somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মানব চরিত্রের প্রধান পাঁচ রঙ: ইমরান, আলী, মায়া, নূর, এবং রাশেদ

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দেখা যায় তো জীবন যদি একটি নাটক হয় তবে আমরা সবাই তার একটি নাট্যমঞ্চে অভিনয় করছি। আমাদের চরিত্রের রঙ তৈরি হয় পাঁচটি মূল বৈশিষ্ট্য দিয়ে, যাকে মনোবিজ্ঞানে বিগ ফাইভ পার্সোনালিটি ট্রেইটস (Big Five Personality Traits) বলা হয়।

এই বৈশিষ্ট্যগুলো হলো: (ক) উন্মুক্ততা (Openness), (খ) বিবেচনাশীলতা (Conscientiousness), (গ) বহির্মুখিতা (Extraversion), (ঘ) সম্মতি (Agreeableness), এবং (ঙ) নিউরোটিসিজম (Neuroticism)।

এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্য আমাদের চিন্তা, আচরণ, আর অনুভূতির বিভিন্ন দিক নির্ধারণ করে। আজ আমরা একটি কাল্পনিক নাটকের মঞ্চে পা রাখব এই পুরো বিষয়টি বুঝবার জন্য। যেখানে পাঁচজন অভিনেতা—ইমরান, আলী, মায়া, নূর, এবং রাশেদ—তাদের জীবনের গল্পের মাধ্যমে এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে জীবন্ত করে তুলবে। তাদের গল্পে হাসি আছে, ভাবনা আছে, আর আছে ইতিহাস ও সাহিত্যের কিছু বিখ্যাত চরিত্রের ছায়া।

মঞ্চে আলো জ্বলে উঠেছে। এটি একটি উৎসবের রাত। গ্রামের মাঠে লোকজন জড়ো হয়েছে। পাঁচজন অভিনেতা তাদের গল্প বলতে প্রস্তুত। প্রত্যেকের গল্পে লুকিয়ে আছে একেকটি বৈশিষ্ট্যের মজার ও চিন্তার দিক।

(ক) উন্মুক্ততা: ইমরান মঞ্চে এসে তার রঙিন তুলি আর ক্যানভাস নিয়ে দাঁড়ায়। হেসে বলে, “আমার জীবন এক দুঃসাহসিক গল্প। আমি সবসময় নতুন ধারণা আর অভিজ্ঞতার পিছনে ছুটি।” গত উৎসবে সে একটি আজব ছবি এঁকেছিল—আকাশে উড়ন্ত একটি হরিণ, যার পিঠে রংধনু! সবাই তাকিয়ে ছিল মুগ্ধ হয়ে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, প্রদর্শনীর দিন সে ছবিটি আনতে ভুলে গিয়েছিল। কেন? কারণ সে জঙ্গলে একটি অদ্ভুত পাখির গান শুনে হারিয়ে গিয়েছিল। পথে একটা গাছের অদ্ভুত শেকড় দেখে সে ভাবতে শুরু করে, “এটার গল্প কী হতে পারে?” ফিরে এসে দেখে উৎসব শেষ!

একবার ইমরান গ্রামের মেলায় গিয়েছিল। সেখানে একজন বুড়ো লোকের হাতে একটি পুরোনো বাঁশি দেখে সে গল্প বানিয়ে ফেলল—এই বাঁশি নাকি এক রাজপুত্রের, যে বনে হারিয়ে গিয়েছিল। সে বুড়োকে গল্প শোনাতে শুরু করল, আর বুড়ো অবাক হয়ে বলল, “আমি তো এটা গতকাল বাজার থেকে কিনেছি!”

উন্মুক্ততা হলো নতুনত্বের প্রতি ভালোবাসা, সৃজনশীলতা, আর কল্পনার জগতে বিচরণ। ইমরানের মতো মানুষ সবসময় অজানার পিছনে ছোটে, কিন্তু বাস্তবের দায়িত্ব ভুলে যেতে পারে।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি উড়ন্ত যন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন, অসাধারণ ছবি এঁকেছিলেন। কিন্তু তার অনেক কাজ অসমাপ্ত থেকে গিয়েছিল, কারণ তার মন সবসময় নতুন কিছুর দিকে ছুটত।

(খ) বিবেচনাশীলতা: আলী মঞ্চে এসে তার নোটবুক খুলে বলে, “আমি পরিকল্পনা ছাড়া এক পা-ও চলি না। এই উৎসব আমি ঘড়ির কাঁটায় সাজিয়েছি।” গতবার সে একটি নিখুঁত সময়সূচী বানিয়েছিল। সব ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু একজন সহকারী দশ মিনিট দেরি করায় আলী তাকে এমন বকেছিল যে লোকটি কেঁদে ফেলেছিল।

একবার আলী বাড়িতে মেহমানদের জন্য খাবারের আয়োজন করেছিল। সে টেবিলে কাঁটা-চামচ ঠিকঠাক সাজিয়ে রেখেছিল। কিন্তু তার ছোট ভাই হঠাৎ চামচ দিয়ে ডাল খেতে শুরু করায় আলী চিৎকার করে বলল, “এটা কী অসভ্যতা!” পরে সে ভাইকে এক ঘণ্টা বোঝাল কীভাবে খাবার খেতে হয়।

বিবেচনাশীলতা হলো শৃঙ্খলা, দায়িত্বশীলতা, আর পরিকল্পনা। আলীর মতো মানুষ জীবনকে সিস্টেমে চালায়, কিন্তু অতিরিক্ত কঠোরতা সম্পর্কে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলন ছিল শৃঙ্খলার প্রতীক। তবে তার কঠোর নিয়ম অনুসারীদের জন্য কঠিন হয়ে উঠত।

(গ) বহির্মুখিতা: মায়া মঞ্চে লাফিয়ে উঠে বলে, “আমি মানুষের মাঝে থাকতে ভালোবাসি। উৎসব আমার কাছে আনন্দের সময়!” গত উৎসবে সে সবাইকে নাচতে বাধ্য করেছিল—এমনকি লাজুক লোকজনও। কিন্তু একবার প্রস্তুতির সময় সে হঠাৎ মেলায় চলে গিয়েছিল, শুধু নতুন বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে।

একবার মায়া বাজারে গিয়েছিল। সেখানে একজন ফলওয়ালার সঙ্গে গল্প শুরু করে দিল। ফলওয়ালা বলল, “আমার ছেলে গান গায়।” মায়া তৎক্ষণাত তাকে নিয়ে গ্রামের একটি গানের আসরে হাজির। ফল কিনতে যাওয়ার কথা ভুলে গেল!

বহির্মুখিতা হলো সামাজিকতা আর উচ্ছ্বাস। মায়ার মতো মানুষ ভিড়ে থাকতে পছন্দ করে, কিন্তু দায়িত্ব থেকে দূরে সরে যেতে পারে।

ওয়াল্ট ডিজনি মানুষের সঙ্গে মিশে সৃজনশীলতা খুঁজতেন, কিন্তু এই ব্যস্ততা তার ব্যবসায় ঝুঁকি এনেছিল।

(ঘ) সম্মতি: নূর মঞ্চে এসে বলে, “আমি সবাইকে সাহায্য করতে ভালোবাসি।” গত উৎসবে সে খাবার বিতরণ করেছে, বাচ্চাদের দেখেছে। একবার এক বৃদ্ধ অসুস্থ হলে সে উৎসব ছেড়ে তার পাশে ছিল। কিন্তু নিজের বিশ্রাম ভুলে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।

একবার নূর প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়েছিল। তারা ঝগড়া করছিল। নূর তাদের শান্ত করে এত গল্প শোনাল যে তারা হাসতে হাসতে একসঙ্গে খেতে বসল। কিন্তু নিজে ফিরে এসে দেখল তার চুলা জ্বলছে, কারণ রান্না অর্ধেক রেখে গিয়েছিল।

সম্মতি হলো সহানুভূতি আর সহযোগিতা। নূরের মতো মানুষ সম্পর্কে দারুণ, কিন্তু নিজেকে অবহেলা করতে পারে।

মাদার তেরেসা সারা জীবন সেবা করেছেন, কিন্তু তার স্বাস্থ্যের উপর চাপ পড়েছিল।

(ঙ) নিউরোটিসিজম: রাশেদ মঞ্চে এসে বলে, “আমার মন সবসময় উদ্বেগে থাকে।” গত উৎসবে সে একটি কবিতা লিখেছিল, কিন্তু পড়তে গিয়ে এত উদ্বিগ্ন হয়েছিল যে গলা আটকে গিয়েছিল। তবু তার কবিতায় গভীরতা ছিল।

একবার রাশেদ বন্ধুদের সঙ্গে নদীতে গিয়েছিল। সে ভাবতে শুরু করল, “যদি নৌকা ডুবে যায়?” সবাই হাসছিল, আর সে পড়ে গেল নদীতে—শুধু ভয়ে পা হড়কে!

নিউরোটিসিজম হলো মানসিক অস্থিরতা। রাশেদের মতো মানুষ চাপে পড়ে, কিন্তু এটাই তাদের সৃজনশীলতা বাড়ায়।

ভিনসেন্ট ভ্যান গগ এর মানসিক সংগ্রাম তার শিল্পে গভীরতা এনেছিল।

মঞ্চের আলো কমে এসেছে। পাঁচ অভিনেতা দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বললো, “আমাদের জীবন এই পাঁচ বৈশিষ্ট্যের মিশেলে তৈরি। কিন্তু প্রশ্ন থাকে—আমরা কি শুধু এই পাঁচটির সমষ্টি, নাকি আরও অনেক কিছু?”

ছবি: Grok 3
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১২:৪৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×