somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

বিটকয়েনের মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং অনলাইন ট্রেডিং এর লাভজনকতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০২৪ সাল ছিলো ‘ক্রিপ্টো ট্রেডিং’ ও ‘অনলাইন ট্রেডিং’ এর জন্য বিভিন্ন প্যারামিটারে সেরা একটি বছর। বিশেষ করে ‘বিটকয়েন’ এ যারা বিনিয়োগ করেছেন তাদের জন্য। কারো কারো বুঝার সুবিধার্থে, বিটকয়েন হলো এক ধরণের ডিজিটাল মুদ্রা। এটি হলো ডিসেন্ট্রালাইজড ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম যা ব্লকচেইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে।

২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতি বিটকয়েনের বাজারমূল্য ছিলো ৩৫,০০০ ডলার (প্রায়)। মানে হলো, ১ বিটকয়েন = ৩৫,০০০ ডলার। জানুয়ারি মাসে টাকায় এর মূল্য ছিলো ৩৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১০৯ টাকা বিবেচনায়)। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি সম্পর্কে যারা ভালো ধারণা রাখেন তারা বছরের শেষের দিকে এসে প্রায় নিশ্চিত ছিলো বিটকয়েনের মূল্য আরো বাড়তে যাচ্ছে। কিন্তু কত বাড়তে পারে সে ব্যাপারে কারোরই নির্দিষ্ট কোন ধারণা ছিলো বলে আমার মনে হয় না।

২০২৪ এর ২২ ডিসেম্বরে প্রতি বিটকয়েনের মূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ৬ হাজার ১৪০ ডলার (প্রায়)। মানে হলো, ১ বিটকয়েন = ১,০৬,১৪০ ডলার = ১,২৯,০১০৫১ টাকা (আজকের বাজার মূল্য অনুযায়ী ১ কোটি ২৯ লাখ ১ হাজার টাকা প্রায়)। সুতরাং ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে যিনি ১ বিটকয়েন ক্রয় করেছেন তিনি বছর শেষে লাভ করেছেন (যদি ২২ ডিসেম্বরে বিটকয়েন টি বিক্রি করে থাকেন) ৭১ হাজার ১৪০ ডলার (প্রায়)। এবং আজ যদি ডলার থেকে টাকায় কনভার্ট করেন তবে টাকায় এই লাভের অঙ্ক দাঁড়ায় ৯০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বা তারও বেশি (প্রায়)। এখানে মুদ্রাস্ফীতির অঙ্কও যুক্ত করা হয়েছে।

আবার টাকার মান ডলারের বিপরীতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ছিলো প্রতি ১ ডলার = ১০৯ টাকা (প্রায়)। মুদ্রাস্ফীতির কারণে বর্তমান টাকার মান দাঁড়িয়েছে প্রতি ১ ডলার = ১২২ টাকা (প্রায়)। সুতরাং জানুয়ারি মাসে যারা ডলার ক্রয় করেছেন এবং খোলা মার্কেটে স্রেফ রেখে দিয়েছেন প্রায় ৩৫,০০০ ডলার তারা আজ এই ডলার শুধু টাকায় কনভার্ট করে অতিরিক্ত পাচ্ছেন ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা (প্রায়)। এই অতিরিক্ত ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা শুধু পাচ্ছেন মুদ্রাস্ফীতির কারণে।

সুতরাং অনলাইন ট্রেডিং বা ফরেক্স ট্রেডিং এ যারা যুক্ত আছেন তারা ২০২৪ সালের শুরুতে নিশ্চয় জানতেন যে, সামনের সময়গুলো মুদ্রাস্ফীতির সময়। বিশাল ঋণের বোঝা বইছে বাংলাদেশ এবং ঐ ঋণ পূরণ করতে নিতে হবে আরো ঋণ এবং ছাপানো হয়েছে অতিরিক্ত টাকা। এই সমস্তই ছিলো গত বছরজুড়ে ওপেন সিক্রেট। এছাড়াও ব্যাপক দুর্নীতি ও টাকা পাচার হওয়ার খবর ছিলো প্রতি খবরের কাগজের প্রথম পাতায়। এজন্য খুব বেশি চাক্ষুষ হতে হয় না। এই দুই ট্রেডিং ই ছিলো এক ধরণের শিওর শট্‌। হোক বিটকয়েন কিংবা ডলার, খোদাই কর্মসূচি মানে মাইনিং করেছেন অনেকেই।

এখন বিটকয়েন মাইনিং করা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ এবং আইনগত অপরাধ। এমনকি যেকোনো মুদ্রা মাইনিং করা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশে এরকম হাজারো অকেজো আইন করা হয়েছে যার বাস্তব প্রতিফলন বলতে কিচ্ছু নাই। আইনের শাসন তো অনেক দূরের কথা এখানে হয় ‘আইনের শোষণ’। শুধু ভ্যাট ও ট্যাক্স সময়মত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ডলার সংকটে জর্জরিত দেশ।

সুতরাং এহেন পরিস্থিতিতে আমরা যদি ধরে নিই বা ভেবে নিই জনাব মি. ক মোট ৫০ হাজার ডলার মাইনিং করেছেন ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে। তখন টাকার মান ছিলো ১ ডলার = ১০৯ টাকা। মানে মি. ক এই ৫০ হাজার ডলার ক্রয় করেছেন ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে। এখন আজ বা ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি এই ডলার বিক্রয় করতে চান বা টাকায় কনভার্ট করতে চান। এতে করে তাকে একাধিক অনলাইন প্লাটফর্ম নূন্যতম প্রতি ডলারে দেবে ১২২ টাকা করে। মানে শুধুমাত্র ডলার মাইনিং করে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে প্রতি ডলারে তিনি লাভ করছেন ১৩ টাকা!

তাহলে ৫০ হাজার ডলারে তিনি লাভ করেছেন গত এক বছরে বিনাশ্রমে ৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা! ডলারের মান যেহেতু খুব সহজে নিচে নামে না এবং শক্তিশালী মুদ্রা সুতরাং এই ট্রেড টাকাওয়ালাদের জন্য খুবই সিকিউর এবং সোজা। মানে তথাকথিত ডলার স্ট্যান্ডার্ড মেনে না চলা সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতন যদি ২৫ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকাও হয় তাহলে মি. ক এর বিপরীতে একজন সরকারি চাকুরীরত ব্যক্তিকে এই টাকা উপার্জনে শ্রম দিতে হবে যথাক্রমে ২৬ মাস ও ১৯ মাস (প্রায়)।

এখন জনাব মি. ক যদি ২০২৪ সালে একটি বিটকয়েন মাইনিং করে থাকেন তাহলে গল্পটা কেমন হতে পারে ভাবুন তো?

মানে এক বিটকয়েন যিনি গত বছরের শুরুতে মাইনিং করেছেন তার বিনাশ্রমে বছর শেষে লাভের বিপরীতে একজন চাকুরীজীবি কে শ্রম দিতে হবে ৩০.৩ বছর (২৫ হাজার টাকা বেতন স্কেল বিবেচনায়) এবং ২১.৬ বছর (৩৫ হাজার টাকা বেতন স্কেল বিবেচনায়)। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, ভ্যাট বাড়ছে, ট্যাক্স বাড়ছে কিন্তু বেতন কিন্তু বাড়ছে না। আমাদের খরচ বাড়ছে কিন্তু বেতন ঠিক আগের জায়গাতেই টাঙিয়ে রাখা হয়েছে।

কিছু কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে ডলার স্ট্যান্ডার্ডে বেতন দিলেও সকল সরকারি চাকুরী সহ বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বেতন দেন টাকায় এবং ডলারের মান বিবেচনায় নেন না। টাকায় বেতন দেওয়া পাপ নয় কিন্তু সেটার মান কোন মুদ্রার বিপরীতে? যদি ডলারের বিপরীতে এই বেতনগুলো দেওয়া যায় তবেই একজন চাকুরীজীবি সঠিক বেতন পাবেন বলে আমি মনে করি বা করতে চাই।

আজ এই পর্যন্তই। দ্রুত হিসাব-নিকাশ করতে গিয়ে কোথাও কোনো ভুল হলে সেটা দৃষ্টিগোচর করার জন্য বিশেষ অনুরোধ করছি এবং একইসাথে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ড নিয়ন্ত্রণ পূর্বক সবাইকে নায্য পাওনা দেওয়া খুবই জরুরী।

Also Read It On: ব্যবসা ও বাণিজ্য ২০২৪ সালে বিটকয়েন ও অনলাইন ট্রেডিং: মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিয়োগের বিশ্লেষণ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:২৪
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×