
তাবলীগ জামায়াত কি? কারা এই আন্দোলন করছেন? কীসের জন্য এই আন্দোলন? এবং তাবলীগ জামায়াত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনা কি কি? – আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অন্য ধর্মের মানুষ তো দূরের কথা; ইসলাম ধর্মের অনেক মানুষ পর্যন্ত ঠিকঠাক জানেন না। কেউ কেউ মনে করেন, তাবলীগ জামায়াত হয়তো সূফীবাদ কিছুটা চর্চা করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, তাবলীগ জামায়াতের কর্মকান্ড ইসলামবিরোধী। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই দল নিয়ে একটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি।
১৯২৬ সালে ভারতের মেওয়াতে (বর্তমান হরিয়ানা রাজ্যের একটি অঞ্চল) মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি দ্বারা তাবলীগ জামায়াত প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা খুবই কম ছিলো। তাবলীগ জামায়াত হচ্ছে মূলত দেওবন্দি আন্দোলনের একটি শাখা। এখন এই দেওবন্দি আন্দোলন আবার কি?
১৯৮৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ শহরে প্রতিষ্ঠিত ‘দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা’ থেকে শুরু হয়েছিলো এই দেওবন্দি আন্দোলন। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিলো, সুন্নি মুসলিমদের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক পুনর্জাগরণ। তাবলীগ জামায়াতও এই একই লক্ষ্যে কাজ করছে, অন্তত তাদের দাবী অনুযায়ী যদি বলা যায়।
এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ব্রিটিশদের থেকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই দেওবন্দিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। এই আন্দোলনের বেশ কয়েকজন নেতারা, যেমন, মাহমুদ হাসান দেওবন্দি, হুসাইন আহমদ মাদানি এবং শাব্বির আহমেদ উসমানী ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, এই ভারতের স্বাধীনতা রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন এই আন্দোলনের একাধিক সদস্য। খুব পরিচিত ‘শায়খুল হিন্দ’ বা মাহমুদ হাসান দেওবন্দি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্রিটিশদের হাতে কারাবরণ পর্যন্ত করেছেন।
মাওলানা আব্দুল খান ভাসানীও একজন দেওবন্দি ছিলেন। তার ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনি দেওবন্দি আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন; আজীবন। তিনি পড়াশোনা করেছেন ভারতের ‘দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা’ তে। পরবর্তীতে তিনি জননেতা হিসেবে আমাদের সামনে আসেন। ভাসানীকে নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং নেতৃত্বের গুণাবলী আজও আমাদের অনেককিছু ভাবতে ও করতে শেখায়।
সমস্যা হচ্ছে, সাধারণ একটি আলিয়া মাদ্রাসা এবং এই দেওবন্দ মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে পার্থক্য টা আসলে কি? দেওবন্দ মাদ্রাসায় শুধুমাত্র ইসলামিক শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং দেওবন্দ মাদ্রাসাগুলো স্বাধীনভাবে চলে মানে হলো এইসব মাদ্রাসা সরকার কর্তৃক স্বীকৃত নয়; ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠী কেন্দ্রিক।
এখানেও একটি টুইস্ট আছে, সেটা হলো, যতগুলো মাদ্রাসা স্ট্রিমিং আজ পর্যন্ত সচল আছে দেওবন্দ মাদ্রাসা তার থেকে বিভিন্নভাবে আলাদা। এখানে ‘আখলাক (নৈতিক শিক্ষা ও চরিত্র গঠন)’ বিষয়ে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এই বিষয়ে অন্যান্য মাদ্রাসায় তেমন পড়াশোনা করানো তো হয়-ই না, কিছু কিছু স্ট্রিমিংগুলোতে এই বিষয়-ই নাই। মানে ইসলামের আধ্যাত্মিক ও নৈতিকতা বিষয়ক পাঠদান আলিয়া মাদ্রাসা সহ বাকি মাদ্রাসায় প্রায় নাই পর্যায়ের।
ভারতে যখন বিভিন্ন ইসলামিক দল নিজেদের তেমনভাবে প্রকাশ করতে পারছে না সেখানে তাবলীগ জামায়াত ও এই দেওবন্দি আন্দোলন অনেকখানি সচল আছে। অনুমান করা যায়, তাদের প্রতি এই সমীহ্ করার কারণ হলো ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের বিশেষ ভূমিকা। আবার আপনি যদি একটু খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেওবন্দ মাদ্রাসা এবং এতিমখানা বিরাজমান।
এই দেওবন্দি আন্দোলন আজ পর্যন্ত সক্রিয় আছে যথাক্রমে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে। পুনরায়, বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান যুদ্ধে কিন্তু দেওবন্দিদের নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে দেখা যায় শুধুমাত্র মাওলানা ভাসানী ব্যতীত। কারণ হিসেবে অনুমান করা যায়, যেহেতু বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এই দুই দেশ সুন্নী মুসলিমদের সেহেতু সুন্নী পুনর্জাগরণের এই আন্দোলন কারো পক্ষে অবস্থান না নেওয়াটাই স্বাভাবিক ছিলো।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, দেওবন্দি আন্দোলন তো ভালো ভাবেই চলছে তাহলে তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠার কারণ কি? প্রধান কারণ হচ্ছে, রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট না হওয়া বা ‘অরাজনৈতিক’ হওয়া। একদিকে দেওবন্দি আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে ছিলো ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এবং ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে কিন্তু তাবলীগ জামায়াত বলছেন, “না ভাই, আমি রাজনীতি বুঝি না, আমার শুধু ইসলামিক পুনর্জাগরণ-ই মূল উদ্দেশ্য।”
মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি লক্ষ্য করেন, অনেক মুসলমান ইসলামের মূল ধর্মীয় আচার-আচরণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন এবং তাদের মধ্যে সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে তাই তিনি তাবলীগ জামায়াত প্রতিষ্ঠা করেন; যা বহুভাবে দেওবন্দি আন্দোলনের সাথে সাংঘর্ষিক।
আবার এতবড় দলের এই ‘অরাজনৈতিক’ হওয়াটা কিছুটা হলেও ইসলাম ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক। কীভাবে সাংঘর্ষিক? কারণ ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবনব্যবস্থা আমাদের প্রদান করে। এখানে সমাজ, অর্থনীতি থেকে রাজনীতি সবই থাকবে। এখানেই প্যাঁচ লেগে যায় ইসলামিক চিন্তকদের মধ্যে। এবং, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ইসলামিক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের।
অবশ্য এদের নিজেদের মধ্যে কোন্দল নতুন কিছুই নয়। কিন্তু একজন সাধারণ মুসলিম হিসেবে দর্শন ভিত্তিক ইসলাম যেমন জরুরী তেমনি বাস্তব ক্যানভাসেও ইসলামের উপস্থিত হওয়া জরুরী হয়ে পড়ে। ফলে, এতদিন পর্যন্ত একটি ইসলামিক দল আরেকটি ইসলামিক দলকে বাতিল করলেও মুসলিমরা থেকে গেছে ভয়ানক অন্ধকারে। ফলে অনুমান করা যায়, বাংলাদেশীদের মধ্যে একটি দর্শন বিবর্জিত ইসলাম আস্তেধীরে ফুটে উঠছে; যা উচিত নয়।
ইসলামিক দলগুলোর মধ্যে কোন্দল কেন তা বোধহয় কিছুটা বুঝা গেল। কিন্তু এবার তাবলীগ বনাম তাবলীগ সংঘর্ষ! অনেক মুসলমান তো তাবলীগ জামায়াত কে চেনেই না, মানেন-ই না… তার উপর এই সাদ পন্থী বনাম জুবায়ের পন্থী সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনা কারো মাথায় ঢুকছেই না।
তাবলীগ জামায়াত কিন্তু মোটেই ছোটখাটো কোন দল নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এর মত দেশসহ বিশ্বব্যাপী এদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। কিছুটা ‘ইসকন লাইট (ইসলামিক ভার্সন)’ – বুঝার সুবিধার্থে। কারণ এরা পবিত্র আল-কোরআন ও আল-হাদীস সহ নানান রকম বই পড়েন। মোটাদাগে এই বইগুলো একজন মাদ্রাসার ছাত্র হিসেবে পড়ে না দেখা পর্যন্ত কাউকে পড়বার পরামর্শ দেওয়া যায় না, যেতে পারে না।
একজন সাধারণ মুসলিম কোন বিষয় ব্যাখ্যার জন্য পবিত্র আল-কোরআন পড়েন। পবিত্র আল কোরআনে সমস্যার সমাধান না পেলে সহীহ্ হাদিস ও ফিকহের সাহায্য নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারেন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু এই অতিরিক্ত বইগুলো আমাকে ভাবাচ্ছে? এসবের কাজ কি? নিম্নে এই নামগুলো উল্লেখ করছি,
১. ফাযায়েলে আমল - মাওলানা মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভি রচিত এই বইটি তাবলীগ জামাতের অন্যতম প্রধান বই। এতে বিভিন্ন আমলের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে।
২. ফাযায়েলে সাদাকাত - এই বইটিও মাওলানা মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভি রচিত এবং এতে সাদাকাত বা দানের ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে।
৩. মুন্তাখাব হাদিস - এই বইটিতে বিভিন্ন হাদিসের সংকলন রয়েছে যা তাবলীগ জামাতের সদস্যরা তাদের দাওয়াতের কাজে ব্যবহার করেন।
৪. হায়াতুস সাহাবা - মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি রচিত এই বইটিতে সাহাবাদের জীবনী ও তাদের আমল বর্ণনা করা হয়েছে।
৫. রিয়াদুস সালিহিন - ইমাম নববী রচিত এই বইটিতে বিভিন্ন হাদিসের সংকলন রয়েছে যা মুসলিমদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তাবলীগ জামাতের সদস্যরা এই বইগুলোকে মানেন এবং তাদের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে ব্যবহার করেন। তারা এই বইগুলোর শিক্ষাকে তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন এবং অন্যদেরও এই শিক্ষাগুলো অনুসরণ করতে উৎসাহিত করেন।
আপনি শুধু ১ মিনিটের জন্য ভাবুন, যে, এই বইগুলো পবিত্র আল-কোরআন বা আল-হাদীস অনুযায়ী লেখা নয়! অথবা, আমি কীভাবে সহসাই মেনে নেবো যে, এখানে সাহাবায়ে কেরামদের জীবনী বিকৃত করা হয় নাই! আমার না পড়ার অক্ষমতা/মূর্খতা বলুন বা অনিচ্ছা বলুন কিন্তু তাবলীগ জামায়াত কে এসবের পূর্নাঙ্গ ব্যাখ্যা সবাইকে দিতে হবে। আশা করি তারা এটাও দেবেন।
এবার সাদ পন্থী এবং জুবায়ের পন্থীদের নিয়ে কথা বলা যাক। সাদ পন্থীরা তাদের বর্তমান নেতা হিসেবে মানেন মাওলানা সাদ কান্ধলভি কে। অন্যদিকে জুবায়ের পন্থীরা মানেন মাওলানা জুবায়ের কে। সাদ পন্থীরা দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কাজকে তাদের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে মানেন অন্যদিকে জুবায়ের পন্থীরা বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদ কে প্রধান কেন্দ্র হিসেবে মানেন।
এই দুই দলের মধ্যে বিরোধ হচ্ছে মূলত দাওয়াতের ক্ষেত্রে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন নিয়ে। সাদ পন্থীরা মনে করেন দাওয়াতের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম পরিবর্তন করলে দাওয়াতের কাজে আরো কার্যকরী হতে পারে। কিন্তু জুবায়ের পন্থীরা মনে করেন, কোন পরিবর্তন দরকার নাই, আগের ধারা বা নিয়ম অনুযায়ী দাওয়াতের কাজ চলবে। আর যে সংঘর্ষ চলছে তা মূলত এই নেতৃত্ব ও দাওয়াতের কাজে পরিবর্তন নিয়ে।
বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে প্রধান প্রধান ইসলামিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। কারণ মুসলিমদের একমাত্র তীর্থস্থান হলো পবিত্র কাবা শরীফ। কিন্তু ক্রমান্বয়ে এই তীর্থস্থানের গুরুত্ব কমে আসবে যখন সকল মুসলিম বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার তুরাগ নদীর পাশে প্রতি বছর উপস্থিত হবে।
এখানে তাবলীগ জামায়াতের বয়ান হচ্ছে, তারা এটিকে তীর্থস্থান মনে করেন না। এখানে শুধুমাত্র একটি বার্ষিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় তাবলীগ জামায়াতের পক্ষ থেকে। কেন অনুষ্ঠিত হয়? কারণ হচ্ছে, মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষা ও দাওয়াতের কাজ পাশাপাশি ভ্রাতৃত্বের ও আধ্যাত্মিক উন্নতির কাজ এই সমাবেশের মাধ্যমে সংগঠিত হয়।
প্রশ্ন হলো? আমরা সবাই মুসলিম। বাংলাদেশে প্রাকটিসিং মুসলিমদের সংখ্যাও অনেক। কিন্তু বিশ্ব ইজতেমায় কি সবাই অংশগ্রহণ করছেন? না। কেন? কারণ অনেক মুসলিম মনে করেন তাবলীগ জামায়াত যে দাওয়াতের কথা বলছেন, যে শিক্ষার কথা বলছেন বা যে আধ্যাত্মিকতার কথা বলছেন তা কোথাও না কোথাও গ্রহণযোগ্য নয়।
মানুষের মধ্যে ধর্মীয় আধ্যাত্মিক ও নৈতিক চিন্তা-চেতনা মানুষকে নিঃসন্দেহে কম ক্ষতিকারক বানায়। কিন্তু শুধুমাত্র ‘আইডিয়া’ দিয়ে একটি সমাজ/রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব নয়। যে আধ্যাত্মিকতার চর্চা তার আসল ফল পাওয়া যাবে তা রাষ্ট্রে যদি কিছু পরিমাণও কায়েম করা যায়। মানে একশন ছাড়া আইডিয়া কি মানুষ ধুয়ে খাবে?
এরপর ইসলামিক শিক্ষার বাইরের বই বা দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য কে এড়িয়ে চলেন। মানে এই সংগঠনে এসব পড়া নিষিদ্ধ নয় কিন্তু তারা নিজেরা এসব চর্চা করেন না। শুধুমাত্র তাদের সিলেবাস দিয়ে আধুনিক পৃথিবীতে অস্তিত্ব সংকট ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না। এবং, এই ধরণের সিলেকটিভ পাঠদানও তো পবিত্র আল-কোরআনের নির্দেশ অমান্য করা।
একজন মুসলিম কে ফের ইসলামিক দাওয়াত দেওয়া! ও কি করবে? বুঝলাম, টেনেটুনে দুই-একদিন মসজিদে নিয়ে যাওয়া গেল। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া হিসেবে এই প্রক্রিয়া খুবই হাস্যকর।
এরপর অনেক সমালোচিত বিষয় হলো তাবলীগ জামায়াতের ‘চিল্লা’ প্রক্রিয়া। ৪ মাস বা ৪০ দিন বা, ১০ দিন বা, ৩ দিন এই সংগঠনের সদস্যদের দাওয়াতের কাজে বাইরে যেতে হয়। তারা বিভিন্ন জায়গায় যায় এবং সেখানের বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করেন। অধিক পরিচিত এই ৪০ দিনের চিল্লায় একজন ব্যক্তির তার পারিবারিক দায়িত্ব, তার ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকুরী, তার সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও তার রাজনৈতিক দায়িত্বে ব্যাঘাত ও বিঘ্ন সৃষ্টি হতে বাধ্য।
ইসলামের বার্তা অনুযায়ী অনেকাংশে এই চিল্লা ইসলাম ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক। ইসলাম ধর্মে সন্ন্যাসী হওয়াকে সাবস্ক্রাইব করা হয় না। কারণ এই চিল্লায় যাওয়ার প্রক্রিয়া এবং সন্ন্যাসী হওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় একইরকম; যা ইসলাম সমর্থিত নয়।
এরপরেও এই সংগঠন তাদের ভাবমূর্তি ‘শান্তিপূর্ণ’ ইসলামিক সংগঠন হিসেবে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এখন আরো একটি আপদ ওদের নিজেদের মধ্যেই ঢুকে গেছে। সেটা হলো, কোন ব্যক্তির ভাবমূর্তি খারাপ হলে সে কিন্তু এই চিল্লায় যাচ্ছে। তাবলীগ জামায়াত তাকে সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুয়ে সাধু বানিয়ে দিচ্ছে। ফলে আগামীতে উগ্রবাদী যে কোনো ব্যক্তি এই ইমেজের ফায়দা লুটতে যাবে ফর শিওর। বর্তমানেও কিছু অভিযোগ রয়েছে।
সুতরাং আমি এই প্রবন্ধের একটু আগে যেটা বললাম ‘ইসকন লাইট (ইসলামিক ভার্সন)’ তা বুঝতে আশা করি আমাদের অসুবিধে হবার কথা নয়। যদিওবা এদের অর্থায়ন নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা আছে। আমি যেটাকে মিষ্টি করে বলে থাকি ‘ভিক্ষাবৃত্তি’। এবার এর সাথে যুক্ত হয়েছে সংঘর্ষ ও খুনাখুনি। ষোলকলা পূর্ণ। বাকিটা আপনি নির্ধারণ করুন! সত্য আপনার সামনে।
Also Read It On: তাবলীগ জামায়াত: একটি বিতর্কিত ইসলামিক আন্দোলনের বিশ্লেষণ

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


