somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি. বিকেল
আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

জীবনের জটিল সমীকরণে প্রতিশোধ বা সমঝোতা-ই শেষ কথা হতে পারে না!

০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ব্যক্তি আক্রমণ কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে? কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে নিশ্চয় ব্যক্তি আক্রমণ করা উচিত। ধরুন, আপনি একটি ব্যাংকে ১ লাখ টাকা জমা রেখেছেন। একমাস পরে গিয়ে দেখলেন ঐ ব্যাংক আপনার হিসাব নং ভুলে গেছে। তারা আপনাকে চেনেই না! এক্ষেত্রে প্রথম ধাপে আপনি কি করবেন? সাধারণত প্রথম ধাপে আপনি ঐ ব্যাংকের ম্যানেজারের নিকট যাবেন। আর বিনয়ের সাথে জানতে চাইবেন, “আপনাদের কোথাও ক্রুটি হচ্ছে! অনুগ্রহ করে পুনরায় একটু চেক করবেন?”

এখানে আপনার ১ লাখ টাকা বড় সংখ্যা না হলেও ঐ ব্যাংকের ম্যানেজার তার ব্যাংকের সুনাম নিয়ে চিন্তায় পড়ে যেতে পারেন। এমনকি এই হিসাব তিনি আপনাকে কোন সুবিধাজনক কম সুদে ঋণ দিয়ে হোক বা ব্যাংকের বাইরের পরিবেশে কথা বলার মাধ্যমেও আপস করতে পারেন। কারণ তার দায়বদ্ধতা আছে, থাকাও উচিত। তাই সব জায়গায় আমরা দায়িত্বহীন বা ‘Unchecked’ থেকে যেতে পারি না। আমাদের কিছু দায়-দায়িত্বও আছে এবং সেসব যথাযথভাবে পালন করাও জরুরী। দায়িত্ব জিনিসটাই তো বেশ ভারি এবং গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু আমি দেখেছি যে, সব জায়গার দায়-দায়িত্বের বিষয়টির পরিষ্কার সংজ্ঞা বা কাঠামো নাই। কারো সন্তান হলে পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব, কারো জ্যেষ্ঠ হলে কনিষ্ঠের প্রতি দায়িত্ব, কারো সঙ্গী হলে সঙ্গীনির প্রতি দায়িত্ব, বন্ধু হলে বন্ধুত্বের বন্ধনের প্রতি দায়িত্ব... এসব দায়-দায়িত্বের নির্দিষ্ট সীমারেখা নাই; অন্তত আমার সেটাই মনে হয়। এখানেও বিনিময় হয়, বিনিয়োগ করতে হয়, সম্পর্কের খেয়াল রাখতে হয় কিন্তু কোন পর্যন্ত এসব চলমান থাকবে তা নির্দিষ্ট কাঠামোতে ফেলা সম্ভব নয়।

সাধারণত আমরা এসব জায়গায় যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের ভূমিকা প্রকাশ করে থাকি। আর দায়িত্বের এই ভূমিকা ধ্রুব নয়, একেকজনের জন্য একেকরকম।

এমন অনেক সন্তান আছে যারা তাদের পিতামাতার খুব খেয়াল রাখেন, খুব যত্ন রাখেন। তাদের সময় দেন, তাদেরকে তাদের মত করে বুঝতে চেষ্টা করেন। আবার এমন অনেক সন্তান আছে যাদেরকে লালনপালন করতে গিয়ে পিতামাতা তাদের পুরো জীবনটাই লাগিয়ে দেন। অনেকক্ষেত্রে নিঃস্ব হয়ে যান। এখানে কেউ সফলও নন, এখানে কেউ ব্যর্থও নন। এই কাজগুলো বহুলাংশে ‘ধন্যবাদহীন’ বিষয়। এই দায়-দায়িত্বের নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই আবার একইসাথে বিশেষ প্রত্যাশাও আমি লক্ষ্য করি নাই।

উদাহরণস্বরূপ: একদিন সকালে উঠে আপনি দেখলেন আপনার বাবার গায়ে অনেক জ্বর। টাইফয়েড জ্বর। বৃদ্ধ বাবাকে ওভাবে ফেলে রেখেই নিজ কর্মস্থলে যেতে পারবেন? ধরুন ঐ দিন আপনার গুরুত্বপূর্ণ একটি ‘প্রেজেন্টেশন’ ছিলো! তবুও? আপনি কি পারবেন যেতে? যদি উত্তর ‘না’ হয়, তাহলে আমি এসব আপনাকে নিয়েই লিখছি।

আবার কারো জন্য বা কোন বিষয়ে রাতের পর রাত, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর অজানা প্রত্যাশায় দিনগুলো কেটে গেছে। অনিদ্রায় যাপিত হওয়া রাতগুলোর কথা ভুলে যাবার নয়। নিজেকে ছোট মনে হয়েছে, নিজেকে কত অত্যাচার করা হয়ে গেছে; নিঃশব্দে।

কারো ডায়েরির পাতায় আবার কারো ফেসবুকের টাইমলাইনে ঝাপসা কিছু লেখালেখিতে সময়গুলো উড়ে গেছে। কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ কখনোই খুব জোরালো ভাবে তো নয়-ই, সত্যি বলতে ওটা ঠিক প্রকাশ-ই করা হয় নাই।

বিষয়টি হলো, কিছু ব্যক্তির বোধশক্তি অন্তত ঐ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে যে পর্যন্ত পৌঁছালে একজন ব্যক্তি বুঝতে পারেন যে, আসলে অভিযোগ করাটাই শেষ কথা নয়। অথবা, সব জায়গায় আমার অভিমান এবং আমার প্রতি ঘটে চলা অন্যায়ের দায়-দায়িত্ব দিয়ে দেবার বিষয়টি এখানে মূখ্য নয়; বরং উহ্য। হতে পারে কিছু বিষয় এবং কিছু মানুষের কর্মকান্ড আমাকে যথেষ্ট ক্ষতি করেছে কিন্তু সেটার দায়-দায়িত্ব কাউকে দিয়ে অভিযোগ করলেই নিষ্পত্তি ঘটে যায় না।

এখানেই প্রশ্ন আসে, বদলা নেবার অথবা মীমাংসায় পৌঁছানোর মধ্যে কোনটা জরুরী?

যদি বদলা নিতে পারলেই জীবনের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তাহলে নিশ্চয় বদলা নেওয়া উচিত। কিন্তু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে আপনি দেখতে পাবেন, সব জায়গায় ঠিক বদলা বা প্রতিশোধপরায়ণা হয়ে ওঠা নামক অপশন-ই থাকে না। চাইলেও কি সব জায়গায় বদলা নেওয়া যায়? না, যায় না।

কিন্তু বদলা নিতে না পারার সাথে মীমাংসা করার আবার সরাসরি সম্পর্ক নাই। যখন কোন বিষয়ে বদলা নিতে না পারছি তখন ঐ বিষয়ে আমাকে মীমাংসায় পৌঁছাতে হবে তা কিন্তু জরুরী নয়।

এখানে দুটো শব্দ খুব গুরুত্বপূর্ণ, ১. প্রসেস (প্রক্রিয়া) এবং ২. আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বোধশক্তি)। অনায্য প্রক্রিয়া এবং বোধশক্তিহীন মানুষ/বিষয় এর সাথে পেরে ওঠা মুশকিল। প্রসেস যেখানে পানিশমেন্ট সেখানে সেটা রয়ে-সয়ে যাওয়াটাই ভালো হতে পারে। আবার ঐ একই বিষয় ও ব্যক্তিকে নানান দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার চেষ্টা করা যেতে পারে। সাধারণত জাজমেন্টাল হওয়া তূলনামূলক বেশি সহজ।

কোনকিছু দেখুন আর তারপর সেটা ভালো/মন্দ, ন্যায়/অন্যায়ের কাঠগড়ায় বিচার করুন। মানে এসবই বর্তমান বাজারে চলছে। কিন্তু ঠাহর হয়ে কারো জুতা নিজের পায়ে পরে হেঁটে দেখার যে মানসিক কষ্ট তা সবার থেকে প্রত্যাশা না করাটাই ভালো।

মানুষ নিজেকে সবার কাছে ব্যাখ্যা করতে চায়। কিন্তু যখন সে বুঝতে পারে অধিকাংশ মানুষ তার ব্যাখ্যা বুঝছেই না, আর যারাও বা বুঝতেছে তারা ভুল বুঝতেছে। তখন মানুষ চুপ থাকাটা কে-ই বেশি সুবিধার মনে করতে পারে। মানে রোজ রোজ কারো ভুল ব্যাখ্যার শিকার হবার চেয়ে চুপ থাকা ঢের গুণে ভালো। এছাড়াও আপনি যা চোখে দেখছেন এবং যা বাস্তবতা এই দুটোর মধ্যে তফাৎ করতে জানাটাও একধরণের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। কারণ চোখে যা দেখছেন তার সবটুকু কিন্তু সত্য নয়।

শেষের দিকে, আমার জীবন থেকে একটি অভিজ্ঞতার কথা লিখে শেষ করছি। ব্লগিং জগতে আমি আমার টিমের একজনের সাথে পুরোপুরি সম্পর্ক বাদ দিই। এজন্য নয় যে, ঐ মানুষটি খারাপ মানুষ। এজন্যও নয় যে, ঐ মানুষটি আমাকে শ্রদ্ধা করে না। এজন্যও নয় যে, ঐ মানুষটি আমাকে সাহায্য করে নাই। ঐ মানুষটি একাধারে আমাকে সাহায্য করেছে, আমার সিদ্ধান্ত কে শ্রদ্ধা জানিয়েছে, এবং আমার পরিচিত হাতেগোনা কিছু মানুষের মধ্যে অনেক ভালো একজন মানুষ। আমি তার সাহায্যের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো; আজীবন।

কিন্তু যখন প্রফিট হচ্ছিলো না, তখন সে আমাকে কিছু সুন্দর সুন্দর পরামর্শ দিত। ওসব পরামর্শ শুনতেও ভালো লাগতো। ও বলতো, “এসব চালিয়ে যেতে হলে আগে ভালো মানের চাকুরী লাগবে, কারণ এটা দাঁড় করাতে আরো অনেক টাকার দরকার!” আমি আজও বিশ্বাস করি, ও যা বলেছিলো তা হয়তো ওর দিক থেকে ঠিকই বলেছিলো। আমি সেদিন খুব মনযোগ দিয়ে ওর কথাগুলো শুনলাম, এবং মেসে ফিরে এসে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফের লেখালেখি শুরু করলাম। কারণ সে চাইছে-না এই অবান্তর জগতে (অন্তত তার মতে) থাকতে।

আপনারা নিশ্চয় ‘বার্ফি (Barfi)’ সিনেমা দেখে থাকবেন। আমাদের এই গল্প অবশ্য ঐ মিষ্টি প্রেমের সিনেমার মত নয়। এক দৃশ্যে দেখা যায়, রণবীর কাপুর প্রিয়াঙ্কার হাত ধরে স্ট্রিট-লাইটের পাশে দাঁড়াতে; যা একসময় ভেঙ্গে পড়ে। তারপর রণবীর কাপুর অনুধাবন করেন এলিনা এই সময় ভয় পেয়ে হাত ছেড়ে দিত! কিন্তু প্রিয়াঙ্কা নয়।

আমাদের গল্প অবিশ্বাস ও অনাস্থার গল্প ছিলো; বদলা নেবার গল্প নয়। আর অবিশ্বাস ও অনাস্থার উপর কোন অন্তত একটি সৃজনশীল আইডিয়া দাঁড় করানো সম্ভব নয়। আর এসব চোখে দেখা যায় না।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৫৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×