ইচ্ছে প্রকাশ করেন এবং উক্ত ব্যক্তি যদি সেটা বাজেভাবে নেয় তাহলে আপনার ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে/ক্ষুণ্ণ হতে পারে তাই আপনি এই ভয়ে সেটা বলছেন না।


এই যে এরকম অসংখ্য বিষয় বা ইচ্ছে বা আকাঙ্ক্ষা যে প্রকাশ করতে পারছেন না সেটা কিন্তু জমা থাকে আপনার মনের ‘অচেতন’ ফোল্ডারে। এই জন্য বিষয়টিকে একটি বৃত্ত দিয়ে বুঝানো হয় যে, ‘অচেতন’ মন যদি কোন বৃত্তের ভেতরের পুরো অংশ হয় তবে ‘চেতন’ মন হলো উক্ত বৃত্তের সামান্য পরিধির সমান মাত্র।



ছবি: ০২


সিগমুন্ড ফ্রয়েড মানুষের দুটো মৌলিক চাহিদা নিয়ে কথা বলেছেন,

১. খাবার
২. যৌনতা

আমরা যেমন খাবার ছাড়া বাঁচতে পারি না, চলতে পারি না ঠিক তেমনি যৌনতা ছাড়া বা এই জৈবিক চাহিদা মেটানো ছাড়া উপায় থাকে না। হয়তো, কোন সিনেমার একটি চুমুর দৃশ্য দেখে আপনার মধ্যে এক ধরণের যৌন তাড়না কাজ করতে পারে। এখন মেটাতে পারছেন না কারণ এটা বাংলাদেশ এবং এখানে ‘যৌনতা’ বিষয়টি ট্যাবু। ধর্মীয়ভাবেও গ্রহণযোগ্য নয় (বিয়ের পূর্বে) ।


এখন তাহলে কি করবেন? হয়তো ভিপিএন ক্যানেকশন দিয়ে পর্ন সাইটে গিয়ে পর্ন দেখবেন এবং হস্তমৈথুন করবেন (বাংলাদেশে পর্ন সাইটের আইপি সব বন্ধ করা আছে) । অথবা, এই ‘Repression (অবদমন)’ কে কাজে লাগিয়ে কবিতা লিখতে পারেন, গান লিখতে পারেন, গল্প লিখতে পারেন, নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখতে পারেন এমনকি পেইন্টিং-ও করতে পারেন।


প্রশ্ন হলো, ‘যৌনতা’ দমন নীতি দিয়ে ক্যামনে আপনি সাহিত্যে অবদান রাখছেন? এটা কি ইচ্ছে করেই করছেন? নাকি যৌন তাড়না সহ্য করতে না পেরে এসব করছেন? সিগমুন্ড ফ্রয়েড এখানে বলছেন, “…এটা অনিচ্ছাকৃত এবং আমরা যেটাই করি না কেন সেটা কিন্তু এই ‘যৌনতা’ দমন নীতির কারণেই করে থাকি (অনুবাদ কাছাকাছি এমনটাই পাওয়া গেছে) ।”


আপনি যদি আমেরিকায় যান এবং রাস্তায় চলাকালে কোন কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান তাহলে সাধারণত ‘Oops… Ouch…’ উচ্চারণ না করে ‘ওমা… গো…, মা… ’ উচ্চারণ করবেন। কিন্তু কেন? কারণ আপনার ‘অচেতন’ মন তো বাঙালী এবং সে তো বাংলা ছাড়া বাকি ভাষা জানলেও বাংলা হলো তার মাতৃভাষা। সুতরাং গল্প বা উপন্যাসে আপনি প্রধান যে চরিত্র কে পেয়ে থাকেন সেটা মূলত ঐ লেখকের মনে গ্রথিত যৌন তাড়না বৈ ভিন্ন কিছু নয়।


এখন অবাক করার মতন বিষয় হলো এই ‘মনোসমীক্ষণ’ তত্ত্ব ‘New Criticism’ তত্ত্বের সাথে মিলে যায়। কীভাবে? সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে ‘New Criticism’ আমাদের সাধারণত কি বলছে?

১. সাহিত্য থেকে লেখকের ব্যক্তি সত্ত্বা বাদ দিতে হবে।
২. লেখক তার নিজের সম্পর্কের বাইরে গিয়ে কি বলেছেন?
৩. সেখানে তিনি কি ধরণের সেটিং, থিম, ভাষা, রেটোরিক ডিভাইস, প্লট ব্যবহার করেছেন?


সংক্ষেপে হয়তো বলা যায়,

“what author never intended.”


‘New Criticism’ নিয়ে আজকের আলোচনা নয়, তাই মাফ করবেন বিষয়টি নিয়ে বর্ধিত চর্চা না করার জন্য। তাই সিগমুন্ড ফ্রয়েডের কথা অনুযায়ী, আপনি যে সাহিত্য চর্চা করছেন তার সমালোচনা বা আলোচনা করতে হলে আমাদের ‘New Criticism’ তত্ত্ব দিয়ে আমরা সেটা করতে পারবো।


আজ এই পর্যন্তই। ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৪:৫০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×